আবহাওয়া এখন এমন—এই গরম তো এই ঠান্ডা। ঋতুর হিসাবে শীত তো চলে গেছে, এসে গেছে বসন্ত। কিন্তু কমেনি শীতল হাওয়ার আমেজ। দিনভর রোদ আবার পড়ন্ত বিকেলে শীতল হাওয়ার পরশ। বসন্তের এই মাতাল সমীরণ মনে যতই রোমান্টিকতা জাগিয়ে তুলুক, ত্বকে বিরূপ প্রভাবই ফেলে।
বসন্তের এই শীত এই গরম আবহাওয়ার প্রভাব বেশি পড়ে ত্বক ও চুলে। কেননা গরম ও শীতে দুই ধরনের যত্নের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু যখন আবহাওয়া মিশ্র, তখন তো একটু চিন্তায় পড়তে হয় বৈকি।
রাজধানীর হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ শাহীনা আফরিন বলছিলেন, এ সময়ে বাতাসে ধুলা বেশি থাকে। যে কারণে ত্বকে র্যাশ, ব্রণসহ নানা সমস্যার দেখা দেয়। এই আবহাওয়ায় ত্বকের জন্য চাই বিশেষ যত্ন।
শীতে ত্বকের জন্য যেসব উপকরণ ভালো, গরমে সেটাই হয়ে উঠবে যন্ত্রণার কারণ। এখন তো ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে আবহাওয়ার মতিগতি। খুব ভালো হয় যদি কোনো রূপবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রূপচর্চা করা যায়—এমনটাই মনে করেন পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান। তিনি বললেন, যদি প্রসাধনের মেয়াদ থেকেও থাকে, তবু অনেক দিনের ব্যবহৃত প্রসাধন ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, এই সময় বাতাসে প্রচুর ধুলা ওড়ে, যাতে থাকে নানা ধরনের রোগজীবাণু। তাই ব্যবহৃত প্রসাধনে ধুলা পড়ে ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিরুনি আর তোয়ালেটাও পরিষ্কার করতে হবে নিয়মিত।
বাইরে মিঠে রোদ। তাই বলে ভাববেন না যে এই রোদ আপনার ত্বকের কোনো ক্ষতি করবে না। বরং এই রোদে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান লুকিয়ে থাকে। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। পানিভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। এখন বাজারে জিঙ্ক অক্সাইড ও টাইটেনিয়াম অক্সাইডসমৃদ্ধ ম্যাট ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, যা ত্বককে তেলতেলে করে না।
এদিকে কোনো না কোনো কাজে যাঁদের প্রতিদিনই বাইরে যেতে হয়, তাঁদের তো নিয়ম মেনে রূপচর্চা করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। শাহীনা আফরিন জানালেন, ঘরে বসেই কীভাবে এই বসন্তে ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখবেন তার কিছু উপায়।
মুগডালের বেসন এই সময়টায় ত্বক পরিষ্কার করতে বেশ কাজে দেয়। যাঁদের শুষ্ক ও স্বাভাবিক ত্বক, তাঁরা এর সঙ্গে কাঁচা দুধ মিশিয়ে পুরো মুখটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। ত্বক তৈলাক্ত হলে কাঁচা দুধের পরিবর্তে জ্বাল দেওয়া দুধ মেশাতে হবে। শসার রসের সঙ্গে ময়দা বা চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন। এই মিশ্রণও ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
টোনিংয়ের জন্য বাঁধাকপি ও আলুর রস এক কাপ, আপেল সিডার ভিনেগার সিকি কাপ, কর্পূর আধা চা-চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে বরফ করে ফ্রিজে রেখে দিন। বাইরে থেকে ফিরে ত্বক পরিষ্কার করে তা মুখে ঘষে নিন। এই মিশ্রণ ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখতে হবে। একইভাবে ময়েশ্চারাইজারটিও ফ্রিজে সংগ্রহ করতে পারেন। পানি গরম হওয়ার পর তাতে ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) আধঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পানিটুকু ছেঁকে নিন। এর সঙ্গে আধা কাপ গোলাপ জল, দুই টেবিল চামচ গ্লিসারিন ও এক চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে হাত, পা ও মুখের ত্বকে লাগাতে পারেন। দুটো মিশ্রণই ফ্রিজে সাত দিন সংগ্রহ করা যাবে।
এই সময়ে ত্বক যখন বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে, তখন সপ্তাহে এক দিন প্যাক ব্যবহার করা ভালো। এক টেবিল চামচ লাউয়ের খোসা বাটা, এক চা-চামচ মধু, আধা চা-চামচ লেবুর রস ও বেসন মিশিয়ে ত্বকে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন। শুষ্ক ও স্বাভাবিক ত্বকের জন্য এটি ব্যবহার করা যাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য গ্রিন টি ও পুদিনা পাতা পেস্ট করে নিন। এবার এক চা-চামচ গ্রিন টি পেস্ট, এক চা-চামচ পুদিনা পাতা বাটা, এক চা-চামচ বেসন ভালোভাবে মিশিয়ে সপ্তাহে এক দিন পুরো শরীরে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন।
এই সময়টায় খুশকির সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। আবহাওয়ার কারণে চুল ড্যামেজ হয়। প্রতিদিন শ্যাম্পু দিলে ড্যামেজ কম হবে, তবে চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ ও শুষ্ক।
সব ধরনের চুলের উপযোগী এক প্যাক: একটি কলা ও পেঁয়াজ, এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ মসুর ডালের বেসন ভালো করে মিশিয়ে চুলে মেখে নিন। এই মিশ্রণ চুলে রেখে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
এখনো আবহাওয়ায় যেহেতু শীতল আমেজটা যায়নি, তাই গোসলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। সঙ্গে কিছু নিমপাতা মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক যেমন সুন্দর হবে, তেমনি দূর হবে ত্বকের নানা সমস্যা।