পতন নিশ্চিত বুঝতে পেরে সরকার মরিয়া হয়ে পালাবার পথ খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে অতিদ্রুত একটি জাতীয় ঐক্য হবে। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আলমগীর বলেন, আজকের প্রেক্ষাপট হলো- বাংলাদেশ অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না, মানুষের বাঁচার অধিকার থাকবে কি থাকবে না, দেশের যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা থাকবে কিনা তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের উপর।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি। আজকেও আমরা সেই লড়াই করছি। সেই লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।তবে আজকে আওয়ামী লীগ ও সরকার পরাজিত হচ্ছে। সরকার মরিয়া হয়ে পালাবার পথ খুঁজছে। সরকারের পতন আসন্ন বলে তারা পাগল হয়ে গেছে।
শেষ চেষ্টা করছে কীভাবে বিএনপি ও জনগণকে দমানো যায়। একই সঙ্গে তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে যেনতেন নির্বাচনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের জনগণ বিরোধী দল ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণ করবে না। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
এই সরকার টিকতে পারে না। জনগণের কাছে তাদের কোনো অবস্থান নেই। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে জনগণ দূরে সরে গেছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আলমগীর বলেন, আপনাদের হয়তো মনে আছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হোটেল লা মেরিডিয়ানে এক সভায় বলেছিলেন- আমি হয়তো কারাগারে চলে যাব।
কিন্তু আপনারা সকল গণতন্ত্রকামী দলকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকারকে হটাবেন। এখন একটা জাতীয় ঐক্য দরকার। সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে হবে। কিন্তু এই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চান না বলে আপনাদের একটা ভুল ধারণা আছে।
আসলে খালদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সকলে একমত। ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী তো আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেই বলেছেন খালেদা জিয়ার মুক্তি দেয়া হোক। তাদের কিছু দাবি থাকতে পারে। কোনো ভালো কিছুর জন্য তো কিছু না কিছু আমাদের ছাড় দিতে হবে। কারণ বৃহত্তর ঐক্য করতে হলে প্রত্যেককে কিছু না কিছু ছাড় দিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি অতি দ্রুত একটি জাতীয় ঐক্য হবে। সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে হটাবে। কারাগারে খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য আদালত স্থানান্তরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কারাগারে আদালত স্থানান্তর করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। যেখানে ক্যামেরা ট্রায়াল করা হচ্ছে।
এটা কোনো আদালত নয়। এটাকে বাংলায় বলা যায় গুহা। একজন অসুস্থ মানুষ। যিনি দেশের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার বাম হাত ও পা অবশ হয়ে গেছে। বাম পাশ ঠিকমতো নাড়াতে পারেন না। তাকে সেখানে ঠিক মতো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছেনা। আবার তার বিচারের জন্য কারাগারের ভেতরে আদালত স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অপরাধ কি? তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন।
একমাত্র এই কারণেই তার সঙ্গে এগুলো করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দলের লোকেরা বলতেন তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা। কিন্তু আজ আমরা দেখছি তিনি গণতন্ত্রকে স্তব্ধ করে দিচ্ছেন। রাষ্ট্রের প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কর্ণেল (অব.) জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা আজিজুল হক লেবু কাজী, এমএ বারী, আবদুল হালিম মিঞা, সাদেকুর রহমান বাবুল, হাজী মনসুর আলী সরকার, নুরে আলম তরফদার, মোকসেদ আলী মঙ্গলীয়া, আবু তালেব চৌধুরী, কামালউদ্দিন, নুরুল আমিন প্রমুখ। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা এতে অংশ নেন। সভা শেষে খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।