সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ খুনের ঘটনায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। একের পর এক খুনের ঘটনায় সাধারণ
মানুষ ছাড়াও ছাত্রলীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। গতকাল ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রুপের কর্মীরা এক হয়ে নিহত মিয়াদের লাশ নিয়ে নগরীতে মিছিল করেছে। তারা প্রায় এক ঘণ্টা নগরীর জনাকীর্ণ চৌহাট্রা এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় বসে শতাধিক নেতাকর্মী খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে সিলেটে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেন তারা।অবরোধের পর সমাবেশ থেকে খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সিলেটের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন ও আগামীকাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ধর্মঘট পালন। সিলেট নগরীর এমসি কলেজের পাশে টিলাগড়। এই টিলাগড় এখন আবার সন্ত্রস্ত জনপদ। প্রায় এক মাস আগে টিলাগড়ের পাশে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান গ্রুপের কর্মীদের হাতে খুন হয়েছিল সুরমা গ্রুপের কর্মী জাকারিয়া মাসুম। এই খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই সোমবার টিলাগড়ে ঝরলো আরেকটি লাশ। টিলাগড়ে ছাত্রলীগের রায়হান গ্রুপের কর্মীরা স্থানীয় কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের কার্যালয়ের সামনে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করেছে ছাত্রলীগের হিরণ মাহমুদ গ্রুপের কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদকে। এই খুন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। হিরণ মাহমুদ গ্রুপের কর্মীরা দাবি করেছেন টিলাগড় দিয়ে দুই বন্ধুকে সঙ্গে করে যাওয়ার সময় তাদের আটক করে হামলা চালানো হয়েছে। জেলা সেক্রেটারি রায়হান গ্রুপের কর্মীরা দাবি করেছেন নিহত মিয়াদ সহ তিনজন তাদের গ্রুপের কর্মী তোফায়েলের ওপর হামলা চালায়। হামলা থেকে রক্ষা পেতে তোফায়েল সহ তার সহযোগীরা পাল্টা ছুরিকাঘাত করলে মারা যায় মিয়াদ। এ ঘটনায় আটক হওয়া তোফায়েলের বড় ভাই ফখরুল ইসলামও পুলিশের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে সিলেটের শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন ঘটনা এখন খুনের মধ্যে আবর্ত। আমরা খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি। পরে তদন্তে সব জানা যাবে। এদিকে মিয়াদ খুনের ঘটনার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিলেট ছাত্রলীগের রাজনীতি। এ ঘটনায় একা হয়ে গেছে ছাত্রলীগ সম্পাদক রায়হান গ্রুপের কর্মীরা। একের পর এক খুনের ঘটনায় তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সবাই। এ কারণে মিয়াদ খুনের ঘটনার পর সোমবার বিকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়েছে সিলেটে। রাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ হয়েছে। এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ছাত্রলীগের শত শত কর্মী ভিড় জমান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। তারা যখন বাইরে বসে অপেক্ষা করছিলেন তখন মর্গের ভেতরে মিয়াদের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এর আগে শাহপরান থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে। পুলিশ জানায়, মিয়াদের বুক ও পেটে একাধিক আঘাতের চিহ্ন হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মিয়াদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ লাশ তার পিতা আকলু মিয়ার হাতে সমঝে দেয়। আকলু মিয়া লাশ গ্রহণ করে এম্বুলেন্সে তোলেন। এ সময় এম্বুলেন্সবাহী লাশকে ঘিরে রেখে মেডিকেল এলাকা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের মাথায় ছিল কাপনের কাপড় বাঁধা। তারা লাশ নিয়ে মিছিল করে নগরীর কাজলশাহ, মধুশহীদ, পুলিশ লাইন, রিকাবীবাজার ঘুরে চৌহাট্রায় আসে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা চৌহাট্রা এলাকায় রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভকালে তারা খুনি ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন। প্রায় এক ঘণ্টা ছাত্রলীগ কর্মীরা বিক্ষোভকালে নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের হিরণ মাহমুদ গ্রুপের নেতারা খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে দুইদিনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এ সময় সেখানে বক্তব্য রাখেন গ্রুপের প্রধান সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, টুলটিকর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহমদ, এপিপি এডভোকেট আব্দুর রহিম ও সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার প্রমুখ। বক্তব্যকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিকে বেলা দুইটার দিকে মিয়াদের লাশ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা জগন্নাথপুরের গ্রামের বাড়িতে রওয়ানা দেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে স্বজনরা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাদ আসর জানাজা শেষে মিয়াদের লাশ দাফন করা হয়। ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, গতকাল বিকাল পর্যন্ত সিলেটে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো এজাহার দাখিল করা হয়নি। লাশ দাফনের পর তারা মামলা করতে আসবেন বলে জানান। গ্রুপের প্রধান হিরণ মাহমুদ জানিয়েছেন, সিলেটে কারা লাশের রাজনীতি করছে সেটি সবাই জানেন। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন না। তিনি বলেন, খুনিদের গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলন চলবে।
সোমবার রাতে মিছিল: ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ নিহত হওয়ার জেরে নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সোমবার রাতে মিছিল নিয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে জড়ো হয় নেতাকর্মীরা। এরপর চৌহাট্টা পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। এসময় বিক্ষোভকারীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশও চৌহাট্টা পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। তাদের উপস্থিতিতেই বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ। অবরোধের ফলে চৌহাট্টা পয়েন্টে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিয়াদের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত বুলবুল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিটু তালুকদার, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, সঞ্জয় চৌধুরী, সহ সভাপতি হুসাইন আহমদ চৌধুরী, ইমরুল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নজমুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হুসাইন আহমদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মওদুদ আহমদ আকাশ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব দাস, শাহ আলমগীর, রাসেল আহমদ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাদিকুর রহমান, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দিলোয়ার হোসেন, সজীব চৌধুরী, রাজিব, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সৌরভ দাস, রুবেল আহমদ, মুরাদ, সোহেল, অনুপম দাস, আবু তাহের শিপু, জেলা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপ- সম্পাদক ফাইয়াদ আহমদ জামিল, উপ- আইন বিষয়ক সম্পাদক কাওছার উদ্দিন আহমদ, ছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক বখতিয়ার আকরাম চৌধুরী অনি, রাসেল, জয়াশীষ লিটন, রাহি, সাইফুল, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রুয়েল, তানিম, নাঈম, আনাছ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের শিপু দাস প্রমুখ। এছাড়াও এমসি কলেজ ছাত্রলীগ, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগ সহ অন্যান্য ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।