রোববার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে নারীর রূপ ধারণ করা ১২ হিজড়াকে আটক করেছে পুলিশ। পাঁচটি সেলুনে নারীবেশে সেবা দিচ্ছিলেন তারা। পুলিশ ওই প্রদেশে হিজড়া, সমকামী, উভকামী (এলজিবিটি)-দের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় তাদের আটক করে। এরপর বলপূর্বক তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়। পরিয়ে দেয় পুরুষের পোশাক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের এই অভিযানের ফলে মানবাধিকার সংস্থাসমূহ উদ্বেগ জানিয়েছে। ওই প্রদেশের পুলিশ প্রধান আহমাদ উন্তুং সুরিয়ান্তা বলেছেন, আমার লোকেরা ওই হিজড়াদের আটক করে তাদের পুরুষ হবার প্রশিক্ষণের আওতায় মাথা ন্যাড়া করে পুরুষের পোশাক পরিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও, অফিসাররা তাদেরকে খানিকটা সময় উচ্চৈঃস্বরে চিৎকারের পাশাপাশি দৌড় দেয়ায়। যাতে তাদের পুরুষালি কণ্ঠ বের হয়ে আসে। সুরিয়ান্তা আরো বলেন, ইন্দোনেশিয়ার নতুন প্রজন্মকে এলজিবিটি সমাজের বিকৃত প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই এই অভিযান। আটক করা ওইসব হিজড়াকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবার জন্যে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সুরিয়ান্তা বলেন, কিছু সেলুনে স্কুলগামী কিশোরদের নারী বেশধারী হিজড়ারা ‘সেবা’ দিচ্ছে এবং এলাকাতে মাদকের ব্যবহার বাড়ছে- এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ এই অভিযান চালিয়েছে। এটি কোন এলজিবিটি বিরোধী অভিযান নয় বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, আচেহ প্রদেশ ইন্দোনেশিয়ার একমাত্র প্রদেশ যেখানে ইসলামী শরিয়াহ আইন বহাল। ২০১৭ সালের মে মাসে সমকামে লিপ্ত হবার অপরাধে দুজন যুবককে ৮০ ঘা করে বেত্রাঘাত করা হয়। প্রতিবেশীরা তাদের এপার্টমেন্টে হানা দিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এ প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার সক্রিয়তাবাদী মানবাধিকার কর্মী তুংগাল পাওয়েস্ত্রী সিএনএন’র কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এটি একদম ¯পষ্ট যে রোববারের অভিযানে পুলিশ হিজড়াদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। আমি আটক করা হিজড়াদের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। প্রসঙ্গত, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ওপর এ ধরণের ঘটনা ইন্দনেশিয়ায় নতুন কিছু না। সাম্প্রতিক সময়ে নানাভাবে তাদেরকে হেয় করতে চেয়ে চালানো পুলিশি অভিযানের এটি মাত্র একটি নতুন খ-চিত্র। এ ধরণের পুলিশি অভিযানে সক্রিয়তাবাদীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ২০১৫ সাল থেকেই সে দেশে সমকামীদের ওপর গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে। বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও এলজিবিটি ইস্যুতে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এলজিবিটি ইস্যু ইন্দোনেশিয়ার জন্যে পারমাণবিক আক্রমণের চেয়েও বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। জানুয়ারি মাসে দেশটির রাজনীতিবিদগণ দেশটির অপরাধ আইন সংশোধন করে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধের আলোচনা শুরু করেন। যার আওতায় সমকামও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।