যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। দুই দেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে আলোচনা চললেও আজ বৃহস্পতিবার দুই দেশই একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এর আগে গত জুলাইয়ে চীনের ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মার্চে যে ৫ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছিল, তার অংশ হিসেবেই এই শুল্ক আরোপ বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর জবাবে চীনও বসে নেই। তারাও সমপরিমাণ অর্থের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে হারলে ডেভিডসন মোটরসাইকেল, কয়লা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ডাম্প ট্রাক, পিচসহ শতাধিক পণ্য। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ শুল্ক আরোপ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আইনের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’। সংস্থার বিবাদ মীমাংসা প্রক্রিয়ার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
৭ আগস্ট ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) ২৭৯টি চীনা পণ্যের তালিকা প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে আছে সেমিকন্ডাক্টর, রাসায়নিক ও যন্ত্রাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, অনৈতিক বাণিজ্য করার জন্য শাস্তিস্বরূপ চীনের ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হবে।
এর আগে গত জুলাইয়ে চীনের ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করে। চীনের কিছু খাতে ব্যবসা করতে হলে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় অংশীদার নিতে বাধ্য করা হয়। মূলত, এ কারণেই চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র মহা খাপ্পা। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই সুযোগে চীন অনেক মার্কিন কোম্পানির প্রযুক্তি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা খুব কঠোর ভাষায় সেমিকন্ডাক্টরে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ সিদ্ধান্তে দেশটির ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ এর ফলে উৎপাদনকারীদের খরচ বাড়ছে, যা অর্থনীতিকে আঘাত করতে পারে। তাঁরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে মার্কিন চাষি, উৎপাদনকারী ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যদিও গতকাল বুধবার দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। আজও আলোচনা চলবে। এই আলোচনার মধ্যেই নতুন শুল্ক আরোপ বিষয়টি সুরাহা না করে জটিল করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউএস সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (এসআইএ) ৭ আগস্ট বলেছে, তারা ‘হতাশ ও বিমূঢ়’। এতে মার্কিন চিপ নির্মাতারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, চীনারা নয়। কারণ, চীনা সেমিকন্ডাক্টর দিয়েই এসব চিপ নির্মিত হয়। তারা আরও বলেছে, সব মিলিয়ে ৬৩০ কোটি ডলারের সেমিকন্ডাক্টর ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্য শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমেরিকান পণ্য কিনতে ভোক্তাদের আগ্রহী করে তুলতে চীনের মতো ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর কর আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় দফায় ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছে। আগামী মাসেই তা কার্যকর হতে পারে।
তাহলে চীনও ৬ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে জবাব দেবে বলে জানিয়েছে।
তবে নিউইয়র্কের সঙ্গে বেইজিংয়ের সমানতালে পেরে ওঠা কষ্টের হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চীনের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের যে পরিমাণ পণ্য আসে, তার চেয়ে অনেক বেশি রপ্তানি পণ্য চীন উৎপাদন করে।