1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে চায় রোহিঙ্গারা - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা সোনার দাম আরও কমল রাজধানীতে পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বিএনপির জায়েদ খানের এফডিসিতে ফেরা হবে কিনা, জানালেন ডিপজল কক্সবাজার জেলায় কত রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট সিনেমা হলে দেওয়া হচ্ছে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি বিরিয়ানি ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি ১৫ বছর পর নতুন গানে জেনস সুমন যশোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে চায় রোহিঙ্গারা

  • Update Time : শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭
  • ৩০৯ Time View

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। দুই দেশের মধ্যকার ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণাকে ভিত্তি ধরেই এগোতে চায় দেশটি। উত্তর আরাকানে রোহিঙ্গা জাতিগত নির্র্মূল অভিযানে সৃষ্ট গুমোট পরিবেশে এ যেন একদণ্ড শীতল হাওয়া। কিন্তু মিয়ানমারের এ প্রস্তাবকে দেশটির কৌশল হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, বন্ধুত্ব ও উভয় দেশের  স্বার্থের দোহাই দিয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব দিলেও ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনা দূরের কথা, বন্ধুত্বের লেশমাত্র নেই মিয়ানমারের আচরণে। ‘৯২ ঘোষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ কাগজপত্রসহ ফিরতে পারবে রাখাইনে। বাস্তবতা হচ্ছে, জাতিগত পরিচয় হারানোর কারণে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা যেমন ‘বাঙালি’ লেখা কার্ড নেয়নি, তেমনি সেনা অভিযানের সময় ল্যাঞ্চার মেরে বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ায় সে কার্ড আনতে পারেননি। ফলে বৈধ কাগজ তারা পাবে কোথায়? তার ওপর দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গারা আরাকানে বসবাস করছে নাগরিকত্বসহ সবধরনের মৌলিক অধিকারহীন। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সঙ্গে তাদের আগুনে ছুড়ে ফেলার মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকবে না। কারণ, নাগরিকত্ব ছাড়া ফিরে গেলে রোহিঙ্গাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না মগ জনগোষ্ঠী আর দেশটির সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গারা বলছেন, বাংলাদেশ বাদী আর মিয়ানমার বিবাদীর ভূমিকা থাকলেই এ সংকটের সমাধান হবে না। এখানে ভিকটিম হিসেবে রোহিঙ্গা ও অভিভাবক হিসেবে জাতিসংঘের প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের মতামত ছাড়া মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা দিলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। মিয়ানমার যেমন কৌশল করবে, তেমনি রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হবে না আতংক ও আস্থাহীনতার কারণে। তাই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শিক্ষিত ও গণ্যমান্য রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নানা বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি মতামত সংগ্রহ ও চুক্তিজনিত পদক্ষেপে প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। বালুখালী, থাইংখালী, কুতুপালং নতুন ও পুরোনো ক্যাম্প এবং ঘুমধুম জিরোপয়েন্ট অস্থায়ী ক্যাম্প ঘুরে আলাপের সময় রোহিঙ্গারা এমন মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণের কার্ডের জন্য যতটা হা-পিত্যেশ, নিবন্ধনের জন্য ততটাই অনীহা। কুতুপালং, বালুখালী, বাঘঘোনা, হাকিমপাড়া, থাইংখালী, ঘুমধুম ও তুমব্রু ক্যাম্প ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার একাধিক নারী-পুরুষের সঙ্গে আলাপে ওঠে এসেছে নিবন্ধনে অনীহার নেপথ্য কারণ। জাতিগত পরিচয় সংকট ও আস্থাহীনতার কারণেই নিবন্ধিত হচ্ছে না তারা। রোহিঙ্গারা বলছেন, আমাদের জাতিগত পরিচয় ‘বাঙালি’ লেখায় আমরা মিয়ানমারের কার্ড নিইনি, কিন্তু বাংলাদেশের নিবন্ধনে লেখা হচ্ছে ‘মিয়ানমার’। নিবন্ধন কার্ডে আমাদের পরিচয় ‘রোহিঙ্গা-মিয়ানমার’ লিখলে দেখবেন দুই দিনেই সবাই নিবন্ধিত হবে।
