দলীয় প্রধানের মুক্তি, ঐক্য ও আগামী জাতীয় নির্বাচনে সহায়ক সরকারের দাবিতে তৃণমূলে তীব্র আন্দোলনের বার্তা দিয়েছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচি, তৃণমূলে ঐক্য ফেরাতে ও দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হাইকমান্ড থেকে দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। আর এ জন্যেই ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা শাখা সফরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকে সমন্বয়ক করে কেন্দ্রীয় নেতাদের টিম করা হয়েছে। দলীয় প্রধানের মুক্তি বিলম্বিত হলে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে জুন-জুলাইয়ে বড় ধরনের একটা ধাক্কা দিতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের সিনিয়র ও দায়িত্বশীল এক নেতা স্বদেশ নিউজ২৪.কমকে জানান, এইরমধ্যে রাজপথের সর্বাত্মক আন্দোলনে তৃণমূলকে সব ধরণের বার্তা দেয়া হয়েছে। যে কোনো সময় যে কোনো কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় ঠিকে থাকলেও জনগণের ভালোবাসা পাবে না। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের বিকল্প নেই। যুগে যুগে মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এবারও মানুষ তাদের ভোটের অধিকার আদায় করবে।
তিনি বলেন, সরকার আগামীতে আরেকটি ৫ই জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করতে পারবে না। তাই নতুন কৌশল হিসেবে তারা (ক্ষমতাসীনরা) এখন বিরোধী নেত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে কেন্দ্র এবার তৃণমূলের মতামতের বাইরে যাবে না। জনসম্পৃক্ততা ও কঠোরতার দিক থেকে এবারের প্রতিবাদ অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ নিউজ২৪.কমকে জানান, দলের কর্মী-সমর্থকদের সেন্টিমেন্ট এখন তুঙ্গে। অপর দিকে কেন্দ্রের বার্তা জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে রাজপথেই খালেদার মুক্তির পথ বের করতে হবে। তাই ব্যাপক সংখ্যক জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে থাকবো। রাজপথেই হবে ফয়সালা। রাজপথের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে। সরকার পতনের মাধ্যমে ঘটবে সমাপ্তি। সারাদেশে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বাইরে নয় বলে দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওইসব নেতাদের।
তারা জানান, তৃণমূল বিএনপি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি সংগঠিত। সামনে হয়তো এমন সময় আসতে পারে যখন আমরা কেন্দ্র বা নেতার নির্দেশের দিকে তাকিয়ে থাকব না। জনসমর্থনকে শক্তিতে পরিণত করে আমরা যার যার অবস্থান থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করবো। তবে কেন্দ্র থেকে স্বেচ্ছায় কারাবরণসহ কড়া প্রতিবাদ জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কৌশলগত কারণে কড়া কর্মসূচি দেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই স্বতন্ত্র কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে তৃণমূলে। সারাদেশে নেতাকর্মীরা প্রতিবাদে রাজপথে নামবে, সরকার কঠোর হলে দেশের মানুষ কঠোরতর হবে। নেতারা এবার স্বেচ্ছায় কারাবরণের প্রস্তুতি নিয়েছে, স্বাভাবিকভাবে কর্মীরা আর ঘরে বসে থাকবে না।
এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ও পরে অনেক নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের খোঁজখবর নেয়ার জন্যই কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে যাচ্ছেন। আমরা সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছি। এক্ষেত্রে প্রশাসন বা সরকারের উসকানি কাম্য নয়। এবার সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে আবারো একতরফা নির্বাচনের ছক আঁটছে সরকার। তারা আবারো ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। কিন্তু এবার জনগণ তা করতে দেবে না। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু স্বদেশ নিউজ২৪.কমকে বলেন, তৃণমূল দিয়েই তো সব সময় বিএনপি। আাগা গোড়া তৃণমূল যত ত্যাগ শিকার করে এসেছে অন্য কোনো নেতৃত্ব ওতটা করেনি। সেহেতু নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চিন্তা করি। উপর থেকে নিচে নয়। তৃণমূলই সব। তৃণমূলের শক্তি আর চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আগামীতে পথ দেখাবে বিএনপিকে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক বৃদ্ধি, তাদের খোঁজখবর নেয়া ও দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে জেলা-উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পযর্ন্ত যাচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। এ গুলো হবে বিএনপির নিয়মিত সাংগঠনিক সফর মাত্র।