পোড়া বা ব্যবহৃত মবিল বা রিসাইকেল লুব অয়েল ও রিসাইকেল বেইজড অয়েল আমদানি নিষিদ্ধ করে গত ২১ এপ্রিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর ৪৭ দিন পর ৭ জুন সংসদে ঘোষিত আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি পণ্য দুটি আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। সংসদে গতকাল পাস হওয়া বাজেটেও তা বহাল রাখা হয়েছে।
দেশকে বর্জ্য ও পরিবেশদূষণমুক্ত রাখতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনটি জারি করে। লুব ব্ল্যান্ডিং প্ল্যান্ট স্থাপনের নীতিমালা-২০১৮ সংক্রান্ত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, লুব অয়েল উৎপাদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভার্জিন বেইজড অয়েল বা বিশুদ্ধ কাঁচামাল ব্যবহার করতে হবে। কোনো পরিস্থিতিতে রিসাইকেল (ব্যবহৃত) লুব অয়েল অথবা রিসাইকেল বেইজড অয়েল আমদানি করে দেশে ব্যবহার করা যাবে না।
এদিকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর দেশে প্রথমবারের মতো পণ্য দুটি আমদানির সুযোগ দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি নতুন এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেমস) কোড সংযোজন করেছে। কোড দুটি হচ্ছে রিসাইকেল লুব অয়েল ২৭১০.১৯.২৩ ও রিসাইকেল লুব বেইজড অয়েল ২৭১০.১৯.২৪।
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক বদিউস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবহৃত মবিল একপ্রকার বর্জ্য। বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে এটি পরিশোধন করা সম্ভব কি না, আমি সন্দিহান। তবে ব্যবহৃত লুব আবার ব্যবহার হলে যন্ত্রপাতি দ্রুত নষ্ট হবে।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ব্যবহৃত বা পোড়া মবিল আমদানির সুযোগ নিতে একটি চক্র বিপিসির দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয় তখন কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তাদের চেষ্টা সফল হয়নি।
বিপিসিরি তৎকালীন চেয়ারম্যান (বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম গত বছরের ৩০ জুলাই ব্যবহৃত মবিল আমদানি নিষিদ্ধ করতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ব্যবহৃত মবিল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে কলকারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল্যবান যন্ত্রাংশ এবং গাড়ির ইঞ্জিনসহ যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে। এগুলোর আয়ুষ্কাল দ্রুত হ্রাস পাবে। ফলে মূলধনি বিনিয়োগ বা ব্যয় বাড়বে। অন্যদিকে পরিবেশদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলবে। এমতাবস্থায় এই বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এরপর বিপিসি এবং জ্বালানি-খনিজ সম্পদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি-চালাচালি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত এপ্রিলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বছরে মবিলের চাহিদা সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন। তবে সরকারি ও বেসরকারি ১৮টি ব্ল্যান্ডিং প্ল্যান্ট বা পরিশোধন কারখানার উৎপাদনক্ষমতা চাহিদার চেয়ে বেশি। এর ওপর যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং জাপান থেকেও উন্নত মানের মবিল আমদানি হচ্ছে।
ব্যবহৃত লুব বা মবিল আমদানির সুযোগ সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া মুঠেফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই পণ্য আমদানিতে উচ্চ হারে কর ধার্য করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথাও বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ব্যবহৃত লুব নিষিদ্ধ করলে সেই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
বিপিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ভার্জিন লুব অয়েল বা বিশুদ্ধ মবিল আমদানিতে প্রতি টনের ট্যারিফ মূল্য (পণ্যের সর্বনিম্ন মূল্যের ওপর শুল্কায়ন) ১ হাজার ৩০০ ডলার ধরে ১৫ শতাংশ আমদানি কর ধার্য রয়েছে। ভার্জিন লুব বেইজড অয়েল আমদানিতে ট্যারিফ মূল্য ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে ১০ শতাংশ কর ধার্য আছে। অন্যদিকে ব্যবহৃত মবিলের ক্ষেত্রে কর ধরা হয়েছে ২৫ শতাংশ। কিন্তু কোনো ট্যারিফ মূল্য নেই। ফলে যে কেউ নামমাত্র মূল্য দেখিয়েই ব্যবহৃত বা পোড়া মবিল আমদানি করতে পারবে। আবার ট্যারিফ মূল্য যদি নামমাত্র হয়, তাতে পোড়া মবিল নামের তেল-বর্জ্যে বাজার সয়লাব হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।