(স্বদেশ নিউজ ২৪.কম) ভারতীয় দলিত সম্প্রদায়ের অবিসংবাদিত নেতা ড. ভিমরাও আম্বেদকর বলেছেন, ‘অস্পৃশ্যতা দাসত্বের চেয়ে খারাপ।’
ভারতে বর্তমানে প্রায় ১৪ কোটি মুসলিম নাগরিক বাস করে। এদের মধ্যে বড় একটা অংশই হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত। আর দেশটিতে হিন্দু বর্ণভেদ প্রথার কারণে দলিতদেরকে সমাজের একেবারে ‘নীচু জাত’ হিসেবে বিবেচনা করে অত্যন্ত ঘৃণা ও উপেক্ষার চোখে দেখা হয়। কিন্তু শুধু হিন্দু সম্প্রদায়েই নয়, ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যেও যে ‘অস্পৃশ্য’ বা ‘দলিত’ মুসলিম আছে, সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছ।
২০১৪ এর অক্টোবর থেকে ২০১৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের উত্তর প্রদেশে গবেষক প্রশান্ত কে ত্রিবেদী, শ্রীনিবাস গোলি, ফাহিমুদ্দিন ও সুরিন্দর কুমার মিলে এ সংক্রান্ত গবেষণা চালান। দেশটির ১৪টি জেলার মোট সাত হাজারের বেশি বাড়িতে গিয়ে এ গবেষণা চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তারা।
গবেষণা অনুযায়ী, এলাকার ধনী প্রতিবেশীদের বাড়িতে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে দলিত মুসলিমদের নিমন্ত্রণ করা হয় না।
কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে দলিত মুসলিমদের নিমন্ত্রণ করা হলেও তাদেরকে বসানো হয় আলাদা এবং তাদেরকে খাবার পরিবেশন করা হয় উচ্চবর্ণের মুসলিমদের খাওয়া শেষে। এমনকি কোনো-কোনো জায়গায় দলিত মুসলিমদেরকে ভিন্ন ধরনের প্লেটে খাবার পরিবেশন করা হয় বলেও উল্লেখ করেছেন গবেষণায় অংশ নেওয়া অনেক দলিত।
গবেষণায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে অন্তত ৮ ভাগ দলিত মুসলিম জানিয়েছেন, তাদের শিশু সন্তানদেরকেও উচ্চবর্ণের শিশুদের চেয়ে আলাদা সারিতে বসানো হয়। এমনকি স্কুলেও দুপুরের খাবার গ্রহণের সময় তাদের সন্তানেরা আলাদা সারিতেই বসে।
উচ্চবর্ণের মুসলিমদের জন্য যে গোরস্থান রয়েছে, সেখানে দলিতদের সাধারণত কবর দিতে দেওয়া হয় না। তাদের জন্য রয়েছে আলাদা কবরস্থান। আর যদি কোনো দলিত কাউকে উচ্চবর্ণের কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। তাহলে সেই লাশের জায়গা হয় একেবারে কোনো একটা কোণায়।
বেশিরভাগ মুসলিম একই মসজিদে নামাজ আদায় করলেও দলিত মুসলিমদের অনেকেই বলছেন যে তারা প্রায় সময়ই বোধ করেন তাদের প্রতি অন্যদের এক ধরনের উপেক্ষা বা বৈষম্য। সাধারণত নিচু জাতের সব কাজ করাই দলিত মুসলিমদের কাজ বলেও মনে করা হয়।
এ গবেষণায় অংশ নেওয়া অন্তত ১৩ ভাগ দলিত মুসলিম জানিয়েছে, উচ্চ বর্ণের কোনো মুসলমানের বাড়িতে যদি তাদেরকে খাবার বা পানি দেওয়া হয় তাহলে তা পরিবেশন করা হয় ভিন্ন পাত্রে। এ ছাড়া মুসলিম দলিতদেরকে ভিন্ন পাত্রে খাবার ও পানি পরিবেশন করার প্রবণতা হিন্দুদের মধ্যে আরও প্রকট। যার পরিমাণ শতকরা ৪৬ ভাগ।
দলিত মুসলিমদের সাথে উচ্চবর্ণের মুসলিম ও হিন্দু কোনো সম্প্রদায়ের মানুষই মিশতে চায় না এবং তারা দলিত মুসলিমদের সাথে এক ধরনের দূরত্ব বজায় রেখে চলে। শুধু ভারতীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় নয় এমনকি শিখদের মধ্যেও বর্ণ-ভেদ দেখা যায়। তবে, পার্সিরা কিছুটা ব্যতিক্রম।
এই গবেষণার পর গবেষক প্রশান্ত কে ত্রিবেদী জানিয়েছেন, দলিত হিন্দুদের মতোই দলিত মুসলিম ও খ্রিষ্টানদেরকেও আলাদাভাবে কিছু সামাজিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
তবে, এই গবেষণায় যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে ভারতে কেউ হয়তো তার জাত পরিত্যাগ করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু সে জাতকে ছাড়তে চাইলেও জাত তাকে ছাড়বে না।