বিনিয়োগের জন্য অর্থায়নের উৎস একটি বড় সমস্যা। বড় ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ দরকার। একটি প্রকল্প যদি পাঁচ থেকে সাত বছরের বেশি সময়ের জন্য হয়, সেখানে কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে না। তারা সাধারণত দুই বছর পরই টাকা ফেরত চাওয়া শুরু করে। অথচ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা বন্দরের মতো অনেক প্রকল্প এখন আসছে, যেগুলো নির্মাণ শেষ করতেই পাঁচ-সাত বছর লেগে যায়।
এসব ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ বছর মেয়াদি ঋণ দরকার। আগে দেশে শিল্পঋণ সংস্থা ছিল। এখন কিন্তু আমাদের কাছে বিকল্প খুব একটা নেই। আমরা বিদেশ থেকে বাণিজ্যিক ঋণ নিচ্ছি। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। তারা এ দেশে বিনিয়োগের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সুদের হারও অন্য দেশের তুলনায় বেশি নেয়। তারা এ দেশে আসে লাভ বেশি বলেই। এরপরও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য আমরা এই বিকল্পটির ওপর নির্ভর করছি। বাংলাদেশে ঋণ দেয় পাঁচ বছরের জন্য, সেটারও সুদের হার ১২-১৩ শতাংশ। স্বল্প সময়ে পরিশোধ করতে হয় বলে এসব ঋণ কোম্পানির নগদ অর্থের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করে।
ব্যবসায়ের পরিবেশের উন্নতির জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সাধুবাদ। তবে উচ্চপর্যায়ে আমরা যে সহায়ক মনোভাব দেখি, নিচের পর্যায়ে তা পাই না। এ জন্য সরকারের উদ্যোগের সুফল সেভাবে মিলছে না। প্রশাসনের নিচের পর্যায়ে আটকে যাচ্ছে। এ জন্য সমন্বয় প্রয়োজন।
গ্যাস-বিদ্যুতের দামের কারণে কিছু কিছু খাতে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। আমরা চাই সেটা সহনীয় হোক এবং কয়েক বছরে সমন্বয় করা হোক। যাতে একসঙ্গে চাপ তৈরি না হয়।
এটি নির্বাচনের বছর। যেকোনো নির্বাচনের বছর একটি অনিশ্চয়তা থেকে যায়। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, তৃতীয় বিশ্বের সব দেশেই এমন প্রবণতা দেখা যায়। এ বছর বিনিয়োগ পিছিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। যেসব বিনিয়োগ প্রকল্প চলছে, সেটা চলবে। তবে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা চাইবেন পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, স্বস্তি কতটা তা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে। নির্বাচন শেষে আস্থার জায়গা ফিরলে আবার বিনিয়োগ হবে।
আমরা চাই কারখানা চলুক, পণ্য পরিবহন হোক, বিক্রি হোক। নির্বাচনের বছর ব্যবসায়ের পরিবেশ বিঘ্নিত না হোক। কারণ গত কয়েক বছর ভালো পরিবেশ থাকায় অর্থনীতি এগিয়েছে। তবে নির্বাচনের বছর সেটা অনেক সময় হয় না। আমরা ব্যবসায়ী মহল থেকে পুরোপুরি অরাজনৈতিক অবস্থান থেকে বলছি, আমরা চাইব সব দলের অংশগ্রহণে যাতে নির্বাচনটা হয় এবং সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যাতে ঠিকমতো চলতে পারে।