কুমিল্লায় হত্যা, নাশকতা ও নড়াইলের মানহানির মামলায় জামিন চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনের আদেশ ঘোষণা করা হবে রবিবার।
২৭ মে, রবিবার বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকার প্রথম দিকে রাখা হয়েছে এ মামলাগুলো।
খালেদা জিয়ার জামিন বিবেচনা করতে আদালতে অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন । তিনি খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করতে অনুরোধ জানিয়েছেন আদালতে। জামিনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন অনেক। তার মধ্যে অন্যতম হলো খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়স্ক মহিলা, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে নাম নেই। তবে নড়াইলের মামলায় আছে।
আদালতে খন্দকার মাহবুব আরও বলেছেন, দায়রা আদালতের পরিবর্তে হাইকোর্টজামিন দিতে পারেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি আদালতে বলেছেন, খালেদা জিয়া হুকুমের আসামি।
এসব মামলার ব্যাকগ্রাউন্ড টেনে মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নির্দেশেই কুমিল্লায় নাশকতা করা হয়েছে। মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এসব দায় খালেদা জিয়া এড়াতে পারেন না। কাজেই তাকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি আদালতে আরও বলেছেন দায়রা আদালতে মামালাগুলোর জামিন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। সেখানে জামিন আবেদনগুলো বিচারাধীন। কাজেই খালেদা জিয়াকে জামিন নিতে দায়রা আদালতে যেতে হবে, হাইকোর্টে নয়।’
২৪ মে, বৃহস্পতিবার বিকেলে এসব যুক্তি আদালতে তুলে ধরেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা। পরে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করে। গত ২০ মে কুমিল্লা ও নড়াইলের তিন মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
গত ১৬ মে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন বহাল রাখে আপিল বিভাগ। তবে তার কারামুক্তির জন্য আরও ছয়টি মামলায় জামিন নিতে হবে। পাশাপাশি চারটি মামলায় হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের প্রয়োজন রয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা গত বৃহস্পতিবার ঢাকার পৃথক আাদালতে দুটি মানহানির মামলায় জামিনের আবেদন জানান। এ ছাড়া চারটি মামলায় হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন জানান। আদালত শুধু নাইকো মামলায় হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহার করেছেন। বাকি আবেদনগুলোর বিষয়ে পরে আদেশ দেওয়া হবে উল্লেখ করে দিন ধার্য করেছেন।
অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ফলে সাতজন যাত্রীর মৃত্যু এবং আরও ২৫/২৬ জন গুরুতর আহতের একটি মামলা হয়। এ মামলার অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার নাম আসে।
এ ছাড়া একই বছরের ২৫ জানুয়ারি নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায়ও খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়। বিচার চলাকালে এ দুটি মামলায় গত ২৩ এপ্রিল জামিন চেয়ে আবেদন জানালে আগামী ৭ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। এ তারিখ এগিয়ে আনার আবেদন জানালে আদালত তাও খারিজ করে দেন।
এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইলে মানহানির মামলা করে স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রায়হান ফারুকি ইমাম। মামলাটি নড়াইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে তার আইনজীবীরা আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক জামিন শুনানির জন্য আগামী ২৫ মে দিন ধার্য রেখেছেন।
এ অবস্থায় বিচারিক আদালতে বিলম্বে শুনানির দিন ধার্য থাকায় তিনটি মামলায় জামিন আবেদন দায়েরের জন্য রবিবার সকালে হাইকোর্টে অনুমতি চান খালেদার আইনজীবীরা। অনুমতি পেয়ে জামিনের আবেদন দাখিল করেন।