কক্সবাজারের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রত্যাবাসন প্রলম্বিত করতে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমার।এ অবস্থায় প্রত্যাবাসনের জন্য আরো রোহিঙ্গার তালিকা তৈরী করেছে বাংলাদেশ।সেই তালিকা নিয়েও মিয়ানমার কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
কক্সবাজারে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন উপকমিশনার শামসুদ্দোজা জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসন কাজ শুরুর জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। মিয়ানমারের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেলেই,প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের দুটি পয়েন্টে প্রত্যাবাসন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে একটি টেকনাফের কেরুনতলীতে। এখান থেকে নৌপথে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। অন্য প্রত্যাবাসন কেন্দ্রটি খোলা হয়েছে স্থলপথে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পয়েন্টে। এই দুটি পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় শেড তৈরির কাজও শেষ।
ওই প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে এই দুটি প্রত্যাবাসন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের এপারে তৈরি দুটি প্রত্যাবাসন কেন্দ্রের বিপরীতে মংডুর মার্চিচং এবং তং পাইও লেটওয়ে এলাকায় অনুরূপ দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। তবে তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের নামে নানা জটিলতায় প্রত্যাবাসান শুরুই করা যাচ্ছে না
শামসুদ্দোজা বলেন, প্রথম দফায় মাত্র ৮০৩২ রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হয়েছে। সেটি যাচাই-বাছাইয়ের নামে যদি এত সময় নেয়া হয়, তাহলে এতো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে কত সময়ের প্রয়োজন হবে সেই চিন্তা আমাদের উদ্বিগ্ন করে।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা আরো রোহিঙ্গার তালিকা প্রস্তুত করেছি। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পারছি না সেই তালিকা কার কাছে হস্তান্তর করব? রোহিঙ্গাদের তালিকা নিয়ে মিয়ানমারের কোনো আগ্রহই দেখছি না। নানা অজুহাতে মিয়ানমার বিষয়টি প্রলম্বিত করে চলেছে।
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সত্যিই আগ্রহী কি-না আমরা এখনো নিশ্চিত নই। এ বিষয়ে তারা আন্তরিক কি-না তার প্রমাণ দেখাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্য রেখায় (নো-ম্যানস ল্যান্ড) অবস্থান নেয়া ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চেয়েছিলাম। তাতেও মিয়ানমার বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। শূন্য রেখায় অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদেরও ভয়-ভীতির মাধ্যমে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চায় মিয়ানমার।
আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে যুক্ত করার জন্য মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নতুন একটি প্রস্তাবের কথা আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই সম্মতির কথা তাদের জানানো হয়েছে। নতুন করে এই প্রস্তাব রাখার কোনো মানে হয় না।
তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি না করে টালবাহনা করে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে মিয়ানমার কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দায়িত্ব হবে এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনেকে গোপনে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তাদের ওই স্থান ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল মিয়ানমার। সীমান্তের এই পয়েন্ট ছাড়াও উখিয়া-টেকনাফের অন্যান্য স্থান দিয়ে এখনো প্রতিদিন রোহিঙ্গা আসছে।
এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৬ রোহিঙ্গার নিবন্ধন করা হয়েছে। গত ৩ দিনে নিবন্ধন হয়েছে দুই হাজার ৩৩৬ রোহিঙ্গার।
অপরদিকে বুধবার রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাপড় ১০ বস্তা, লুঙ্গি ১০০টি, মেয়েদের থামি ৫০টি,শাড়ি ১০০টি, বেবি মিল্ক ৭৭ কেজি, ড্রাম প্লাষ্টিক ২০টি,ক্যারেট ২০টি, মগ ১০০টি,বালতি ১০০টি, জগ ২০টি, মশারী ২০টি বিতরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে উখিয়া ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের রেজিস্টার অনুযায়ী ৭টি সংগঠন ১২টি যানবাহন এরমাধ্যমে মোট ৬৭ দশমিক ২৫ টন শুকনো খাবার, ৬৫০ প্যাকেট শিশু খাবার, কাপড় ৬৮০ পিস,গৃহস্থালি সামগ্রী ১৬৮৫টি বিতরণ করেছে।