একটু খেয়াল করে দেখুন,
রূপবতী রূপার মুখখানা কেমন জানি মলিন হয়ে উঠছে, তার গোলাপি ঠোঁটে চোখের জল বেয়ে বেয়ে পড়বে ভাব।
আপনার আঙ্গিনায় বেরিয়ে দেখুন;
হলুদ পাঞ্জাবিওয়ালা হিমু কালো একটা পাঞ্জাবি পরার প্রস্তুতি নিচ্ছে, মাঝে মাঝে মেঘলা কালো আকাশে তাকাচ্ছে।
হিমু কী দেখছে এই অন্ধ আকাশে?
সব মিলিয়ে হিমুকে কেমন জানি অন্য অন্য লাগছে,
হিমুও আজ ভুলতে চলছে আকাশ মেঘ করলে কী হয়?
হ্যাঁ, হিমুর চোখ লাল হয়ে উঠছে
দু-এক ফোঁটা জল পড়তেও শুরু করল
এই জল বুকে নিতে মাটিরও খুব কষ্ট হচ্ছে।
এই শেষ নয়,
আপনার পড়ার রুমে ভালো করে দেখুন কে যেন আপানার পড়ার টেবিল দখল করে আছে।
হ্যাঁ, মিসির আলী বসে বসে হ্যারিকেনের আলো একবার কমাচ্ছে আবার বাড়াচ্ছে;
আজ তার কোনো সমীকরণই মিলছে না। বড় বড় নিশ্বাস ফেলে তাই প্রমাণ দিচ্ছে মিসির।
তার চোখগুলোও জল নিয়ে হাজির, একেক ফোঁটা জল মনে হচ্ছে একেক ফোঁটা উত্তপ্ত তেল।
হঠাৎই রূপার চিৎকারসমেত কান্না শুনতে পেলাম।
প্রচণ্ড চিৎকারে মনে হচ্ছে শহরই ভেঙে পড়ছে।
শহরে লুকিয়ে থাকা হাজারও হিমু ছায়ামূর্তির ন্যায় হারিয়ে যাচ্ছে আর কাঁদছে।
দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলো আস্তে আস্তে আলো কমিয়ে দিচ্ছে।…
আবার আঙ্গিনায় বেরিয়ে দেখুন,
হিমু কালো পাঞ্জাবিটা পরে দৌড়ায়ে, অন্ধতে মিশে যাচ্ছে।
পড়ার টেবিলে ফিরে দেখুন
মিসির সব কলাকৌশল ছাই করে কোথায় যেন লুকিয়ে গেছে…
রূপা চুলগুলো ছেড়ে পাগলের ন্যায় পায়চারি করছে আর বলছে, ‘আমিও আসছি অপেক্ষা করো, আমিও আসছি অপেক্ষা করো’…
তখন রানু রূপার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল—
‘আমি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া,
জোছনা ধরিতে যাই ৷
হাত ভর্তি চাঁদের আলো,
ধরতে গেলেই নাই…।’
(২০১২ সালের ১৯ জুলাই এমনটাই করেছিল হিমু, রূপা আর মিসির; প্রিয় হুমায়ূনের জন্য)
ভালো থাকবেন প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যার।