হঠাৎ করেই ক্রিকেটে ছড়িয়ে পড়েছে নাগিন নাচ। নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের ক্রিকেটারদেরও নাগিনের ভঙ্গিতে উদযাপন করতে দেখা যায়। তবে ব্যাটে বলের লড়াইয়ে এমন উদযাপনের শুরুটা হয়েছে বাংলাদেশের স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর হাত ধরে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ঘরোয়া আসরে তিনি শুরু করেছিলেন অদ্ভুত এ উদযাপন। যা ক্রমেই ছড়িয়ে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। তবে এখন এটি সীমাবদ্ধ ক্রিকেটের সীমিত ওভারেই।তবে অপু বসে নেই। নিজেকে প্রস্তুত করছেন ওয়ানডে ও টেস্টের জন্য। সুযোগ পেলে প্রতিপক্ষের উইকেট নিয়ে নাগিন নাচে উল্লাসে মাততে চান তিনি। সামনেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এরপরই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তিন ফরমেটে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে যাবে টাইগাররা। অপু এবার অপেক্ষায় ওয়ানডে অভিষেকের। তার সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। তার কথপোকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াই কঠিন মনে হচ্ছে কিনা?
অপু: না, কোনো দলকেই সহজ মনে করে মাঠে নামি না আমরা। ওরা এ পর্যন্ত এসেছে ভালো খেলেই। আর টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়েও রয়েছে আমাদের উপরে। তবে ভয়ও পাচ্ছি না। আমাদের সেরাটা দিতে পারলে অবশ্যই ওদের চেয়ে ভালো খেলবো আমরা।
প্রশ্ন: একদিকে সাকিব আল হাসান অন্যদিকে রশিদ খান, কাকে এগিয়ে রাখবেন?
অপু: অবশ্যই সাকিব ভাইকে এগিয়ে রাখবো। সে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। হ্যাঁ রশিদ খান ভালো লেগ স্পিনার। ওদের আরো একজন ভালো লেগি এসেছে। বলতে গেলে লেগ স্পিন দিয়ে আমাদের কাবু করতে চাইবে। কিন্তু আমাদের বাঁ-হাতি স্পিন পরীক্ষিত। সাকিব ভাই বলেছেন যদি আমরা দু’জন খেলি তাহলে ওদের চেপে ধরতে পারবো। এছাড়াও ওদের লেগ স্পিনারদের সামলাতে আমাদের ব্যাটসম্যানরাও প্রস্তুত হচ্ছে।
প্রশ্ন: ৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩ উইকেটে নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অপু: ভালো করতে পারিনি এখনো। উইকেট আরো বেশি নিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আমি রান কম দিতেই বেশি পছন্দ করি। ৫০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেয়ার চেয়ে লক্ষ্য থাকে যত কম রান দেয়া যায়। এতে করে ২০ ওভারে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ বাড়ে। সেই চাপে আমাকে উইকেট না দিলেও অন্য কাউকে দিয়ে দেয়।
প্রশ্ন: আপনার বোলিংয়ের বিশেষত্ব কী?
অপু: আমি আসলে মাঠে বোলিংটা করি ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা বুঝে। আমি খুব দ্রুত রিড করার চেষ্টা করি ব্যাটসম্যান কি ধরনের শট খেলতে চায় তখন আমি তার বিপরীত কিছু করার চেষ্টা করি। এছাড়াও আমার বল ক্রিজে পড়ে অনেকটাই নিচু হয়ে যায়। যেটিতে অনেক ব্যাটসম্যানেরই খেলতে সমস্যা হয়।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টির তুলনায় ওয়ানডে ও টেস্টকে চ্যালেঞ্জিং মনে করেন?
অপু: এটি সত্যি কথা, আমি টি-টোয়েন্টিতে ভালো করি। চার ওভারে চেষ্টা থাকে দলকে সাপোর্ট দেয়ার। আর ওয়ানডেতে আমার বোলিং ভালো হয় বলেই মনে করি। কিছু সমস্যা ছিল সেগুলো দূর করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু টেস্টে আরো একটু সময় লাগবে বলেই মনে করি। টেস্ট বোলিংটা একেবারেই ব্যতিক্রম। তাই কিছু কিছু ঘাটতি আছে সেগুলো দূর করেই এ ফরমেটে খেলতে চাই।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টির নাগিন নাচ অন্য ফরমেটেও দেখাতে চান কিনা?
অপু: হা. হা.. হা, কেন নয়, আমি তো উইকেট নিয়ে এ নাগিন নাচ ওয়ানডে ও টেস্ট সব ফরমেটেই ছড়িয়ে দিতে চাই। তবে এটিও চিন্তা করি যে এ নাগিন নাচের উদযাপনটা যেন বড় কোনো কিছুর পরই করতে পারি। আপাতত সামনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি নিয়ে মনোযোগী। সেখানে সুযোগ পেলে এভাবেই যেন উদযাপন করতে পারি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর নিয়ে ভাববো।
প্রশ্ন: ট্রেনাররা বলেন আপনি প্রাকৃতিক ভাবেই বেশি ফিট?
অপু: আমি গ্রামের ছেলে। যখন খেলা শুরু করি এত জিমের সুবিধাও ছিল না। তাই নদী ও পুকুরে সাঁতার কেটেছি, বন্ধুদের নিয়ে রাস্তায় সাইকেল চালাই, ফুটবল খেলে। মাঠে সুযোগ পেলেই দৌড়াই। এভাবেই নিচেকে ফিট রেখেছি। এখন আধুনিক যন্ত্র দিয়ে জিম করার পরও আমি অবসরে বসে থাকি না। বাড়িতে গেলেই পুকুরে বা নদীতে সাঁতার কাটি। মাঠে খেলতে চলে যাই। জিমের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভাবেও আমি ফিটনেস ধরে রাখতে বেশি কাজ করি।