নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বৈঠক করেছে। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত সভায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করেন নেতারা। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়। এই বৈঠকের মাধ্যমে মূলত জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করলো আওয়ামী লীগ। বৈঠক থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন ও প্রচারণার বিষয়ও আলোচনা হয় বৈঠকে। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করবে। জনগণ সরকারের উন্নয়ন দেখছে।আমরা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন হয়। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা প্রার্থী যাচাই-বাছাই করবো। ইতিমধ্যে তা দল শুরু করে দিয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক জোট গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক সব সময় উত্তরপাড়ার দিকে মুখ করে বসে থাকে। যেন উত্তরপাড়া থেকে কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। তবে উত্তরপাড়ার দিকে মুখ করে বসে থাকলেও সাড়া মিলবে না। কারণ তাদের এখন ওই ধরনের মানসিকতা নেই যে, কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। জাতিসংঘের কর্মকর্তার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরা মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। বলা হলো- জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে বৈঠক করতে গেছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু জাতিসংঘ থেকেই বলা হলো যে, তারা বিএনপিকে কোনো আমন্ত্রণ জানায়নি। জাতিসংঘ মহাসচিব তখন ঘানায় ছিলেন। অর্থাৎ এটা মিথ্যাচার, ভাঁওতাবাজি ও নাটক। এ ধরনের মিথ্যাচার করে তারা নিজেদের সর্বনাশ করছে। একই সঙ্গে দেশেরও ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসবে- এ আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের ওপর আছে। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে। এতে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর নির্বাচন নিয়ে কমিটির নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

পাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেশকে গড়তে হবে
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকার প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রতি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০০টির কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪টি সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ও ২৩টি বিশ্বমানের নতুন পলিটেকনিক স্কুল ও কলেজ স্থাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে গণভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ২২তম জাতীয় কনভেনশনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সুন্দর আগামীর জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সহ সকলকে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কি পেলাম, কি পেলাম না, তার চিন্তা না করে আগামী প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশকে আগে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সকলকে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বছর আমাদের নষ্ট হয়ে গেছে, ’৭৫ থেকে ’৯৬- ২১টি বছর হারিয়ে গেছে। যে সময়টা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোনো উন্নতিই হয়নি। উন্নতি হয়েছে ক্ষমতাসীনদের এবং তাদের ঘিরে থাকা মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর। বৃহৎ জনগোষ্ঠী কিন্তু বঞ্চিতই ছিল। এই বঞ্চিত মানুষকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেয়াই আমি মনে করি আমার দায়িত্ব। শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্যাপাসিটি ২৫ হাজারের স্থলে ১ লাখে উন্নীত করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদের চেয়ে কোনো সম্পদই বড় নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এজন্য জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। গত সাড়ে ৯ বছরে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৫০০ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইউনিভার্সিটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ করা হয়েছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতির পাশাপাশি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ডাবল শিফট চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রকৌশলীদের একটা ইনক্রিমেন্টের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের যে হারে বেতন বাড়িয়েছি তাতে আর কিছু দাবি না করাই উচিত ছিল। তারপরও আপনাদের ইনক্রিমেন্টের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটা বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই একটি ভালো ঘোষণা আসতে পারে। আইডিইবি সভাপতি প্রকৌশলী একেএমএ হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল থেকে কাকরাইল আইডিইবি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সমপ্রসারণ কাজ এবং ভবনটির সম্মুখে রক্ষিত স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে একজন মরণোত্তর সহ তিনজনকে এ বছরের আইডিইবি স্বর্ণপদক প্রদান করেন। স্বর্ণপদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- আব্দুল কাদের সরকার, সৈয়দ উদ্দীন আহমেদ ওরফে চলচ্চিত্র নির্মাতা ছোটকু আহমেদ এবং মরহুম মো. সফর আলী মিয়া (মরণোত্তর)। স্বর্ণপদকপ্রাপ্তরা প্রত্যেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পদক, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন এবং মরহুম সফর আলী মিয়ার পক্ষে তার বড় ছেলে এটিএম মোজাহারুল হোসেন পদক গ্রহণ করেন। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সারা দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন আইডিইবি’র তিনদিনব্যাপী ২২তম জাতীয় কনভেনশন উদ্বোধন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *