জার্মানির সাবেক এক নার্স ১০০ রোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ইতিমধ্যেই নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় ছয়টি মৃত্যুর ঘটনায় নিয়েলস হোজেল নামে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তাকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ সিরিয়াল কিলারদের একজন ভাবা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা রোগিদের ওপর অতিমাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করতেন তিনি। ফলে তারা হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেত। উত্তর জার্মানির দু’টি হাসপাতালে হোজেল এই কাজ করেছেন।
বলা হচ্ছে, ৪১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ওল্ডেনবার্গে ৩৬ ও পার্শ্ববর্তী ডেলমেনহর্স্টে ৬৪ জন রোগিকে হত্যা করেছেন।
তার বিরুদ্ধে চলমান বিচার মে মাসে শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে অন্তত ১৩০টি দেহাবশেষ পরীক্ষার পর এই বিচার শুরু হয়।
হোজেলের স্বীকারোক্তি শোনার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন তার তত্ত্বাবধানে মৃত্যু হওয়া অনেক রোগির স্বজন।এদের অনেকে জানতে চান, কীভাবে এক ব্যক্তি এতদিন ধরে এত মানুষকে হত্যা করতে সক্ষম হলো।
হোজেলের তত্ত্বাবধানে থাকা রোগিদের মৃত্যুর হার ছিল অত্যধিক। এছাড়াও অনেক ভয়াবহ তথ্য উঠে আসছে। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে যে, রোগিকে অত্যধিক মাত্রায় ওষুধ খাওয়াতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা খাওয়ার মাত্র দুই দিন পরই তাকে ফের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে। তখনও এক রোগি মারা যান। অনেক স্বজন বিশ্বাস করেন যে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বিষয়টি না জানার ভান করে ছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে হোজেলের পক্ষে মানুষ হত্যা করা সহজ হয়েছিল কিনা, তা জানতে তদন্ত চলছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে হয়তো হোজেল খুন করেছে। কিন্তু কিছু ভুক্তভোগীর শব দাহ করা হয়েছে।
২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো এক রোগির শরীরে অনির্দেশিত ওষুধ প্রয়োগের সময় ধরা পড়েন। ২০০৮ সালে তাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৪-১৫ সালে দ্বিতীয় বিচারে তাকে দুইটি হত্যা ও দুইটি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।
বিচার চলাকালেই এক মনস্তত্ববিদের কাছে তিনি ৩০ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তদন্তকারীরা তদন্তের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করেন। তারা তার তত্ত্বাবধানে মারা গেছেন এমন ১৩০ জন রোগির দেহাবশেষ পরীক্ষা করেন। এছাড়া কী ধরণের ওষুধ ব্যবহার করে তিনি রোগিদের হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করতেন, তারও প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দারা।