মেথি সবাই চেনেন। মেথিকে মসলা, খাবার, পথ্য—তিনটিই বলা চলে। স্বাদ তিতা ধরনের। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। যাঁরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের বুড়িয়ে যাওয়ার গতিটা অত্যন্ত ধীর হয়।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে। বিশেষত কৃমি মরে। রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। ডায়াবেটিসের রোগী থেকে শুরু করে হৃদ্রোগের রোগী পর্যন্ত সবাইকে তাঁদের খাবারে মেথি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। মেথির গুণাগুণ দেখলে একে অন্যতম সুপারফুড বলা চলে।
মেথির উপকারিতা জেনে নিন
⇒মেথিতে আছে প্রাকৃতিক তন্তু, যা ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। দিনে দুই-তিনবার মেথি চিবাতে থাকলে বেশি না খেলেও পেট ভরা মনে হবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা মেথি কাজে লাগাতে পারেন।
⇒শীত একটু একটু করে আসছে। বাড়ছে সর্দিকাশিও। নিয়মিত মেথি খেলে সর্দিকাশি পালাবে। লেবু ও মধুর সঙ্গে এক চা-চামচ মেথি মিশিয়ে খেলে জ্বর পালাবে। মেথিতে মিউকিল্যাগ নামের একটি উপাদান আছে, যা গলাব্যথা সারাতে পারে। অল্প পানিতে মেথি সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলার সংক্রমণ দূর হয়।
⇒চুল পড়া ঠেকাতে মেথি খেলে উপকার পাওয়া যায়। মেথি সেদ্ধ করে সারা রাত রেখে তার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় মাখলে চুল পড়া কমে।
⇒অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে মেথি। যাঁদের পেট জ্বালা বা হজমে সমস্যা আছে, তাঁরা নিয়মিত মেথি খেতে পারেন। এতে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর করে। মেথি ঝরানো পানি খেলেও হজমের সমস্যা দূর হবে। এমনকি পেপটিক আলসার সারিয়ে তুলতেও সাহায্য করে।
⇒রক্তে চিনির মাত্রা কমানোর অসাধারণ এক শক্তি থাকায় ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুব ভালো এই মেথি।
⇒নিয়মিত মেথি খেলে পেটে কৃমি হয় না। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
⇒মেথি আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তস্বল্পতা, অর্থাৎ অ্যানিমিয়া রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করতে পারে।
⇒মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ওষুধের বিকল্প হলো মেথি। সদ্য মা হওয়া নারীর জন্য মেথি উপকারী।
⇒ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে মেথি, বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য মেথি কার্যকর। মেনোপজ হলে নারীর শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। হরমোনের এই পরিবর্তনের কালে মেথি ভালো একটি পথ্য।
⇒মেথি পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
=====
আপনার মুখে দুর্গন্ধ? লবঙ্গ দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটে দূর করুন মুখের দুর্গন্ধ
আপনার মুখে দুর্গন্ধ- লবঙ্গকে আমরা কেবল মসলা হিসাবেই চিনি, এর হরেক রকম গুণের কথা সম্পর্কে অনেকেরই ঠিকঠাক মত জানা নেই। অবশ্য আমাদের দেশের বাজার ভরে গেছে নকল লবঙ্গ দিয়ে।
লবঙ্গ থেকে আর নির্যাস বের করে কেবল গুনহীন খোসাটুকু মশলা হিসাবে বাজারে বিক্রি হয় আজকাল যা আপনার জন্য মোটেও উপকারী নয়।
আসল লবঙ্গ চিনে নেয়ার রয়েছে কিছু উপায়, একই সাথে এই আসল লবঙ্গের রয়েছে দারুণ সব উপকারিতা ও ব্যবহার। চলুন, জেনে নিই জাদুকরী এই মশলার গুণের কথা।
১. দাঁত ব্যথা করছে? কয়েকটি লবং থেঁতো করে আক্রান্ত স্থানে দিয়ে রাখুন, দাঁত ব্যথার নিশ্চিত উপশম হবে। লক্ষ্য করলেই দেখবেন, বেশিরভাগ টুথপেস্টই লবঙ্গ থাকার দাবী করে। ঠিক এই কারণেই!
২. হাঁটুতে, পিঠে বা হাড়ের কোন জয়েন্টে ব্যথা? বেশ কিছু লবঙ্গ নিন। সেগুলোকে হালকা আঁচে তাওয়ায় টেলে নিন। এই টেলে নেয়া লবঙ্গকে কাপুরে বেঁধে একটি পুঁটুলি তৈরি করুন। গরম থাকতেই এইcloves-benefit পুঁটুলি দিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেঁক দিন। ব্যথা কমে যাবে,
৩. বমি বমি ভাব দূর করতে গুঁড়ো লবঙ্গের সাথে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। আরাম পাবেন।
৪. সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা হোক কিংবা অ্যাজমা, সাইনাস ইত্যাদির সমস্যা; দিনে কয়েক কাপ লবঙ্গ চা খেলে রোগের উপশম হবে। লবঙ্গ পানিতে ফুটিয়ে চা তৈরি করে নেবেন, ঠিক যেভাবে আদা চা তৈরি করেন।
৫. প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে? কয়েক ফোঁটা লবঙ্গ তেল একটি কাপড়ে বা টিস্যুতে দিয়ে কপালের ওপরে দিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট রেখে সরিয়ে ফেলুন। মাথা ব্যথা কমবে।
৬. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গ তুলনাহীন। কয়েকটি মুখে ফেলে চিবালেই আপনার নিঃশ্বাস হয়ে উঠবে তরতাজা।
৭. প্রচণ্ড স্ট্রেস ও উৎকণ্ঠা অনুভব করছেন? এক টুকরো লবঙ্গ মুখে ফেলে চুষে চুষে খেয়ে ফেলুন। পান করতে পারেন লবঙ্গের চাও। মেজাজ ফুরফুরে হয়ে উঠবে।
৮. ব্রণ দূর করতে লবঙ্গ তুলনা নিন। তাজা লবঙ্গের গুঁড়ো সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে ব্রণের ওপরে দিয়ে রাখুন। ব্রণ দূর হবে।
৯. লবঙ্গের তেল আপনার নিয়মিত ব্যবহারের তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে।
১০. গর্ভবতী মায়েরা সকালের বমি বমি ভাব দূর করতে লবঙ্গ চুষতে পারেন। শুধু লবঙ্গ মুখে ভালো না লাগলে সামান্য গুড় মিশিয়ে নিতে পারেন। সকাল বেলাটায় অনেক স্বস্তি বোধ করবেন