বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, মাদকব্যবসায়ী নিধনের নামে অনেক নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি একরামের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, এই বক্তব্যের অর্থ কী। একরামের এই ঘটনা হত্যা না বন্দুকযুদ্ধ সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই হত্যাকা-ের বিচার হতে হবে। দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে এ ধরণের আইনবহির্ভূত হত্যা হতে পারে না। গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরণের হত্যা অমানবিক। আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার কনফারেন্স লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র : শহীদ জিয়া এবং আজকের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনাসভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম -৭১ নামের একটি সংগঠন। নোমান বলেন, মাদকব্যবসার বিরুদ্ধে দেশের সব মানুষ আছে। যারা মাদকব্যবসা করে তারা ছাড়া সবাই এর বিরুদ্ধে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক উদ্দেশে মাদকব্যবসায়ীদের নিধন চলছে এটা সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। এসব বিষয়ে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ অথবা সম পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা প্রয়োজন। এই তদন্ত ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অথবা প্রশাসন দিয়ে যেটা করা হবে সেটাকে আইওয়াশ বলা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এতে লাভ হবে না। যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা কোনো দিন সুবিচার পাবে না, যদি বিচার বিভাগীয় তদন্ত না হয়। সেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত উচ্চ পর্যায়ের আদালতের বিচারক দিয়ে করতে হবে। সেটা নিন্ম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে করলে চলবে না। সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, দেশে এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে। সংবিধান থেকে মৌলিক কিছু বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে যে নির্বাচন হয়েছিল সেগুলো মন্দের ভাল ছিল। কাজেই আজকে দেশে নির্বাচন করতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ষড়যন্ত্রের নির্বাচন করতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ এবার অতীতের আন্দোলনের মতো ঠেকিয়ে দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমি মনে করি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সব সময় জয়লাভ করেছে। আর যারা অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করেছে তাদের সেই শক্তি কোনো না কোনো সময় পরাজিত হয়েছে। যেমন আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, এরশাদ পরাজিত হয়েছে। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল, টাকা ছিল, গু-া ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা জনতার হাতে নিগৃহিত হয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা মনে করি আজকে অনেকে সংকিত তারা মনে করেন এই আন্দোলন সফল হবে কি না। তাদের তো জেল খানা আছে। তাদের অস্ত্র, গু-া বাহিনী আছে, অর্থ আছে। কিন্তু এই অস্ত্র-অর্থ-গু-া কোনোটা কাজে আসে না, যখন জনতার রুদ্ররোশে প্রাসাদ আক্রমন হয়। যখন জনতার রুদ্ররোশ শাসকগোষ্ঠীকে আক্রমন করে তখন আর তাদের যাওয়ার জায়গা থাকে না। কাজেই এখন আওয়ামী লীগ যত অস্ত্র ব্যবহার করুক, যতই মাদকের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করুক, আমাদের কারাগারে নিয়ে যাক, তাতে আওয়ামী লীগ রক্ষা পাবে না। কারণ নিজেদের কর্মকা- তাদের যে পথে নিয়ে যাচ্ছে এই পথ থেকে তারা ফিরতে পারবে না। নোমান বলেন, আমরা আন্দোলন বেগবান করবো। আন্দোলন বেগবান করলেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। কোনো আলোচনা-গোলটেবিল বৈঠক খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করবে না। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে তারা নির্বাচনে জয়যুক্ত হতে চায়। খালেদা জিয়াকে তারা বড় বেশি ভয় পায়। কারণ মাছ যেমন পানি ছাড়া থাকতে পারে না, তেমনি জনগণ ছাড়া খালেদা জিয়া বাঁচতে পারবে না। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, খালেদা ইয়াসমিন, জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার প্রমুখ।