৩৬৫ দিনের মধ্যে কেবল ছয়টি দিন এমন রূপ নেয় রাজধানী ঢাকা। ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহার ছুটিতে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে অনেকে ঢাকা ছেড়ে নিজ শহর ও গ্রামে চলে গেছেন। তাই এ মহানগরে লোক কম, সড়ক ফাঁকা, যানজট নেই, হুড়োহুড়ি নেই, নেই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ। অফিস-আদালত, পোশাক কারখানা আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি। সব মিলিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঈদের পরের দিন কোলাহলের শহর ঢাকা যেন আনন্দ-বিনোদনের শহরে সেজেছে।
ঢাকা এতটাই ফাঁকা যে মাত্র এক ঘণ্টায় পুরো শহরের চারপাশ ঘুরে আসা যায়। প্রাইভেট কারে স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সকালবেলা ঘুরতে বের হন সানোয়ার হোসেন। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় রওনা দেন তিনি। আধা ঘণ্টায় ধানমন্ডিতে ভাইয়ের বাসা চলে যান। সেখানে তাঁর ভাই কোরবানি দিয়েছেন। ভাইয়ের বাসায় কিছু সময় কাটিয়ে পুরান ঢাকা, মতিঝিল, মহাখালী হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আবার ঘরে ফিরে আসেন।
সানোয়ার বলেন, দুপুরে অতিথিরা আসবেন। খাবার খেয়ে বিকেলে সপরিবারে গাজীপুরের এক রিসোর্টে চলে যাবেন। কাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত থেকে রাতে ঘরে ফিরে আসবেন। আগামী রোববার থেকে অফিস শুরু করবেন।
সানোয়ার হোসেনের ভাইয়ের মতো আজ ঈদের পরদিনও ঢাকাবাসী অনেকেই গরু-ছাগল কোরবানি দিয়েছেন। বারিধারার আজহার আলী বলেন, ঈদের পর আরও দুদিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। তাই আজ তিনি একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। তা ছাড়া ঈদের দিন পশু জবাই করার লোক পাওয়া যায় না। লোক পাওয়া গেলেও তাড়াহুড়া করে কাজ করেন। অনেক সময় পশুর চামড়া ও মাংস নষ্ট হয়ে হয়ে যায়। এসব বিড়ম্বনা এড়াতে প্রতিবছরই আজহার আলী ঈদের দ্বিতীয় দিন গরু কোরবানি দিয়ে আসছেন।
ঈদের পর আজ অনেকে আবার ঢাকা ছাড়ছেন। কেউ যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি, কেউবা ছুটছেন কক্সবাজার, সিলেট, কুয়াকাটার মতো দূরে বেড়াতে। একটু সচ্ছল যাঁরা, তাঁরা আবার পাড়ি দিচ্ছেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপালের মতো দেশে।
আরিফুর রহমান সকালে বাসে খুলনায় যাচ্ছেন। আজ যেন দৃশ্যপট বদলে গেছে। গুলিস্তান থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটে মাওয়া ফেরিঘাটে। লঞ্চে নদী পাড়ি দিয়ে পদ্মার ওপারে। এরপর বেলা দেড়টার মধ্যে খুলনায়।
টার্মিনালগুলোয় বাসযাত্রীদের চাপ ছিল আজও। গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল মিলিয়ে আজ সকালে তাদের ১০০টি বাস ঢাকা ছেড়ে গেছে। তবে চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা কম। কারণ, বেশির ভাগ বাসই এখন ঢাকার বাইরে রয়েছে। তাই বাসের অভাবে অনেক যাত্রীকে টিকিট দিতে পারেননি।
মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা, রমনায় শিশুপার্ক, বিজয় সরণিতে নভো থিয়েটারের মতো ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় রয়েছে প্রচুর ভিড়। জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল আটটা থেকে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। বেলা একটার মধ্যে এক লাখের বেশি দর্শনার্থী চিড়িয়াখানার ভেতরে ঢুকেছেন।