সাকিবদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে যে পাঁচে

সানরাইজার্সের ভাগ্য আজ নির্ধারিত হতে পারে রশিদের স্পেলে। ছবি: এএফপিমাত্র এক দিন। এরপরই জানা যাবে এবারের আইপিএল জিতছে কারা। প্রত্যাবর্তনের বছরেই বহুপ্রার্থিত শিরোপা নিয়ে উৎসবে মাতবে চেন্নাই সুপার কিংস নাকি ট্রফিটা যাবে অন্য কারও হাতে? এই ‘অন্য’টা কে, সেটা জানা যায়নি এখনো। এবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার একদম ফাইনালের আগের দিন পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আজই সে কোয়ালিফায়ার। ফাইনালের আগে অলিখিত সেমিফাইনালে সাকিব আল হাসানের সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মুখোমুখি তাঁরই সাবেক দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। এই সেমিফাইনালে এগিয়ে কোন দল?

গত দুই সপ্তাহ আইপিএলে নজর না থাকলে যে কেউ পরিষ্কার এগিয়ে রাখবে হায়দরাবাদকে। মূল অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের অনুপস্থিতি বুঝতে না দিয়ে উড়ন্ত সূচনা করেছে দলটি। কিন্তু আজ কোয়ালিফায়ারে কোনোভাবেই ফেবারিট বলা যাবে না হায়দরাবাদকে। আজ দুই দলই আছে সমতায়। পাঁচটি বিষয় অবশ্য পাল্লাটা যেকোনো এক দলের দিকে হেলিয়ে দেবে।

উইকেট
এবার স্পিননির্ভর দল বানিয়েছে কলকাতা। এ কারণে পুরো মৌসুমে ইডেন গার্ডেনের উইকেট শুকনো রাখা হয়েছে। প্লে-অফের জন্য উইকেট বানানোর দায়িত্ব অবশ্য বোর্ডের নিরপেক্ষ কিউরেটর পেয়েছেন। তিনি উইকেটে পানিও দিচ্ছেন বেশ করে। কিন্তু এত দিনের তৃষ্ণার্ত উইকেটের জন্য এই শেষ চেষ্টায় খুব একটা আসবে যাবে না। উইকেটের চরিত্রও তাই বদলানোর সুযোগ নেই। বল এখানে গ্রিপ করবেই। দুই ধরনের গতিও দেখা যেতে পারে। এখন দেখা যাক, নারাইন-যাদব-চাওলার বৈচিত্র্যপূর্ণ স্পিন আক্রমণ বেশি কার্যকর হয়, নাকি রশিদ-সাকিবের নিয়ন্ত্রিত স্পিন।

ব্যাটিং-ভরসা
কলকাতার পাঁচজন ব্যাটসম্যান তিন শ বা এর বেশি রান নিয়েছেন। দিনেশ কার্তিক তো ক্যারিয়ার-সেরা ফর্মে আছেন (৪৯০)। ক্রিস লিন, রবিন উথাপ্পা, সুনীল নারাইন কিংবা আন্দ্রে রাসেল—সবাই রান তোলার কাজটা ঝড় তুলেই করেন। আর এদিকে অনেক অনেক পিছিয়ে হায়দরাবাদ। প্রশ্নাতীতভাবে কেন উইলিয়ামসন আইপিএলে নিজের সেরা ফর্মে আছেন। ১৪৩.৬০ স্ট্রাইক রেটে ৬৮৫ রান রীতিমতো অবিশ্বাস্য। তাঁকে নিয়মিত যোগ্য সংগত দিয়েছেন শিখর ধাওয়ান (৪৩৭)। কিন্তু টপ অর্ডারের এ দুজন বাদে এ দলে অন্য কেউই ব্যাট হাতে ভরসা হতে পারেননি। ঝড় তুলতে যেমন কাউকে দেখা যায়নি, তেমনি বড় রানও করেননি কেউ। গত কয়েক ম্যাচে উইলিয়ামসন ফিরে যেতেই ধস নেমেছে হায়দরাবাদের ইনিংসে। আজও তেমন কিছু হতে পারে। কলকাতা এদিক থেকে অনেক নিশ্চিন্ত। তাদের পাঁচজনের মধ্যে মাত্র দুজন টিকে গেলেই চলবে।

