চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়ছে। তবে আমদানি বাড়লেও দ্রুত খালাস না হওয়ায় ভোগ্যপণ্যবাহী জাহাজের জট বাড়ছে। বন্দরে এখন ভোগ্যপণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫টিতে।
বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ভোগ্যপণ্যের বড় অংশই বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজের (পণ্য পরিবহন করা ছোট জাহাজ) মাধ্যমে খালাস হয়। বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য খালাসে চাহিদানুযায়ী লাইটার জাহাজ মিলছে না। আবার লাইটার জাহাজ পাওয়া গেলেও সময়মতো তা কর্ণফুলীর বেসরকারি ঘাটগুলোতে এনে খালাস করার জন্য সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পণ্য খালাসের সব প্রক্রিয়া এখন ধীরগতিতে পড়ে গেছে। অর্থাৎ বন্দরে আসার পর জাহাজ থেকে খালাস করে গুদাম বা কারখানায় ভোগ্যপণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে তা কার্যত এখন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ববাজারে এখন গম, চিনি, ডাল, ভোজ্যতেলসহ বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম তুলনামূলক কম। আবার দেশে চাহিদা বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরাও এসব পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। কম দামে ভোগ্যপণ্য কিনলেও ব্যবসায়ীদের এখন খরচ বাড়াচ্ছে পণ্য খালাসে ধীরগতি। ভোগ্যপণ্যবাহী প্রতিটি জাহাজের আমদানিকারককে ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে।
বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ায় আমদানিও বাড়ছে। তবে সে অনুযায়ী লাইটার জাহাজের সংখ্যা এবং ঘাটের সংখ্যা না বাড়ায় খালাসপ্রক্রিয়ায় ধীরগতি রয়েছে। দ্রুত এ-সংকটের সুরাহা করা না হলে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ব্যাঘাত তৈরি হবে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে এখন চাল, গম, চিনি ও ডাল এই চারটি পণ্যবাহী ৩৫টি জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজে সাড়ে ১৬ লাখ টন ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব জাহাজের অর্ধেকের বেশি বা ১৯টি বন্দর জলসীমায় এসেছে গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এসব জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য খালাস হচ্ছে না।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ভোগ্যপণ্যবাহী জাহাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে গমবাহী জাহাজ। বন্দরে এখন গমবাহী জাহাজ রয়েছে ১৮টি। এসব জাহাজে আনা হয়েছে ৯ লাখ ৮০ হাজার টন গম। এরপরেই রয়েছে অশোধিত চিনি। নয়টি জাহাজে আনা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার কেজি চিনি। এ ছাড়া ছয়টি জাহাজে ১ লাখ ১২ হাজার টন চাল এবং দুটি জাহাজে ৮০ হাজার টন গম রয়েছে।
বন্দরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২১ জানুয়ারি এক দিনে ২৪টি ভোগ্যপণ্যবাহী বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়েছে ২৭ হাজার টন। লাইটার জাহাজ পাওয়া গেলে এক দিনে ৪ হাজার টন করে এসব জাহাজ থেকে ৯৬ হাজার টন খালাস করা যেত। পণ্য খালাসের এই চিত্র এখন প্রতিদিনের।
লাইটার জাহাজের সংকট কাটাতে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে লাইটার জাহাজ নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয় নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এরপরও নতুন করে নির্মাণাধীন জাহাজগুলো পণ্য পরিবহনের বহরে যুক্ত হতে এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছর লেগে যাবে। আবার ঘাটগুলো আধুনিকায়ন করতেও সময় লাগছে। সদরঘাট এলাকায় বন্দরের যে লাইটার জেটি রয়েছে তা চালু করতে খননকাজেও দেরি হচ্ছে। ফলে সংকট সহসাই কাটছে না।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুর ইসলাম বলেন, সংকট সুরাহা করতে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের আওতায় সব লাইটার জাহাজ পরিচালনার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। যেসব লাইটার জাহাজ নির্মাণাধীন রয়েছে সেগুলো যুক্ত হলে ধীরে ধীরে সংকট কেটে যাবে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষও ঘাটগুলো আধুনিকায়ন করছে। ঘাটে পণ্য খালাস দ্রুততর হলে এ সংকট থাকত না।