তার অভিনীত অরন্য মামুনের ‘ব্লাকমেইল’ (২০১৫), সাফি উদ্দিনের ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-২’(২০১৪) এবং শামিম আহম্মেদ রনির ‘মেন্টাল’ (২০১৫) ও বাণিজ্যিক ছবি আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত ‘জালালের গল্প’ (২০১৪) ইত্যাদি চলচ্চিত্র উল্লেখযোগ্য।
ছোট পর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কখনো পতিতা, কখনো চা-পান বিড়ি বিক্রেতা, আবার কখনো অভিনয় করছেন নিজ এলাকায় চেয়ারম্যান চরিত্রে। চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের জন্য নির্মাতাদের কাছে অদ্বিতীয় এই অভিনেত্রী। গেলো বছরে ‘বাদবন’ শীর্ষক একটি টেলিছবিতে ডাকাত রাণীর চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ সাড়া ফেলেন তিনি। সে সঙ্গে অভিনয় করেছেন জমিদার বাড়ির মেয়ের চরিত্রে।
প্রিয় এই মানুষটির চলমান ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তি মৌসুমীকে জানতে তার সঙ্গে কথা হয় স্বদেশ নিউজ ২৪.কম। তার সম্যক বক্তব্য নিচে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
কেমন আছেন?
মৌসুমী হামিদ: আলহামদুলিল্লাহ্
ব্যস্ততা কি নিয়ে?
মৌসুমী হামিদ: বেশ কিছু সিরিয়াল নাটকের কাজ করছি। এছাড়া সিঙ্গেল তো আছেই।
২০১৮ সালের শুরুটা হয়েছিলো কিভাবে? আর কোন কোন নাটকে কাজ করেছেন?
মৌসুমী হামিদ: এই বছরের শুরুটা নাই বলি। কারণ, এটা চেয়েছিলাম এক ভাবে, হয়েছে অন্য ভাবে। আর চলতি বছরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। ২০১৮ এর প্রথম কাজ, নির্মাতা ফজলুর রহমানের ধারাবাহিক ‘উল্টো পথে উল্টো রথে’ এর মাধ্যমে। এরপর করেছি বি ইউ শুভর ‘লাভ বার্ড’ ও ‘ভালবাসার শেষ নেই’, সুমন আচার্যীর ‘বুনো হাঁস’, মোহন আহমেদের ‘বিবর্তন’, আল আমিন বিপ্লবের ‘শেষের চিঠি’, উজ্জ্বল মাহমুদের ‘তবুও রুপা তোমাকেই ভালোবাসি’, মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুলহাসের ‘অতঃপর বারেক’, রবিউল হাসান সোহেলের ‘আবার কেন দেখা হলো’। তাছাড়া সুমন আনোয়ারের ‘সুখী মীর গঞ্জ’ ও ‘ইডিয়ট’শীর্ষক দুটি ধারাবাহিকে কাজ করছি।
অনেক চলচ্চিত্রে আগে কাজ করেছেন। এখন আর কোনো কাজ করছেন কিনা?
মৌসুমী হামিদ: আপাতত চলচ্চিত্রে কোনো কাজ করছি না। গল্প ভালো হলে, মন মতো হলে সামনে অবশ্যই কাজ করবো। কিন্তু মনের মতো গল্প ও চরিত্র কিছুই পায় না। তাছাড়া নির্মাতারাও আমাকে সেভাবে ডাকেন না। আমাদের চলচ্চিত্রে কাজ করতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়। সেই গুণাবলিগুলো হয়তো আমার জানা নেই বলেই চলচ্চিত্রের ডাক পাই না। আগে এক সময় মনে হতো বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করবো না। কিন্তু ‘জালালের গল্প’ ছবিটি করার পর মনে হয়েছে সবাই আমাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। তাই এই ধরনের ছবিতে আরো কাজ করতে চাই।
অভিনয় নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
মৌসুমী হামিদ: অভিনয়ে, এখন সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। গতানুগতিক প্রেম-ভালোবাসার গল্প দিয়ে দর্শকের মন জয় করা এখন আর সম্ভব নয়। প্রেম-ভালোবাসা থাকবে। একজন নির্মাতা ইচ্ছে করলে সেটিকে অন্যভাবেও উপস্থাপন করতে পারেন। আমাদের শিল্পীদের সব সময় অভিনয়ের ক্ষুধা থাকে। আবার আমরা কাদামাটির মতোই। নির্মাতারা যেভাবে চাইবেন, চরিত্রে সেই রূপটিই দেবো। নির্মাতারা আমাকে নিয়ে ভাবেন, গল্প তৈরি করেন সেটি আমার জন্য বড় পাওয়া। নির্মাতাদের এই আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করবো।
সাত বছরে প্রাপ্তি কতটুকু?
মৌসুমী হামিদ: এই সাত বছর পুরোটাই আমার প্রাপ্তি। কখনো ভাবিনি ঢাকায় একা থাকবো, নিজে গাড়ি চালিয়ে ঘুরবো, এমন স্বাধীনতা পাবো। মফস্বলে বড় হয়েছি। যেখানে বড় হয়েছি, সেখানে একটা মেয়ে পড়াশোনা করে, চাকরি করে, বিয়ে করে সংসারী হয়ে যায়। কিন্তু সেই জায়গা থেকে আজকের মৌসুমী হামিদ হবো সেটা কখনো কল্পনাও করিনি। এই সাত বছরের অর্জন বলে শেষ করা যাবে না।
অভিনয় করেন আপনি। কার অভিনয় আপনার বেশ ভালো লাগে? আর কার সঙ্গে পর্দায় কাজ করতে চান?