মংডুর ডোয়েলতলী ইউনিয়নের সাবেক উক্কাডা (চেয়ারম্যান) হাসান বসরি। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান ও স্থানীয় রাখাইনদের নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে চলে এসেছেন হাসান বসরি। ডোয়েলতলীর সাবেক এ উক্কাডা এখন থাইংখালী হাকিমপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা। নাফ নদের ওপারে বিশাল বাড়ি ছিল তার এপারে এখন পলিথিনের ছোট্ট ঝুপড়ির বাসিন্দা। হাসান বসরি এমন একজন লোক যিনি নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন পাশের গ্রাম তুলাতলীর গণহত্যা। তিনি বলেন, আরাকানে জাতিগত গণহত্যা হঠাৎ করে হয়নি। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত অঙ্ক। আমাদের জাতিগত পরিচয়, শিক্ষা ও চাকরির, স্বাধীন চলাফেরার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারপর পাড়ায় পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ও মিটিংয়ের নামে গ্রামের এক জায়গায় ডেকে নিয়ে একসঙ্গে গ্রেপ্তার এবং সর্বশেষ বিদ্রোহীদের হামলার কথা বলে নৃশংস নির্মূল করেছে। হাসান বসরি বলেন, রোহিঙ্গারা মুসলিম কেন; তাদের গায়ের চামড়া কালো কেন- মগদের কাছে এর সবই অপরাধ। আমরা মিয়ানমারে জন্ম নিয়েছি, সেখানেই আমাদের সবকিছু। নিরাপদে অবস্থানের সুযোগ পেলে জন্মভূমিতেই ফিরে যেতে চাই। কিন্তু তার জন্য কিছু অধিকার দরকার। সারাবিশ্বের চাপে মিয়ানমার একটু নরম সুরে কথা বললেও তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কোনো পক্ষকে যুক্ত করতে চাইছে না। এটা মিয়ানমারের কৌশল। প্রত্যাবাসন চুক্তি দ্বিপক্ষীয় হলে আমাদের সেখানে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে নির্যাতন বা কিছুদিন পর ফের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই প্রত্যাবাসন চুক্তি হতে হবে বহুপক্ষীয়।
হাকিমপাড়া ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা মাস্টার নূর হোসেন। ডোয়েলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। ১৯৮৭ সালে সরকারি চাকরি পাওয়া রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ ব্যাচের একজন তিনি। নূর হোসেন বলেন, ২০১২ সালের আগে পর্যন্ত অন্তত সরকারি কাজে নিযুক্ত রোহিঙ্গারা অনুমতিপত্র নিয়ে আকিয়াব পর্যন্ত যেতে পারতেন। পরে সে সীমা বেঁধে দেয়া হয় মংডু-বুচিদং পর্যন্ত। আমি একজন স্কুলশিক্ষক কিন্তু স্কুলে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সরকারি স্কুল হয়েও পদে পদে যেভাবে অর্থ আদায় করা হয় তাতে রোহিঙ্গা সন্তানরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। কেউ সেটা পারলেও ক্লাস টেনের বেশি তার পড়ার সুযোগ নেই। এ বাস্তবতা নিয়ে সেখানে শিক্ষকতা করছিলাম। তিনি বলেন, ১৯৮৭ পর্যন্ত আমাদের পরিচয়পত্রে জাতি হিসেবে পরিষ্কার লেখা ছিল ‘রোহিঙ্গা’। ১৯৮৯ সালে আমাদের নতুন ফরম পূরণ করিয়ে জাতি হিসেবে ‘মুসলিম’ লেখা হলেও ১৯৯৫ সাল থেকে লেখা শুরু হয় ‘বাঙালি’। থেইন সেইনের আমলে সব কার্ড কেড়ে নেয়া হয়। তারপর এনভিসির (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) কথা বলে যে ফরম পূরণ করা হয় সেগুলো বার্মিজ ভাষায় লেখা থাকলেও পূরণ করতে বলা হয় বাংলায়। আমরা সেটা অস্বীকার করায় নতুন কোনো কার্ড পাইনি। ২০১৫ সালে ফের এনভিসির কথা বলে কিছু