একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন স্তরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।, উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৭৫ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। ইসির ‘নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্বিন্যাস ও দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি’ এই সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ৫১৭টি নবসৃষ্ট পদে লোকবল নিয়োগের পরিকল্পনাও রয়েছে কমিশনের।
ইসির ওই কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে এখন সবারই পদোন্নতি হচ্ছে। পত্রিকায় আমি দেখতে পাই, জনপ্রশাসনে পদোন্নতি হচ্ছে, পুলিশে পদোন্নতি হচ্ছে, কিংবা তাঁরা পদোন্নতি চাচ্ছেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনেও পদোন্নতির ঢেউ লেগেছে।’
মাহবুব তালুকদার জানান, ইসিতে বেশ কিছু নতুন পদ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসিতে প্রায় দুই হাজার জনবল বেড়ে যাচ্ছে। কমিশনের বর্তমান জনবল তিন হাজার। তবে তাঁরা সবাই কর্মকর্তা নন। এর মধ্যে উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা পদে ৫১৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হলে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা আরো বাড়বে। এর পরও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ইসি মাহবুব বলেন, ৭৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। এই তালিকা কমিশনে যাবে। কমিশন সভা অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্টরা পদোন্নতি পাবেন। পদোন্নতির তালিকায় থাকা ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁরা সবাই চতুর্থ গ্রেড অনুসারে বেতন-ভাতা ও সুবিধা পাবেন। উপসচিব পদে পঞ্চম গ্রেডে ২৯ জন এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ষষ্ঠ গ্রেডে ৩৭ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শূন্য পদের বিপরীতে জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুযায়ী পদোন্নতির সুপারিশ করেছে কমিটি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অবশেষে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন তাঁরা। কেউ কেউ ২৭ বছরের চাকরির জীবনে এই প্রথম পদোন্নতি পাচ্ছেন। পদোন্নতির এই খবরে ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে গতকাল বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘ অনেক বছর পদোন্নতি না পেয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় অবস্থায় ছিলাম। পদোন্নতি না পাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেকে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন।’
ইসিতে এই পদোন্নতিতে প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন ইসি মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘এতে ইসির কর্মকর্তারা উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত হবেন।’ তবে আগামী নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে কতজন বা কী সংখ্যক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে সে বিষয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান তিনি।
পদোন্নতি প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘যুগ্ম সচিব পদে কাউকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়নি। ৯ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে চতুর্থ গ্রেড দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৯ জনকে উপসচিব বা সমমান পদে (পঞ্চম গ্রেড) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব বা সমমান পদে ৩৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। দুই হাজার পদে জনবল নিয়োগ হলে ইসি আরো বেশি শক্তিশালী হবে। এর মধ্যে ৫১৭ জন উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা রয়েছেন।’ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের আগে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশা করেন তিনি।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের ১০টি আঞ্চলিক কর্মকর্তা পদে যে ৯ জনকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সাতজনই ইসির যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত। বাকি দুজন আঞ্চলিক কর্মকর্তার পদে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ইসির যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেতে হলে অন্তত দুই বছর আঞ্চলিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু বর্তমান কমিশন ওই নিয়ম উপেক্ষা করে আটজনকে যুগ্ম সচিব পদে চলতি দায়িত্ব দেয়। এর মধ্যে একজন অবসরে গেছেন।
যে ৯ জনকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তাঁরা হলেন—খোন্দকার মিজানুর রহমান (সচিবালয়), মুজিবুর রহমান খান (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, বরিশাল), রকিব উদ্দিন মণ্ডল (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ঢাকা), নুরুজ্জামান তালুকদার (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ফরিদপুর), আবুল কাশেম (ইসি সচিবালয়), মোস্তফা ফারুক (মহাপরিচালক, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট), ফরহাদ আহম্মদ খান (ইসি সচিবালয়), আব্দুল বাতেন (পরিচালক, এনআইডি) ও এস এম আসাদুজ্জামান (পরিচালক, জনসংযোগ