জয়ের জন্য বাকি ছিল ৪৮ বল কিন্তু রান প্রয়োজন মাত্র ৫টি। কিন্তু মুশফিকুর রহীমের জন্য সইছিলনা। ছয় হাঁকিয়ে জয় তুলে নিলেন। সেই সঙ্গে নিশ্চিত হল হোয়াইটওয়াশ। ৭ উইকেটের এমন জয়কেতো ‘বাংলাওয়াশ’ বলাই যায়। সাগরিকায় প্রস্তুত ছিল ‘বাংলাওয়াশের’ মঞ্চ। কিন্তু জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেটে ২৮৭ রানের ছুড়ে দেয়া লক্ষ্যটাই ছিল ভয়ের কারণ। তার উপর ওপেনার লিটন কুমার দাস দলকে ০ তে রেখেই বিদায় নিলেন। তাতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে পিন পতন নিরবতা। তাই অপেক্ষা ছিল জয়ের উল্লাস ছড়িয়ে দিতে পারা নায়কের।
যাদের ব্যাটের আঘাতে আঘাতে ভেঙ্গে যাবে নিরতা, দেশ মাতবে উল্লাসে। নিরাশ করেনই ইমরুল কায়েস।তার সঙ্গে তৃতীয় ওয়ানডের জন্য উড়িয়ে আনা সৌম্য সরকারও উড়লেন ব্যাটের দূর্বার ডানায়। দু’জনের ২২০ রানের রেকর্ড জুটিতে জিম্বাবুয়েরর বিপক্ষে শেষ পেরেক ঠোকার হাতুরি পেয়ে যায় দল। ক্রিকেট ক্যারিয়ার বাঁচাতে যুদ্ধ করতে থাকা সৌম্য সেঞ্চুরি হাঁকালেন। তবে আউট হলেন এরপরই ১১৭ রান করে। কিন্তু পেয়ে গেলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, যা তাকে দিয়েছে নতুন জীবন। শুধু অপেক্ষা ছিল ইমরুলের সেঞ্চুরির, সেটিও হল। সিরেজে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে কাছে। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হয়েছেন ১১৫ রানে। সেই সঙ্গে প্রবেশ করেছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নতুন ব্যাটিং রেকর্ডেও। শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক ও মোহাম্মদ মিঠুন। সব মিলিয়ে দূর্দান্ত দাপটেই দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ে টানা তৃতীয় বার হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ শেষ করলো টাইগাররা। তবে সেখানে নায়ক হয়ে রইলেন ইমরুল ও সৌম্য।
জবাব দিতে নেমে লিটনের ০ তে ফিরে যাওয়া ছিল দলের জন্য বড় ধক্কা। কিন্তু দারুণ ভাবে সেই ধাক্কা সামলে উঠে দল। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি পরের ম্যাচে ৯০ রানের ইনিংস খেলা ইমরুল ছিলেন ভরসা হয়ে। শুধু বিশ্বাস হচ্ছিলনা সৌম্য সরকারের ব্যাটের উপর। কিন্তু শুধু নিজেরই নয় তার ব্যাট ফিরিয়ে আনলেন টাইগার ভক্তদের বিশ্বাস। ০ থেকে শুরু করে ইমরুল পৌছে গেলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে। শেষটি ছিল ২০১৫ তে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১২৭ করে অপরাজিত ছিলেন সেবার। এবারও সুযোগ এসেছিল নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু ৯২ বলের ইনিংসে ৬ টি ছয়ের মারের সঙ্গে হাঁকালেন ৯টি চারের মারও। তারপরও তাকে থামতে হল ১১৭ রানে।
এরপর ইমরুল তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিলেন। ১২২ বলে ১০ চার ও ২ ছয়ে ১১৫ রানের ইনিংস। তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেরকর্ডটি এখন ইমরুল কায়েসের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে এ বাঁহাতি ওপেনার ছাড়িয়ে গেছেন ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের করা ৩১২ রানের রেকর্ড। ইমরুল ও সৌম্য গড়েছেন দেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২২০ রানের জুটি। এর আগের জুটি ছিল ২০৭ রানের। সেটি করেছিলেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। শুধু তাই নয় এটি দেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা প্রথম দুটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৭ বছর পরের চিত্রটা ঠিক বিপরীত। বাংলাদেশ সফরে টানা তিনটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের হল জিম্বাবুয়ে। এটি বাংলাদেশের ৬৯ তম ওয়ানডে সিরিজে ১৩ তম হোয়াইটওয়াশ।