দুই দলের ভিন্ন যাত্রা
প্রথম পর্বের এক-তৃতীয়াংশ পেরোনোর আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে হায়দরাবাদ। এতেই হয়তো কাল হয়েছে দলটির। দলের সেরা ফর্ম একটু আগেভাগেই পেয়ে গেছে তারা। এখন পড়তির দিকে দলটির ফর্ম। টানা চার ম্যাচে হেরেছে হায়দরাবাদ। এর মাঝে প্রথম কোয়ালিফায়ারে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হারটা দাগা দেবে সবচেয়ে বেশি। শেষ দিকে উইলিয়ামসনের ভুল সিদ্ধান্তে হেরে না গেলে আজকের এই অলিখিত সেমিফাইনালে খেলতে হতো না তাদের।
কলকাতার স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পাবেন উইকেটে। ছবি: এএফপি
উল্টো দিকেই আছে কলকাতা। প্লে-অফ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগলেও শেষ দিকে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে দুবারের চ্যাম্পিয়ন। টানা চার ম্যাচ জিতেছে তারা। এলিমিনেটরেও পুরোটা সময় পিছিয়ে থেকেও ঠিকই ম্যাচ বের করে নিয়েছে। ফলে আত্মবিশ্বাসে আজ এগিয়ে থাকবে কলকাতা। উইনিং মোমেন্টাম বলে একটা কথা তো আছেই।

বোলিং
এবারের আইপিএলে সেরা বোলিং লাইনআপ নিঃসন্দেহে হায়দরাবাদের। শুরুতে বেশ কয়েকটি কঠিন ম্যাচ শুধু বোলারদের কাঁধে চড়ে পার হয়েছে দলটি। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে ততই বোলিং ধার হারাচ্ছে। মূল বোলার ভুবনেশ্বর কুমারের মাত্র ৯ উইকেট পাওয়াটা ভাবনায় ফেলছে। এ ছাড়া ডেথ ওভারেও দক্ষতা হারাচ্ছে দল। গত পাঁচ ম্যাচে হায়দরাবাদের ইকোনমি ডেথ ওভারে ১১.৮৭। টুর্নামেন্টের প্রথম অংশে এটা ছিল ৭.৪৯! ভুবনেশ্বর (৮.২ থেকে ১৫.১), সিদ্ধার্থ কৌল (৬.৫ থেকে ৯.৯) ও সাকিব (৭ থেকে ১৩.৫) সবচেয়ে বেশি ভুগছেন।

কলকাতার বোলিং যে খুব ভালো অবস্থায় আছে তা নয়। তবে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে এই বোলাররাই প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ জিতিয়ে এনেছে। এটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে তাদের।

পাওয়ার হিটিং
এদিক থেকে পরিষ্কার এগিয়ে কলকাতা। ইনিংসের শুরুতে যদি ক্রিস লিন মারতে না পারেন, তবে অন্যদিকে সুনীল নারাইন আছেন। নারাইন না পারলে কার্তিক আছেন। এতেও না হলে রাসেল আছেন, এতেও সন্তুষ্ট না হলে কুলদীপ আছেন! একটি দলের ছয়জনই ব্যর্থ হওয়ার আশা করাটা বাড়াবাড়ি।

অন্যদিকে হায়দরাবাদের ভরসা শুধু শিখর ধাওয়ান। ইনিংসের শুরুতে ধাওয়ান ঝড় তুলতে না পারলেই বিপাকে পড়ে যাবে দল। উইলিয়ামসন প্রায় দেড় শ স্ট্রাইক রেটে রান তুললেও নেমেই ঝড় তোলার জন্য তাঁর দিকে তাকানো যাবে না। ১১ কোটি রুপির মনীশ পান্ডে এখনো কিছু করতে পারেননি। বেন স্টোকসকে টানা ছয় মারার স্মৃতি সম্ভবত কার্লোস ব্রাফেট ভুলেই গেছেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *