ছেলেদের ক্রিকেটে মন খারাপের খবর থাকলেও বাংলাদেশের মেয়েরা মালয়েশিয়ায় ইতিহাস গড়েছে। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছেন রুমানা-সালমারা। আজ কুয়ালালামপুরে ভারতের বিপক্ষে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রতিটি ম্যাচ হারলেও এশিয়া কাপে একেবারে অন্য চেহারায় বাংলাদেশ। কীভাবে বদলে গেল দলটা ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল জিততে তারা কতটা আত্মবিশ্বাসী, দলের ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন কুয়ালালামপুর থেকে সেটিই জানাচ্ছেন—
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা খুব একটা খারাপ খেলিনি। দূর থেকে আমরা শুধু ম্যাচের ফলই দেখেছি। কিন্তু ম্যাচ হারা মানে খারাপ খেলা নয়। ওখানে হারের পরও আমরা অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছি। সেই ইতিবাচক দিকগুলো আমরা নিয়েছি। কোথায় আমাদের সমস্যা ছিল সেগুলো চিহ্নিত করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার সময়ই দল উজ্জীবিত হতে শুরু করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক-দুটি টি-টোয়েন্টিতে আমাদের জেতার সুযোগ ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মূল্য উদ্দেশ্যই ছিল দলকে বোঝা। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিচ্ছিন্নভাবে এই দলের অনেকের খেলা দেখেছি। তবে গত কয়েক মাসে কাছ থেকে দেখছি তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কীভাবে খেলে। আগে জানার সুযোগ ছিল না ওরা কেমন খেলে, এখন যে সুযোগটা হচ্ছে। কোথায় আমাদের কী করার দরকার, সেগুলো নিয়ে যখন আমরা ধীরে ধীরে কাজ শুরু করেছি তখন ফল মিলেছে। তবে এটার শুরুটা কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই হয়েছে।
মেয়েদের সবচেয়ে বড় বদলটা এসেছে মানসিকতায়। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই আমরা জয়ের জন্য খেলতে শুরু করেছি। শুধু ভালো খেলতে বা মান রাখতে নয়; মেয়েরা এখন প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামছে জেতার জন্য। ফলটা নিজেদের পক্ষে আনতে তারা অনেক আক্রমণাত্মক খেলছে। এই যে আক্রমণাত্মক খেলার মানসিকতা—মেয়েদের সবচেয়ে বড় বদল বলতে পারেন এটাই। আগের মানসিকতা ছিল একটু রান করলাম, সম্মানজনক জায়গায় গেলাম এতটুকুই। এখন শুধুই জয়ের জন্য খেলে তারা। এটার সঙ্গে চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। কখনো তারা ভালো খেলবে, কখনো ফল নিজেদের পক্ষে আসবে না। অনেক কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলতে হবে। কঠিন পরিস্থিতি সামলে কীভাবে ধারাবাহিক খেলা যায় সেটিই এখন মেয়েদের চ্যালেঞ্জ।
কদিন আগে কোচিং স্টাফে বড় পরিবর্তন এসেছে দলে। তাদের কাজের ধরনে কিছু নতুনত্বও আছে। তবে তারা মাত্রই কাজ শুরু করেছে। কাল এসেই আজ সাফল্য পেয়ে গেছে, বিষয়টি এমন নয়। এটা দ্রুত সম্ভবও নয়। সাফল্য আসে একটা লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। তবে হ্যাঁ, এই কোচিং স্টাফ কাজ করবে নিশ্চয়ই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।
আমাদের ব্যাটিংটা নিয়ে চিন্তা ছিল দীর্ঘদিন ধরে। তিন-চারজন ব্যাটার আছে তারা প্রায় বিশ্ব মানের। ওরা যদি ভালো খেলে তবে দল ভালো করে। এই তিন-চারজনের এক-দুজন ভালো করলেই লড়াইয়ের স্কোর পাওয়া যায়। দলের মূল শক্তি হচ্ছে বোলিং। লড়াইয়ের স্কোর পেলেই তারা সেটি ডিফেন্ড করার সামর্থ্য রাখে।
আজ আমরা ফাইনাল খেলতে নামছি ভারতের বিপক্ষে। এই ভারতকেই লিগ পর্বে হারিয়েছি। কিন্তু মনে হয় না কাল চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারব। নির্ভার হয়ে খেলতে পারব না এই কারণে, আমরাও ফাইনাল জেতার আশায় নামব। যদি এমন হতো, ভারত অনেক শক্তিশালী দল। ওদের সঙ্গে জেতা যাবে তাহলে হয়তো ভাবতাম এই ম্যাচে যেটাই পাই সেটাই অর্জন। কিন্তু আমরা নামব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে। চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারলে ভালো হতো। আপনি যখন শিরোপা জেতার লক্ষ্যে খেলতে নামবেন তখন আর চাপমুক্ত হয়ে খেলা সম্ভব নয়। এ ধরনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা যত বেশি হবে আমরা ভবিষ্যতে তত ভালো খেলব। ফাইনালে যদি ভালো শুরু করতে পারি, সেটি ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে, তাহলে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।