দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা গায়েব বিষয়ে খনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এখানে কোনো দুর্নীতি হয় নাই, কোনো চুরি হয় নাই। এটা টোটালি একটা টেকনিক্যাল লস।’
আজ বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে হাজির হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাবিব উদ্দিন আহমেদ এই দাবি করেন। আজ খনির সাবেক এমডি ছাড়াও কোম্পানি সচিব ও চার সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ মোট আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
হাবিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০০৫ সাল থেকে যে কয়লাটা স্টকে ছিলো আমাদের, এটার ভেতরে যে ইনহেরিয়েন্ট ময়েশ্চার থাকে ফাইভ পয়েন্ট ওয়ান পারসেন্ট, এটা আস্তে আস্তে চলে যায়। তারপরে ডাস্টটা চলে যায়, ভোলেটাল মেটেরিয়াল থাকে এগুলো উড়ে যায়। ইন্টার ন্যাশনালি এক্সেপ্টেড যেটা আছে, এগুলো আপনারা একটু দেখেন ইনশা আল্লাহ। এর থেকে অনেক বেশি লস হয়।’
তবে, এতো বিপুল পরিমাণ কয়লা যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা, কিভাবে শুধু টেকনিক্যাল কারণে লস হতে পারে এ ব্যাপারে কিছু বলেননি খনির সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক শামসুল আলম বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব হয়, আমরা চেষ্টা করবো রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য। যেহেতু মামলাটার তদন্ত চলতেছে, সকাল ৯টা থেকে উনাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আর জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে এখনো। আর মামলা যেহেতু তদন্ত পর্যায়ে আছে, এ পর্যায়ে কিন্তু আসলে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
আজ পেট্রোবাংলার এই আট কর্মকর্তাকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এ পর্যন্ত কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনায় মোট ২৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করল কমিশন।
মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিসহ মোট ৩২ জনকে তলব করেছে দুদক। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাকি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।
গত জুলাই মাসের শুরুতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ইয়ার্ডে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা থাকার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন কয়লা থাকে। অর্থাৎ এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার হদিস নেই। কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পেট্রোবাংলাকে জানায়। তখনই কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে। কয়লা সংকটের কারণে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।
এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে গত ২৪ জুলাই পার্বতীপুর থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় খনির সদ্য অপসারিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, কোম্পানি সচিব আবুল কাশেম প্রধানিয়াসহ ১৯ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
অপরদিকে মামলার নথি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুর আঞ্চলিক শাখা থেকে কেন্দ্রীয় দুদকের কর্যালয়ে পাঠানো হয়। ৫২৫ মেগাওয়াট সম্পন্ন তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় রংপুর বিভাগের আটটি জেলার বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, গত ২৬ আগস্ট এক লাখ টন কয়লা আমদানি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছিলেন, ‘স্টক বিল্ডআপ (মজুত) করার জন্য আমরা একটা সার্টেইন (নির্দিষ্ট) পরিমাণ কয়লা আমদানি করব। রেগুলার (নিয়মিত) ভিত্তিতে হবে না। কিন্তু একটা স্টক আমাদের হাতে রাখা দরকার। যেকোনো ইমার্জেন্সি (জরুরি প্রয়োজন) হতে পারে। ইমার্জেন্সি কেসে কিছু দরকার বলে আমরা ইমপোর্ট (আমদানি) করতে যাচ্ছি। লাখ খানিক টনের মতো হবে আপাতত।’