প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের হার নিয়ে সিরিজে পিছিয়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দল থেকে ছিটকে পড়েছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালও। আর এবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা দিতে হবে ব্লুমফন্টেইনের পেসবান্ধব উইকেটে। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট মাঠে গড়াচ্ছে আজ। ব্লুমফন্টেইনে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়। স্মরণকালে নিজেদের দুর্বল পেস বোলিং নিয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু পচেফস্ট্রমের ন্যাড়া পিচে সুযোগটা নিতে পারেননি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ব্লুমফন্টেইনে মুশফিকদের পড়তে হবে আরো বড় পরীক্ষায়। ব্লুমফন্টেইনের ম্যাংগুয়াং মাঠের পিচে পেসাররা সহায়তা পাবেন বলে জানিয়েছেন ভেন্যুর গ্রাউন্ডসম্যান নিকি প্রিটোরিয়াস। যদিও ইনজুরির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নেই প্রোটিয়া শীর্ষ চার পেসার ডেইল স্টেইন, মরনে মরকেল, ভারনন ফিল্যান্ডার ও ক্রিস মরিস। এতে প্রোটিয়া পেস আক্রমণের দায়িত্বটা থাকছে ২২ বছর বয়সী তারকা কাগিসো রাবাদার হাতে। ক্যারিয়ারের ২১ টেস্টে রাবাদার শিকার ৯২ উইকেট। পচেফস্ট্রমে ফ্ল্যাট পিচেও টাইগার ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেখা যায় তাকে। তবে ব্লুমফন্টেইন টেস্টে অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ নিয়েই মাঠে নামছে স্বাগতিকরা। পেসার ডুয়ান অলিভারের শিকার চার ম্যাচে ১৩ উইকেট। অপর পেসার ওয়েইন পারনেল ১৩ উইকেট পেয়েছেন পাঁচ টেস্টে। পচেফস্ট্রমে টেস্ট অভিষেক হয় আনদিলে ফেলুকায়োর। প্রোটিয়া এ নবীন পেসার ওই ম্যাচে সাকুল্যে পান এক উইকেট। তবে ফর্ম দেখাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁ-হাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। পচেফস্ট্রম টেস্টে মহারাজের শিকার ৭ (৩+৪) উইকেট। ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্টে ৫০ শিকার পূর্ণ করেন তিনি। পচেফস্ট্রম টেস্টে ৩৩৩ রানের বড় জয় সত্ত্বেও উইকেট নিয়ে অসন্তোষ দেখান দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। নিজেদের কন্ডিশনে বাংলাদেশের মতো দলের বিপক্ষে উইকেট থেকে আমাদের সহায়তা পাওয়া উচিত। পচেফস্ট্রম থেকে ২৮০ কিলোমটিারের দূরত্ব ব্লুমফন্টেইনের। এখানে ইতিমধ্যে লেগেছে শীতের হাওয়া। গত কয়দিন বৃষ্টিও হচ্ছে এখানে। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আজও। পচেফস্ট্রমের ফ্ল্যাট পিচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। আর ন্যাড়া পিচে মাত্র একজন (মেহেদী হাসান মিরাজ) স্বীকৃত স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাংক। এতে ডাগআউটে বসে থাকতে হয় বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলের বোলারদের মধ্যে টেস্টে সর্বাধিক ৫৪ উইকেট শিকার তাইজুলেরই। পচেফস্ট্রম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে হাশিম আমলা, বাভুমাদের ভোগান্তিতে ফেলেন অনিয়মিত স্পিনার মুমিনুল হক। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট নেন এ অফস্পিনার। একাদশে সুযোগ নেয়া তিন পেসারের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া তাসকিন আহমেদ ও শফিউল ইসলামের নৈপুণ্য ছিল অনুজ্জ্বল। এতে হার শেষে পেসারদের দিশাহীন বোলিং নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন খোদ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম।
টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগেই টেস্টে ছুটি চেয়ে নেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ইনজুরি নিয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে পড়েছেন তামিম ইকবালও। এতে দীর্ঘ চার বছর পর সাকিব-তামিমকে ছাড়া টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৩’র মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে সাকিব-তামিমকে ছাড়া খেলতে দেখা দেখা যায় বাংলাদেশ দলকে। অবশ্য ওই ম্যাচে সুখস্মৃতি রয়েছে বাংলাদেশের। গলে ব্যাট হাতে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম হাঁকান ডাবল সেঞ্চুরি। আর ১৯০ রানের ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। প্রস্তুতি ম্যাচে ইনজুরি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলতে পারেননি ওপেনার সৌম্য সরকার। আজ একাদশে দেখা যাবে বাঁ-হাতি এ ওপেনারকে। একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন প্রথম ম্যাচের উইকেটশূন্য পেসার তাসকিন আহমেদ। এক্ষেত্রে সুযোগ মিলছে শুভাশিষ রায় অথবা রুবেল হোসেনের। পচেফস্ট্রম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকান মুমিনুল হক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অধিনায়ক মুশফিক করেন ৪৪ রান। ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে আসে ৩৯। তবে ক্রিজে মানিয়ে উইকেট বিসর্জন দেন প্রত্যেকেই। যদিও ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছে ৩২০ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগের চার টেস্টে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২৫২। আর যে কোনো ভেন্যুতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩২৬। পচেফস্ট্রমে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০ রানে গুঁড়িয়ে যায় মুশফিকবাহিনী। গত একাদশকে ১০০’র নিচে ইনিংস গুটানোর নজির ছিল না বাংলাদেশের। ম্যাংগুয়াং ভেন্যুতে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার পঞ্চম টেস্ট। আগের চারবারই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক প্রোটিয়ারা। এখানে তাদের সর্বশেষ জয়টি ছিল ২০০৮এ বাংলাদেশেরই বিপক্ষে। ওই ম্যাচে ইনিংস ও ১২৯ রানে জয় দেখে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্লুমফন্টেইনে এবার ব্যক্তিগত ল্যান্ডমার্কের সামনে রয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুমিনুল হক। টেস্টে ২০০০ পূর্ণ হতে রিয়াদের ১১৬ ও মুমিনুলের দরকার আর ১৭৫ রান।