সামনে ঈদুল ফিতর। ছুটি কাটাতে যদি ঢাকার বাইরে যেতে চান, আর আপনার পছন্দের তালিকায় যদি থাকে সমুদ্র ও দ্বীপ এমনকি অাপুনি যদি ঘন বন, লোকালয়ের কোলাহল থেকে দূরে, নানা বণ্যপ্রাণির অবাধ বিচরণের মাঝে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য পেতে চান তবে আপনার জন্য উপযুক্ত জায়গা ভোলার চরফ্যাসন। বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলা। জেলা প্রশাসন যাকে কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করে। ঢাকা থেকে ভোলার দুরত্ব নদী পথে দূরত্ব ১৯৫কি.মি.। সড়কপথে বরিশাল হয়ে সড়কপথে দূরত্ব ২৪৭কি.মি. এবং লক্ষীপুর হয়ে দূরত্ব ২৪০কি.মি.। লঞ্চযোগে সরাসরি ৮/৯ ঘন্টা, বাসযোগে (ভায়া-বরিশাল) ৭/৮ ঘন্টা এবং (ভায়া-লক্ষীপুর) ৬/৭ ঘন্টা সময় লাগে।
দ্বীপ জনপদ ভোলা এখন অবহেলিত নেই। এককালের অবহেলিত জনপথ ভোলা লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অবকাঠামো ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে আগেকার সেই ভোলা আর নেই। বিশেষ করে চরফ্যাসন উপজেলায় পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী জ্যাকবের রেকর্ডসংখক দৃশ্যমান উন্নয়নে এটি একটি মডেল উপজেলা হিসাবে রুপান্তিরত হয়েছে।
বিশ্বখ্যাত আইফেল টাওয়ারের আদলে চরফ্যাসনের খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাসন স্কায়ারের দক্ষিণ পার্শ্বে ১৮ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন জ্যাকব টাওয়ার পর্যটকদের আকর্ষনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এই ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়ালেই পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদীর শান্ত জলধারা, পুর্বে মেঘনা নদীর ঢেউ, দক্ষিণে চরকুকরি মুকরিসহ বঙ্গোপসাগরের ঘেঁষে বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলার বিরাট আংশ নজরে আসবে।
উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ারটি ৭৫ ফুট মাটির নিচ থেকে ৭০ টি পাথর ঢালাই পাইলিং ফাউন্ডেশনের উপর নির্মিত সম্পুর্ন স্টিলের তৈরী। ৮ মাত্রার ভুমিকম্প সহনীয় এ টাওয়ারের চুড়ায় উঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি ১৬ জন ধারণ ক্ষমতার রয়েছে অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। ১০০০ বর্গফুটের ১৭ তম তলায় রাখা হয়েছে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা। একসঙ্গে ২০০ পর্যটক সেখান থেকে ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পাবেন। এছাড়াও বিশ্রাম, প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যাবস্থা রয়েছে।
চরফ্যাসন পৌর শহরের ফ্যাসন স্কয়ার ইতোমধ্যেই সকলের কাছে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। ফ্যাসন স্কয়ারে নান্দনিক সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ওয়াটার ফাউন্টেন (পানির ফোয়ারা)। রাতের অন্ধকারে বর্ণিল আলো ও পানির নাচন দেখে বিমোহিত দর্শনার্থীরা। এছাড়া ভোজনরসিকদের জন্য রয়েছে আধুনিক মানের রেস্টুরেন্টের লোভনীয় খাবার।
চরফ্যাসন পৌর শহরের ফ্যাসন স্কয়ারের পাশে নির্মিত হয়েছে শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্ক। এই পার্কে আছে প্রাটোফার, ট্রেন, হানিসুইং, মেরিগ্রাউন্ড, ওয়ান্টার হুইল, থ্রিডি গেইম, বেলুন ঘর, হাতি, জিরাফসহ অনেক প্রাণি, বিভিন্ন ধরণের ফুল গাছ, বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য আছে গোলঘর, বসার ব্যাঞ্চ, গাছের উপরে কফি খাওয়ার ঘর ও সুইমিংপুল। সেখানে থাকবে অনেক ধরনের খেলনাসহ ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের ছোট বড় খেলনা।
ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের উপকন্ঠে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর মোহনায় গড়ে উঠা চর কুকরি-মুকরিতেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বন্যপ্রানীর অভায়ারন্য। মাইলের পর মাইল বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস স্বপ্নের দ্বীপ কুকরি-মুকরিকে সাজিয়েছে সাজের সমারোহে। চিত্রা হরিন, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল, বন্য মহিষ-গরু বন বিড়াল, ইত্যাদি, আর পাখি ও সরিসৃপ হিসাবে বিভিন্ন প্রজাতির বক, বন মোড়গ, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ুর , কোয়েল, গুইসাপ, বেজি, কচ্ছপ ইত্যাদি প্রানী চর কুকরি-মুকরির বনে দেখা যায়। কুকরি-মুকরির প্রধান আকর্ষন সাগর পাড়, এখানে উত্তাল ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখলেই মনে পড়ে যাবে কক্সবাজার কিংবা সমুদ্র সৈকতের কথা, এছাড়া ও এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত ও সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমন পিপাসুদের মুগ্ধ করবে।
ইতোমধ্যেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ক্যাম্পিং করার জন্য প্রশস্ত বিচ আর নিরব শান্ত পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। পাশেই আছে মনপুরা। ঘন বন, লোকালয়ের কোলাহল থেকে দূরে, নানা বণ্যপ্রাণির অবাধ বিচরণের মাঝে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য পেতে প্রায়ই এখনে ভ্রমণ করেন অসংখ্য মানুষ।
ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণের দ্বীপের নাম ঢালচর। এটি চরফ্যাসন উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। দেশের বৃহত্তম দুটি সমুদ্র সৈকতের পরে ঢালচর দ্বীপের তারুয়া এলাকাটি তৃতীয় সমুদ্র সৈকত হিসেবে স্থান পেতে পারে বলে জানিয়েছেন ভ্রমণকারীরা।
তারুয়ার পুরো দ্বীপটি দেখার স্বাদ যেন অপূর্ণ-ই রয়ে যায় কারো কারো। যে প্রান্তেই চোখ যায় সেদিকেই যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম দৃশ্য। দ্বীপজেলায় এমন প্রকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি রয়েছে তা স্ব-চক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবেনা।
ভোলার চরফ্যাসনে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো নদী পথে যাতায়াত করা, এতে করে খরচ, সময় ও শারীরিক কষ্ট সবই বেঁচে যাবে আপনার।
ঢাকার সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী-৪, প্রিন্স অফ রাসেল-৪, নিউ সাব্বির ২ ও ৩ লঞ্চে ভোলার ঘোষের হাট নামবেন। সেখান থেকে লেগুনা করে চলে যাবেন চরফ্যাসন শহরে।
এছাড়াও সদরঘাট থেকে এম ভি ফারহান ,কর্নফুলি, তাসরিফ লঞ্চে চরফ্যাসনের বেতুয়া ঘাট নামবেন। সেখান থেকে লেগুনা করে চরফ্যাসন শহরে পৌছাবেন।
চরফ্যাসনে থাকার জন্য চরফ্যাসন শহরে উন্নতমানের একাধিক অাবাসিক হোটেল রয়েছে, তাছাড়া ইতিমধ্যে কুকরি-মুকরিতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক বিলাসবহুল তিনতলা বিশিষ্ট নয়নাভিরাম আন্তর্জাতিক মানের রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে।