খুলনা মহানগরীর আবাসিক হোটেল আজমল হোসেন ইন্টারন্যাশনালের কক্ষে ব্যবসায়ী ইনসান মোল্লা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রেমিকা মরিয়ম খাতুন ওরফে তানিয়া (২২) আদালতে স্বীকারোক্তি-মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে দুইদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি এ জবানবন্দি দেন। খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুমি আহমেদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তানিয়া নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার নাঙ্গুলিয়া গ্রামের দ্বীনো শেখের স্ত্রী। তার পিতা একই এলাকার আবুল কালাম বিশ্বাস। ইনসান মোল্লা হত্যাকাণ্ডে গত ২৫শে জুন গভীর রাতেই তানিয়কে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।তানিয়ার সঙ্গে ইনসানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে সে স্বীকার করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল আলম জানান, একই সঙ্গে হোটেলে উঠে হত্যাকাণ্ডের পর তানিয়া পালিয়ে যায়। তার সঙ্গে অন্য কোনো সহযোগী ছিল না বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
এর আগে ২৫শে জুন তানিয়াকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন ইনসানের বড় ভাই তৌরুত মোল্লা। মামলায় অজ্ঞাত আরো ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত ইনসান মোল্লার (২৭) বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি গ্রামে। তিনি ওই এলাকার ইঞ্জিল মোল্লার ছেলে। প্রায় সাত মাস আগে বিয়ে করেন ইনসান। তবে, তিনি দেড় বছর ধরে পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। ২১শে জুন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তিনি। ২২শে জুন ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ২৫শে জুন দুপুরে ওই হোটেলের পঞ্চম তলায় ৫০২ নম্বর কক্ষ থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় ইনসানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি উলঙ্গ অবস্থায় কক্ষের বক্স খাটের নিচে লুকানো ছিল। তার মুখ ও যৌনাঙ্গ আগুন দিয়ে পোড়ানো অবস্থায় ছিল। হাত-পা ছিল বাঁধা। খুলনায় একটি লাশ পাওয়া গেছে শুনে ইনসানের ভাই এসে লাশটি শনাক্ত করেন।
মামলার বাদী তৌরুত মোল্লা জানান, ‘আমার ভাইয়ের মোবাইলফোন বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের দোকান রয়েছে। ওই মেয়ে (মরিয়ম) দীর্ঘদিন ধরে বোম্বে থাকতো। বোম্বে থেকে ফিরে এসে নানাভাবে আমার ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। গত আট মাস আগে ইনসানকে বিয়ে দিলে ওই মেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ওই মেয়ে ও তার সহযোগিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে।
হোটেলের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে ইনসান মোল্লা একজন বোরকা পরিহিত মেয়েকে নিয়ে ওই হোটেলে দুই ঘণ্টার জন্য কক্ষটি ভাড়া নেয়। হোটেল বয় সবুর গাজী দুপুর ১২টার দিকে ওই রুম তাদের ভাড়া দিয়েছিল। এরপর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে এসে সে ওই কক্ষটি ফাঁকা দেখতে পায়। কিন্তু খাটের নিচে থাকা লাশ সে লক্ষ্য করেনি। একদিন পর ওই কক্ষ অন্য বোর্ডারকে ভাড়া দিলে তিনি কক্ষের ভেতরে দুর্গন্ধ পান। এ বিষয়ে জানালে কর্মচারীরা গন্ধের উৎস খুঁজতে লাশের সন্ধান পায়।
এদিকে লাশ উদ্ধারের দিন সোমবার সকালে চাঁদা চেয়ে এক ব্যক্তি ফোন দেয় নিহতের ভাই তৌরুত মোল্লাকে। মোবাইলফোনে সে জানায় ৬০ হাজার টাকা না দিলে তার ভাইকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই চাঁদা দাবির কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না জানা যায়নি। তবে, পুলিশ মোবাইলফোনের কললিস্ট যাচাই বাছাই করছে বলে জানা গেছে।