হারলেও শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছিল বিসিবি উত্তরাঞ্চলের। সেক্ষেত্রে বড় ব্যবধানে হার এড়ানোর দরকার ছিল তাদের। তবে আসরের শেষ রাউন্ডে ভেলকি দেখালো প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল। বিসিবি উত্তরাঞ্চলকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুললো অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণাঞ্চলই। দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক একমাত্র প্রথম শ্রেণির আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) শেষ রাউন্ডে গতকাল বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ইনিংস ও ৬৫ রানে জয় কুড়ায় প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল। এতে ম্যাচের বোনাসসহ ১৮ পয়েন্ট যোগ হয় দক্ষিণাঞ্চলের একাউন্টে।
আর আসরের ৬ ম্যাচে ৫ ড্র ও একমাত্র জয়ে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে নিশ্চিত হয় শিরোপাও। ষষ্ঠ রাউন্ডে হার শেষে গতবারের চ্যাম্পিয়ন উত্তরাঞ্চলের সংগ্রহ ৬ ম্যাচে দুই জয়ে ৬২ পয়েন্ট। বল হাতে আরো একবার ক্রিজে আলো ছড়ালেন আবদুর রাজ্জাক। ম্যাচে তার শিকার ১০৪ রানে ১১ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের এ বাঁ-হাতি স্পিনার। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রানে নেন ৬ উইকেট।
এতে ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে এ অভিজ্ঞ স্পিনারের হাতে। শেষ রাউন্ডে খেলতে নামার আগে পাঁচ ম্যাচে উত্তরাঞ্চলের ৬০ ও দক্ষিণাঞ্চলের ঝুলিতে ছিল ৪৭ পয়েন্ট। খুলনার শেষ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম দিনে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন দক্ষিণাঞ্চল অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। আর প্রথম ইনিংসে ১৮৭ রানে গুঁড়িয়ে যায় উত্তরাঞ্চল। জবাবে ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে ৩৬৫/৮ সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণাঞ্চল। আর দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তরাঞ্চল দেখায় আরো ঠুনকো ব্যাটিং। গতকাল মাত্র ৪৫.২ ওভারে ১১৫ রানে গুঁড়িয়ে যায় উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় ইনিংস। খুলনায় নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে দলীয় ৬৫ রানে ৭ উইকেট খোয়ায় উত্তরাঞ্চল। তবে আট নম্বরে ব্যাট হাতে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। উত্তরাঞ্চলের ইনিংসে ব্যক্তিগত এক অঙ্কের রানে সাজঘরে ফেরেন ৭ ব্যাটসম্যান। আসরের শেষ রাউন্ডে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে খেলতে নামেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম ইনিংসে ১২ ওভারের স্পেলে ৪৯ রানের এক উইকেট নেন মাশরাফি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তেমন সুযোগ পাননি দেশসেরা এ পেসার। ৪ ওভারে ২৪ রানে উইকেটশূন্য থাকেন মাশরাফি। বিনা উইকেটে ৩২ রান নিয়ে গতকাল ম্যাচের তৃতীয় দিনের মাত্র দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় উত্তরাঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের ওপেনার জুনাইদ সিদ্দিকীকে সাজঘরে ফিরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিজয়ের মঞ্চ তৈরি করেন রাজ্জাক। ইনিংসের শেষ ৭০ রানে দশ উইকেট খোয়ায় উত্তরাঞ্চল। বিসিবি উত্তরাঞ্চলের ১০ উইকেটই ভাগাভাগি করেন দক্ষিণাঞ্চলের বাঁ-হাতি বোলাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ ওভারের স্পেলে ৩৪ রানে তিন উইকেট নেন দক্ষিণাঞ্চলের বাঁ-হাতি স্পিনার সাকলাইন সজীব। বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে দক্ষিণাঞ্চলের এটি তৃতীয় শিরোপা। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৫তে টানা দুই মৌসুম শিরোপার গৌরব কুড়ায় তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন)
টস: দক্ষিণাঞ্চল, ফিল্ডিং
উত্তরাঞ্চল: ১৮৭ ও ১১৫ (শুভ ৪১, মিজানুর ২০, রাজ্জাক ৬/৪৮, সজীব ৩/৩৪)।
দক্ষিণাঞ্চল প্রথম ইনিংস: ৩৬৫/৮ ডি. (ইমরুল ১০৭, ফরহাদ রেজা ৫/৫৭)।
ফল: দক্ষিণাঞ্চল ইনিংস ও ৬৫ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: আবদুর রাজ্জাক (দক্ষিণাঞ্চল)
নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন রাজ্জাক
বল হাতে নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন আবদুর রাজ্জাক। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন আবদুর রাজ্জাক। আর ইনিংসে পাঁচ উইকেটের কৃতিত্ব দেখালেন ৩৪ বার। বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের শেষ রাউন্ডের প্রথম ইনিংসে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে বল হাতে পাঁচ উইকেট নেন দক্ষিণাঞ্চলের এ বাঁ-হাতি স্পিনার। এতে অপর বাঁ-হাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এনামুল হক জুনিয়র ইনিংসে ৫ উইকেটের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ৩২ বার। আর দীর্ঘ বিরতিতে বাংলাদেশ টেস্ট দলে ফিরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেও নৈপুণ্য দেখানো ৩৬ বছর বয়সী আবদুর রাজ্জাক গতকাল উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৬ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের একমাত্র বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেটের কীর্তি রাজ্জাকেরই।
প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে রাজ্জাক
ম্যাচ উই. সেরা গড় ৫ উই.
১১৮ ৫৩৮ ৯/৮৪ ২৮.৮৪ ৩৪
এবার বোলার ইমরুল
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দক্ষিণাঞ্চলকে জয়ের পথ দেখান ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। আর গতকাল বিরল ঘটনায় ইমরুল বল হাতেও দেখান নৈপুণ্য। ৬৫ রানে প্রতিপক্ষের ৭ উইকেট তুলে নিয়ে তখন উৎসবের অপেক্ষায় দক্ষিণাঞ্চল। তবে ৯ নম্বরে ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখান ফরহাদ রেজা। রানের খাতা না খুলেই একে একে ২৯ বল মোকাবিলা করেন তিনি। ৩৯তম ওভারে ইমরুল কায়েসের হাতে বল তুলে দেন দক্ষিণাঞ্চল অধিনায়ক সোহান। আর ইমরুলের অকেশনাল বোলিংয়ের বিপক্ষে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রেজা। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসকে উইকেটরক্ষকের গ্লাভস হাতেও খেলতে দেখা গেছে আগে। তবে ৯৯ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে তাকে বল করতে দেখা গেছে কালেভদ্রে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তার তৃতীয় শিকার। গতকাল ২ ওভারের স্পেলে ৬ রানে এক উইকেট নেন ইমরুল। এটা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং নৈপুণ্যও।