রোহিঙ্গাকে জোর করে বাঙালি লেখা কার্ড ধরিয়ে দেয়া হয়। এ কার্ড নিতে অস্বীকার করায় তারা আমাদের নির্মূলের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে আমাদের মিয়ানমারে পাঠানোর চেয়ে হত্যা করাই শ্রেয় হবে। নাগরিকত্ব, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অবাধ চলাফেরা ও নিজ নিজ ধর্মপালনের সুযোগ ছাড়া মিয়ানমার পাঠানো আর সাগরে নৌকা ডুবিয়ে দেয়া সমান হবে। আমাদের ন্যূনতম স্বার্থরক্ষার জন্য হলেও সে চুক্তিতে জাতিসংঘ ও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব জরুরি।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিলেন মোহাম্মদ জাফর। তখন থেকেই কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা তিনি। মংডুর খাদিরবিল এলাকার বনেদি পরিবারের সন্তান জাফরের জীবনের ২৫টি বসন্ত কেটেছে ক্যাম্পের ছোট্ট পরিসরে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং তাদের কেন্দ্র করে নানা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ যেমন করেছেন তেমনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন একজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির নিরলস কর্মীর ভূমিকায়। জাফরের পরিবার বাংলাদেশে ক্যাম্পের বাসিন্দা হলেও এখন পর্যন্ত বুচিদং-রাচিদং সীমান্তে নিজগ্রামে আটকে আছে তার নানাবাড়ির লোকজন। তার মামা হাজি ওসমান চারবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন খাদিরবিল ইউনিয়নের। তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক সমাজে সন্তান সন্ততির সংখ্যা বেশি হলেও রোহিঙ্গারা খাদ্যে স্বাবলম্বী ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা আবদুর রাজ্জাকের পর থেকে নানা সময়ে বড় বড় নেতাদের হত্যা ও গুম করা হয়েছে। একের পর এক অধিকার কেড়ে নিয়ে আমাদের পরিণত করা হয়েছে গিনিপিগে। একটি অদূরদর্শী জাতি হিসেবে রোহিঙ্গারা চিন্তাই করেনি তাদের ভবিষ্যৎ কি? যার ফলশ্রুতিতে আজকের এ জাতিগত নির্মূল-নৃশংসতা। জাফর বলেন, বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে তাই এ দেশটির নিরাপত্তা ও ভালোমন্দের বিষয়টি রোহিঙ্গাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কিন্তু এটা এতো পিছিয়ে পড়া জাতি যে, তারা ত্রাণের টোকেনের জন্য দৌড়াবে কিন্তু সহজে নিবন্ধিত হবে না। আর তাদের মধ্যে নানা আতঙ্ক ছড়িয়ে নিবন্ধন থেকে দূরে রাখতে ইতিমধ্যে কাজ করছে নানা গ্রুপ। তাই সরকারের উচিত হচ্ছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনা, অবৈধভাবে বিয়ে ও চাকরির নামে পাচার এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো। রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ও এনজিও’র বেশে দেশে-বিদেশে কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী রয়েছে। বাংলাদেশকে তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিতে হবে। জাফর বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি বহুজাতিক সংকট। এটার সমাধান বা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে গেলে বহুপক্ষীয় চুক্তির বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বাদী ও মিয়ানমার বিবাদী হয়ে চুক্তি করলে তা ফলপ্রসূ হবে না। রোহিঙ্গা যেমন ফেরার আস্থা পাবে না তেমনি মিয়ানমারও নানা কৌশলে সে চুক্তির সর্বোচ্চ সুযোগ আদায় করবে। তাই এখানে ভিকটিম হিসেবে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি এবং অভিভাবক হিসেবে জাতিসংঘকে যুক্ত করতে হবে। রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ছাড়া এ সংকট সমাধানের চুক্তি হলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির শিকার হবে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা। শিক্ষিত ও প্রভাবশালী বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে মতামতের ভিত্তিতে সরকারের যেকোনো পদক্ষেপে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি চূড়ান্ত করতে পারেন।