এর আগে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে শুরুতে দুই উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও আবু হায়দার রনি। ৬ রানেই তারা ফিরিয়ে দেন দুই ওপেনারকে। কিন্তু তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ১৩২ রান। তবে ভড়কে যায়নি টাইগার অধিনায়ক। পেসার সফল হচ্ছিল না তাই বল তুলে দিয়েছিলেন স্পিনার নাজমুল অপুর হাতে। ৭২ বলে ৭৫ রান করা টেইলরকে অপুর নিজের বলে ক্যাচ বানিয়ে দেখান সাজ ঘরের পথ। তাতেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা জুটি। তবে অন্যপ্রান্ত আগলে রাখেন উইলিয়াম। বাংলাদেশে বিপিএল খেলে দারুণ অভিজ্ঞ সিকান্দার রাজাকে নিয়ে ফের দলের হাল ধরেন। দু’জনের জুটিতে আসে ৮৪ রান। তবে ফের দলের স্বস্তি ফেরান অপুই। ৪০ রান করা রাজাকে সৌম্যর হাতে ক্যাচ বানিয়ে আউট করে টেনে ধরেন রানের লাগাম। ততোক্ষণে অবশ্য দলের স্কোর বোর্ডে যোগ হয়েছে ২২২ রান। হাতে ৬ উইকেট হাতে ওভারও আছে ৮টি। তাই ধারণা করা হচ্ছিল ৩শ’ ছাড়াবে সাগরিকার ব্যাটিং সহায়ক উইকেট।
শেষদিকে পিটার মুর ২১ বলে ২৮ রান করলেও ৩শ’র সম্ভাবনাও সত্যি হতে শুরু করে। উইলিয়ামসের ১৪৩ বলে খেলে ফেলেন ১২৯ রানের ইনিংস। যেখানে ছিল ১০টি চার ও একটি ছয়ের মার। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে শতক পূর্ণ করেন ১২৪ বলে। চলতি সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি একমাত্র সেঞ্চুরি। এর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিল অধিনায়ক মাসাকাদজা।
বাংলাদেশের জন্য লাকি ভেন্যু হিসেবে খ্যাত এ মাঠে আগে ব্যাট করা দলের সর্বোচ্চ রান ৩০৯ রান। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু শেষদিকে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের ফের চেপে ধরেন দুই পেসার সাইফউদ্দিন ও আবু হায়দার। শেষ দুই ওভারে তাদের দারুণ বোলিংয়ে আসে মাত্র ৭ রান। সেঞ্চুরি করে উইকেটে সেট শন উইলিয়ামসের উপর দারুণ ভরসা করে ছিল জিম্বাবুয়ে, তিনি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেন। কিন্তু দলের সংগ্রহ তিনশ’ পেরোল না। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ থামে ৫ উইকেটে ২৮৬।
এদিন অধিনায়ক মাশরাফি ৮ ওভারে দিয়েছেন ৫৬ রান। সৌম্য ২ ওভারে ১৬। আরিফুল দিয়েছেন ৩ ওভারে ১৭। রনি ৯ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। সাইফউদ্দিন ১০ ওভারে ৫১ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। অপু ৮ ওভারে দেন ৫৮ রান। খরচে থাকলেও দু’টি উইকেট নেন এ স্পিনার। মাহমুদউল্লাহ ১০ ওভারে দেন ৪০ রান। তবে নিতে পারেননি কোনো উইকেট। বলার অপেক্ষা রাখে না দারুণ ব্যাটিংয়ে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশের মিশনটা কঠিন করে তোলে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। সেই সঙ্গে প্রমাণ করে তারা যোগ্য দলও।