নাটোর প্রতিনিধি,স্বদেশ নিউজ ২৪.কমঃ দুই হাটুর উপর ভর দিয়ে এসে এক হাতে অধম্য মেধাবী জাহিদুল ইসলাম নাটোরের নলডাঙ্গা শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।দরিদ্র পরিবারের একমাত্র সন্তান জাহিদুল ইসলাম তৃর্তীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রাইসমিলের ফিতায় জড়ে দুই পায়ের হাঁটুর নিচে ও বাম হাতের সব হাঁড় গুড়া হয়ে যাওয়ায় তা কেটে ফেলতে হয়।শারীরিক প্রতিবদ্ধকতা জাহিদুল কে দমাতে পারেনি।সব বাধা জয় করে দুই পা এক হাত নেই তো হয়েছে সে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে উচ্চ বিদ্যালয় ভর্ত্তি হয়ে জিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৫০ গ্রেট ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ গ্রেট পেয়ে উর্ত্তীণ হয়।১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অদধ্য মেধাবী জাহিদুল ইসলাম মির্জাপুর দীঘা কলেজ থেকে দুই হাঁটুর উপর ভর দিয়ে এসে এক হাত দিয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
এইচএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শেষে কথা হয় জাহিদুল ইসলামের সাথে।উপজেলার মির্জাপুর দিঘী গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের ছেলে ও মির্জাপুর দীঘা আইডিয়াল কলেজ মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।তাদের বাড়ির ৫ শতক জমি ছাড়া মাঠে নিজের কোন জমি নাই বাবা আবুল কাসেম বেঁচে থাকাকালিন অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন।কিন্ত গত রমজান মাসে তার বাবা আবুল কাসেম মারা যায়।এর পর মা জাহেদা বেওয়াকে সংসারের হাল ধরতে হয়।জাহেদা বেওয়া ছেলে জাহিদুল কে লেখাপড়া শেখাতে অন্যের বাড়িতে কাজ নিয়েছে।প্রতিবন্ধী কার্ডের মাধ্যমে ভাতা ছাড়া আর কিছুই সহযোগিতা পাইনি জাহিদুল ্ইসলাম।সহপাঠী আলামিন,হৃদয়ের সহযোগিতায় দুই হাটুর উপর ভর দিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নলডাঙ্গা শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ২০৯ নম্বর রুমে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছে।তার অদম্য মেধাবী জাহিদুলের স্বপ্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে পাশ করে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়েজিত করে পরিবারের দুঃখ লাঘব করা।
স্বপ্নকে বাস্তব রুপ দিতে দুই পা ও এক হাত না থাকা শর্তেও জাহিদুল কে এক মর্হুতে দমাতে পাড়েনি।কিন্ত দরিদ্র পরিবারের পক্ষে জাহিদুলের এই স্বপ্ন পূরণ কি আদৌ সম্ভব হবে এ প্রশ্ন এখন সবার।জাহিদুলের সহপাঠী আলামিন জানান,আমি প্রতিদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে তার কলম,প্রবেশপত্র পৌছে দিয়ে আসি।জাহিদুল ইসলামের মা জাহেদা বেওয়া জানান,আমার তো আর কিছুই নেই আমার ছেলের মাথায় খুব মেধা আছে তাই আমার যত কষ্ট হোক আমি আমার ছেলের লেখাপড়ার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।মির্জাপুর দীঘা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ফরমান খান চৌধুরী জানান,জাহিদুল প্রতিদিন কলেজে আসতো এবং লেখাপড়ায় অনেক ভাল মেধাবী বটে।তার দুই পা ও এক হাত নেই তবুও লেখাপড়া চালাচ্ছে এজন্য আমাদের কলেজ ফি ভর্ত্তি,উপবৃত্তি পাইয়ে দেওয়াসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।আমি তার সাফল্য কামনা করি।
নলডাঙ্গা শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ ও এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব শাহ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান,দুই পা এক হাত নাই তবুও লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছা দেখে আমার ভাল লেগেছে।এ ধরনের অদধ্য মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পৃষ্টপোষাকতায় সমাজের ধনাঢ্য শ্রেণির হৃদয়বান মানুষকে এগিয়ে আসা উচিত।উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে অনেক প্রতিবন্ধী সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম তাদের একজন হতে চায়।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজা হাসান জানান,লেখাপড়ায় জাহিদুল জীবনযুদ্ধে অসাধারন কৃতিত্ব রাখছে।তাই উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।