বালুখালী নতুন ক্যাম্পের সি ব্লকের হেড মাঝি মংডুর ব্যবসায়ী আয়ুব আলী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তিনি বলেন, নিজের দেশে শান্তিতে বসবাসের সুযোগ পেলে আমরা বাংলাদেশে থাকতে চাই না। কিন্তু সেখানে আমরা জাতিগত নির্মূলের শিকার। মিয়ানমারের সঙ্গে খুবই সাবধানতার সঙ্গে এগোতে হবে। আমাদের দাবি হচ্ছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় নয়, প্রত্যাবাসন চুক্তিতে জাতিসংঘ ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধির অংশ প্রয়োজন। যাতে সে দেশে ফিরলে আমরা জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা পাই। প্রয়োজনে জাতিসংঘের অধীনে সেখানে গণভোট চাইতে পারে বাংলাদেশ। নইলে আমাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানাই। মংডুর নেপ্রুর যানবাহনের ব্যবসায়ী কবির এখন বালুখালী নতুন ক্যাম্পের ডি ব্লকের হেড মাঝি। তিনি বলেন, বার্মা সরকারের অভিধানে মানবতা ও বিশ্বাস নামে কোনো শব্দ নেই। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের আর্জি মিয়ানমারের কথায় বিশ্বাস করে রোহিঙ্গাদের ফের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেবেন না। এবার আমাদের নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করে ফেরত পাঠান। আমাদের জাতিগোষ্ঠীর বেশির ভাগ পুরুষ হত্যার শিকার তাই সে দেশে ফেরত গেলেও আমাদের তৃতীয় কোন পক্ষের নিরাপত্তা দরকার। তার জন্য প্রত্যাবাসন চুক্তিতে জাতিসংঘকে পক্ষ করতে হবে। একই ধরনের মতামত দিয়েছেন তুমব্রু জিরোপয়েন্ট অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া  তুমব্রুর সাবেক উক্কাডা  (চেয়ারম্যান) এফতার হোসেন, তুমব্রু খালের পাড় জিরো পয়েন্ট অস্থায়ী ক্যাম্পের মাঝি শাহ আলম, বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া মংডুর খেয়ারিপ্রাং মাদরাসার  মাওলানা মোহাম্মদ সলিম,  হাকিমপাড়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া মংডুর ব্যবসায়ী ইবরাহিম, বালুখালী নতুন ক্যাম্পের ৮নং ব্লকের হেড মাঝি আমিনসহ নানা শ্রেণি-পেশার বহু রোহিঙ্গা। সবারই একই কথা। রোহিঙ্গাদের স্বার্থরক্ষা এবং মিয়ানমারের প্রতি তাদের আস্থা ফেরানোর জন্য প্রত্যাবাসন চুক্তিতে জাতিসংঘ ও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব জরুরি।
এদিকে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার হরণ করে রোহিঙ্গাদের একটি মেধা ও বুদ্ধিশূন্য জাতিতে পরিণত করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে দায়িত্ব শেষ করলেই হবে না, কড়া নজরদারির মধ্যে রেখে ব্যাপকভিত্তিতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে যে কোনো উদ্যোগ-পদক্ষেপের আগে তাদের মতামত জানতে হবে। কেন তারা দেশ ছেড়েছে, কি কি অধিকার পেলে ও কেমন পরিবেশ তৈরি হলে তারা ফিরে যাবে। সে মতামতগুলো বিবেচনায় রেখেই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের মতামত উপেক্ষা করে প্রত্যাবাসন চুক্তি করা হলে সেটা বাস্তবায়ন করতে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নতুন-পুরাতন বেশির ভাগ ক্যাম্পই গড়ে উঠেছে পালংখালী ইউনিয়নে। সেখানকার চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের সরকার মানবিকতার স্বার্থে আশ্রয় দিলেও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু প্রত্যাবাসন চুক্তি বা পদক্ষেপ যথাযথভাবে না হলে মিয়ানমারকে যেমন বিশ্বাস করা কঠিন তেমনি রোহিঙ্গাদের ফেরানোও জটিল হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com