সিঙ্গাপুর সামিটে কোরিয়া উপদ্বীপকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করলেও গোপনে নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে উত্তর কোরিয়া। স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত ছবিতে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, উত্তর কোরিয়ার ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের অবকাঠামোতে সম্প্রতি ব্যাপক উন্নতি ঘটানো হয়েছে। এখানে পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা হয়। পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘৩৮-নর্থ’ এমনটিই বলেছে। এই সংস্থাটি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর কড়া নজর রাখে।এ খবর দিয়েছে সিএনএন ও আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ৩৮-নর্থ গত ২১শে জুন স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত একটি ছবি প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, উত্তর কোরিয়া শুধু নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহতই রাখেনি। বরং স্থাপনার অবকাঠামোতেও ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ২১শে জুনের ওই ছবি অনুযায়ী, খুবই দ্রুতগতিতে ইয়ংবিয়নের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রকে উন্নত করা হচ্ছে। সেখানে নতুন করে আরো কয়েকটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রকৌশলীদের জন্য একটি কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া পারমাণবিক চুল্লির পাশে একটি গাড়ি বারান্দা তৈরি করা হয়েছে। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে কিম জংয়ের অঙ্গীকার এই স্থাপনার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে নি।
এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনের বিষয়ে তারা এখনো নিশ্চিত নন। এটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক জেফ্রি লিউয়িস বলেন, তাৎপর্যগতভাগে উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আনে নি। কেননা, এই স্থাপনা এখনো উত্তর কোরিয়ার জন্য প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করছে।
১২ই জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বৈঠকে নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় উত্তর কোরিয়া। কোরিয়া উপদ্বীপকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একমত হন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তবে ওই বৈঠকের ঘোষণায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বা এর জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় নি। ৩৮-নর্থ এর ডাইরেক্টর জুয়েল উইট বলেন, সিঙ্গাপুর সামিটের অঙ্গীকার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা এমন কোনো লিখিত নথি না, যাতে উত্তর কোরিয়ার জন্য কোনো কর্মসূচি বেঁধে দেয়া হয়েছে। তাই সিঙ্গাপুর সামিটের পরেও উত্তর কোরিয়া তাদের পূর্বের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তার ভাষায় ‘এতে আমি মোটেই অবাক হইনি।’
এদিকে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করবে। সেখানে পুরোপুরি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ হবে। যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। উত্তর কোরিয়া এখন আর কোনো পারমাণবিক হুমকি নয়। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বুধবার উত্তর কোরিয়াকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের জন্য উত্তর কোরিয়া এখনো বড় হুমকি। তবে তিনি ট্রাম্পের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গান। বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলতে চেয়েছেন, আমরা হুমকির মাত্রা কমিয়ে এনেছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা উত্তেজনার মাত্রা কমিয়ে এনেছি। আমার মনে হয় তার মনোভাব এটাই ছিল।
এর আগে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া পাঙ্গিয়েরিতে অবস্থিত পারমাণবিক পরীক্ষার স্থাপনা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয়। বিশ্লেষকদের দাবি, এই স্থাপনাটি অনেক আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। উত্তর কোরিয়া প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই স্থাপনাটি উড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে ধুলা দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে দেশটি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে তাদের পূর্ব পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনে নি।