বাংলাদেশে গণমাধ্যম কর্মী ও বিরোধীদের ওপর নির্যাতনের সমালোচনা করা হয়েছে বৃটিশ টেলিভিশন চ্যানেল ফোরের এক রিপোর্টে। এতে বলা হয়েছে, লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে গতবছর আমরা বাংলাদেশের জোরপূর্বক গুম নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, তার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান। পাল্টা তিনি বিরোধপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। পরে এ নিয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। আমরা ভেবেছিলাম বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যাবে। বৃটেনে তাই হয়েছে।কিন্তু বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার শাসন আরো নিপীড়নমূলক হয়ে ওঠে। আমাদের টিউলিপের সাক্ষাৎকার নেয়ার দুই দিন পর বাংলাদেশে একটি পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সাহস নেই প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের প্রশ্ন করার। তিনি সরকারেরও কড়া সমালোচনা করেন। তার পত্রিকা আমার দেশ সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। এ বক্তব্যের পর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, মানহানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৯টি জেলায় ৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তার কাছে ৭৭৩ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। খেয়াল করুন ৭৭৩ বিলিয়ন পাউন্ড। এটাই আজকের বাংলাদেশ। এসব ঘটনার সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের কোনো সংযোগ নেই, পরে তিনি আরেকজন সাংবাদিকের গ্রেপ্তারের সমালোচনাও করেছেন। ওদিকে, মাহমুদুর রহমান একটি মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে গেলে সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তিনি গুরুতর আহত হন। শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন কাভার করতে গিয়ে সরকারপন্থি সংগঠনের হামলার শিকার হন এএফপির ফটোগ্রাফার আহাদ। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশ ত্যাগ করেছেন এবং আর দেশে ফিরতে চান না। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমও আক্রান্ত হন। পরে তিনি আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের সমালোচনা করেন। এটা আজকের বাংলাদেশে প্রকাশ্যে কখনোই বলা যায় না। তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকার দেশ শাসন করছে। এ সাক্ষাৎকারের ৩-৪ ঘণ্টা পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। গ্রেপ্তারের পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি বলেন, আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তারা আমার রক্তাক্ত পাঞ্জাবি ধুয়ে আবার পরিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক ডেভিড লুইস বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপদজনক। শিক্ষাবিদদের বলা হয়েছে তারা যেন সরকারের সমালোচনা না করেন, সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য খুব খারাপ সময়।
ছাত্রদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছিলেন। তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং রিমান্ডে নেয়া হয়। তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বাংলাদেশে যা ঘটছে তা এখন গ্লোবাল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দুই জন বৃটিশ এমপি রুশনারা আলী ও রূপা হক সরকারের বলপ্রয়োগের সমালোচনা করেন। দুই সপ্তাহ পর আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বৃটিশ এমপি যার পরিবার বাংলাদেশে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী, টিউলিপ সিদ্দিকও শহিদুল আলমের গ্রেপ্তারের সমালোচনায় যোগ দেন।