মৌসুমী হামিদ: জয়া আপুর অভিনয় আমার ভীষণ ভালো লাগে। উনি একজন ভারসেটাইল অভিনেত্রী। ওনার মতো আরেকজন অভিনেত্রী আর কোথাও দেখিনি। আর পর্দায় কাজ করার ইচ্ছে আছে, আরেফিন শুভর সঙ্গে।
কোথায় যেন শুনেছি বই মেলা আপনার খুব পছন্দের জায়গা। এখন এটা চলছে। গিয়েছেন কি?
মৌসুমী হামিদ: আগে তিনবার বইমেলায় গিয়েছি। যখন হুমায়ূন আহমেদ স্যার বেঁচে ছিলেন তখন দুবার, আর তিনি মারা যাওয়ার পর একবার। স্যার বেঁচে থাকা অবস্থায় যখন গিয়েছিলাম তখন অনেক বই কিনেছিলাম। শুধু হুমায়ূন স্যারের নয়, জাফর ইকবাল স্যার, আনিসুল হক স্যারেরও বই কিনেছিলাম। আর আমার সায়েন্স ফিকশন বই অনেক পছন্দ। কিন্তু হুমায়ূন স্যার চলে যাওয়ার পর যখন গিয়েছিলাম কিছুই ভালো লাগেনি। সেজন্য ওইবার আর বই কেনা হয়নি। আমার বাসায় সংগ্রহে যা বই আছে, বেশীরভাগই হুমায়ূন স্যারের বই। এবারো বইমেলায় গিয়েছি ভাবনার জন্য। সে আমার বান্ধবী, ওর লেখা বই প্রকাশ হয়েছে, সেটা কিনেছি। তাছাড়া শ্রদ্ধেয় অনিমেষ আইচ দাদার লেখা বইও এসেছে। সেটাও কিনেছি। আমাদের নিজেদের মানুষরা যখন বই প্রকাশ করেন, অনেক ভালো লাগে।
মিডিয়ায় কাজ করতে গেলে ‘স্যাক্রিফাইস’ করতে হয়। কথাটা নিশ্চয় শুনেছেন। এটা কি সত্যি! এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন কখনো?
মৌসুমী হামিদ: শুধু মিডিয়া নয়, প্রত্যেকটা কর্মক্ষেত্রেই নারীরা যৌন হেনস্থার শিকার হয়। আপনি যদি স্মার্ট হোন, তাহলে খুব সুন্দর করে নিজের সম্মান বজায় রেখে কাজ করতে পারবেন। আমরা আমাদের মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে শিখেছি। আমাদের উপর সাধারণ মানুষের আশাটাই অন্যরকম। তারা আমাদের আইডল মনে করেন। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সংযত হওয়া উচিত। যদি নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতাই না থাকে তাহলে এখানে কাজই করা উচিত বলে মনে করি না। দর্শকদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আমরাও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। সকলকে বিনোদন দেয়ার জন্য আমরা কাজ করি। আরো ভালো কাজ করতে চাই কিন্তু আপনাদের (দর্শক) অনেক সাপোর্ট লাগবে।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, মিডিয়াতে আসার আগে ব্যক্তি মৌসুমী কেমন ছিলেন? কি করতেন?
মৌসুমী হামিদ: মিডিয়াতে আসার আগে খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে ছিলাম। ফ্যামিলির এক ধরনের আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যে বড় হয়েছি। সাতক্ষীরার তালায় জন্ম নেয়া নিম্ন মধ্য ঘরের একজন মেয়ে ছিলাম। মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ হওয়ার পর আমি খুলনায় চলে যাই। সেখানে ব্যবস্থাপনা শিক্ষায় পড়াশোনার জন্য আজম খান কমার্স কলেজে ভর্তি হই। আর সেই সময় আমার শিক্ষা জীবন হোস্টেলের মধ্য দিয়ে চলে। আর সেখান থেকে মিডিয়ায় আসা
কিভাবে?
মৌসুমী হামিদ: হোস্টেলে থাকাকালীন লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারে সেই সময় হোস্টেলের অনেক মেয়েরা রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তারা আমাকে বলে, আমিও যেন তাদের সঙ্গে লাক্সে রেজিস্ট্রেশন করি। তাদের কথা শুনে তাই করলাম। পরে অনেক চড়াই উৎরাই ২০১১ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারে রানার্স আপ হয়েছিলাম।
দুই পর্দার বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।
মৌসুমী হামিদ: চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলার মতো এত বড় কেউ এখনো হইনি। তবে ছোট পর্দায় বেশ কিছু ভালো কাজ হচ্ছে। আমাদের দেশে ভালো ভালো আর্টিস্ট, ডিরেক্টর এবং লোকেশন রয়েছে। তবে নাটকের বাজেট স্বল্পতার কারণে আমরা ভালো কিছু দিতে পারছি না। আর অবশ্যই একটা নাটক যে স্বল্প সময়ে তৈরি হচ্ছে, তা আরো দীর্ঘ করা গেলে অনেক ভালো কিছু হতো বলে মনে করি
সবশেষ বিয়ে করছেন কবে?
মৌসুমী হামিদ: ভালো ছেলে পেলে এখনই বিয়ে করে ফেলবো।
ভালো ছেলে বলতে কেমন ছেলে?
মৌসুমী হামিদ: অবশ্যই ছেলের উচ্চতা ভালো হতে হবে। দেখতে অনেক সুন্দর না হলেও চলবে। একজনকে যখন বিশ্বাস করবো তখন আমার পুরোটা দিয়েই বিশ্বাস করবো। এমন কাউকে বিয়ে করতে চাই যে আমাকে এবং আমার কাজকে সম্মান করবে।