এবার শুরু ওয়ানডের লড়াই। টেস্টে শোচনীয় হারের পর বাংলাদেশের দাঁড়ানোর সুযোগ। প্রমাণ করার সুযোগ তারা আসলে অতটা খারাপ দল নয়, যতটা খারাপ তারা করেছে টেস্টে। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে আজ দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। টেস্ট থেকে ছুটি নেয়া সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আছেন ইমরুল কায়েস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তিন ম্যাচের প্রথমটি হবে কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভাল স্টেডিয়ামে। টেস্টে বাজে ভাবে হারের পর বাংলাদেশ শিবিরে খানিকটা হতাশার ছাপ দেখা যায়। বিশেষ করে অধিনায়ক মুশফিকের কিছু প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া দলকে অস্বস্তিতে ফেলে। তবে মাশরাফি ও সাকিব দলের সঙ্গে যোগ দেয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় মাঠে গড়াবে টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন। উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য সবচেয়ে কঠিন জায়গা দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১৭ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে মাত্র ৩টিতে জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ দল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জয় নেই একটিও।
দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান মুখিয়ে আছেন এমন কন্ডিশনে নিজেদের প্রমাণের চ্যালেঞ্জ নিতে। শুক্রবার কিম্বার্লি আসে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। গতকাল মাঠে গিয়ে নেটে ব্যাটিং করেন তামিম ইকবাল, নাসির হোসেন ও মুমিনুল হক। নেটে বোলিং করেন তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসির ও মুমিনুল। ওয়ানডে প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। ক্রিকেট যেহেতু খেলি, তাই এ চ্যালেঞ্জটাও তো আমরা নিতে চাই। এই চ্যালেঞ্জগুলো না এলেতো খেলার মজাটা আসবে না। আশা করি, সবাই প্রস্তুত থাকবে আর ভালো করার চেষ্টা করবে।’
এ সফরের দুই টেস্টে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং ছিল একেবারেই দুর্বল। এমনকি ওয়ানডে সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও হারে বাজে ভাবে। তাই প্রথম ওয়ানডের একাদশ কেমন হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ক্রমাগত ব্যর্থ সৌম্য সরকারকেই কি দেখা যাবে ওপেন করতে? দেশের মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ দল। সেই জয়ের নায়ক বলা যেতে পারে সৌম্যকেই। ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬২ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। ব্যাট হাতে নেমে সৌম্য সরকারের অপরাজিত ৮৮ রানে ভর করে জয় তুলে নেয় মাশরাফির দল। দ্বিতীয় ম্যাচেও চট্টগ্রামে প্রোটিয়াদের ১৬৭ রানে অলআউট করে টাইগাররা। জবাব দিতে সৌম্যের ৯০ রানে ভর করে জয়ী বাংলাদেশ দল। সৌম্যের সেই পারফরম্যান্স কি তাকে ওয়ানডেতে আরো একটি সুযোগ দিবে? অন্যদিকে ইনজুরি আক্রান্ত তামিমকে নিয়ে আকরাম খান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ও (তামিম) আগের চাইতে এখন ?অনেক ভালো। আশা করছি ও কালকে খেলবে। আমার সঙ্গে ফিজিওর কথা হয়েছে। সে বলেছে আমরা ৮০ ভাগ নিশ্চিত যে ও খেলবে। অনুশীলন করছে। সন্ধ্যার পরে নিশ্চিত জানতে পারবো খেলবে কিনা।’
ওপেনিংয়ে তামিম না থাকলে সৌমের থাকা নিশ্চিত। সঙ্গে ইমরুল কায়েস। আর তামিম খেললে সৌম্যের মাঠে নামার সুযোগ কমে যেতে পারে। ইমরুলকে নিয়ে প্রশ্ন তিনে খেলবেন নাকি ওপেনিংয়ে! ইমরুল তিনে খেললে সাকিব চারে, মুশফিক পাঁচে, মাহমুদুল্লাহ ছয়ে ও সাব্বির সাতে। তবে এ ম্যাচে নাসিরকে খেলানোর সম্ভাবনা বেশি। সেই ক্ষেত্রে মাহমুদুল্লাহর অথবা ইমরুলের দলে জায়গা নাও হতে পারে। ব্যাটিংয়ে যেভাবেও হোক সাতজনের বেশি থাকছে না। কারণ সাকিব দলে আসায় একজন বাড়তি বোলার ও ব্যাটসম্যান যোগ হয়েছে। তাই প্রশ্ন হচ্ছে বাকি চারজন কারা। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ৮ নাম্বারে দলের পেস বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন। সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান। যদি দলে কোনো স্পেশালিস্ট স্পিনার না নেয়া হয় তাহলে শেষ দু’জনই পেসার। রুবেল হোসেন ও তাসকিন খেলবেন নিশ্চিত ভাবে। আর দল যদি তিন পেসার নিয়ে খেলে তাহলে তাসকিন বা রুবেলের যে কোনো একজন খেলবেন। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে তখন দলে আসবে মেহেদী হাসান মিরাজ। টেস্টে যে দল খেলেছে তা থেকে সম্পূর্ণ নতুন এক দল দেখা যাবে আজ।
উইকেট ও কন্ডিশন
দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভাল স্টেডিয়ামে আজ প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। ১৯৯৮ সালে এ মাঠে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা। এরপর শেষ ম্যাচ ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রোটিয়াদের এটি ওয়ানডে ও টি-টোয়োন্টি ভেন্যুও বলা যায়। কারণ এখানে এখন পর্যন্ত কোনো টেস্ট ম্যাচ হয়নি। ডায়মন্ড ওভাল স্টেডিয়ামের উইকেট পচেফস্ট্রম ও ব্লুমফন্টেইনের চেয়ে বেশি ফ্লাট। এই মাঠে আগে ব্যাটিং গড়ে ২৫৯ রান উঠে। আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য বেশ গরমেই কাটবে। কারণ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই সঙ্গে আবহাওয়া বার্তায় বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের সম্ভাব্য একাদশ:
সৌম্য সরকার/লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন/তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।