বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্বের ২য় জনপ্রিয় চিকিৎসা ব্যাবস্থা হচ্ছে হোমিওপ্যাথি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে একটু না বললে এ প্যাথি সম্পর্কে ধারনা পরিষ্কার হবে না।
হোমিওপ্যাথি ১৭৯০ সালে আবিষ্কার হয় ডা. স্যামুয়েল হানিম্যানের হাত ধরে । (Homeopathy or homœopathy is a system of alternative medicine created in 1790 by Samuel Hahnemann, based on his doctrine of like cures like (similia similibus curentur), a claim that a substance that causes the symptoms of a disease in healthy people would cure similar symptoms in sick people.)
এলোপ্যাথি এম.ডি. ডিগ্রী ধারী ডাক্তার হওয়া সত্যেও এক সময় এলোপ্যাথি চিকিৎসার কুফল ও বারে বারে রোগ ফিরে আসে এই সবের প্রতি বিরক্ত হয়ে তখন তিনি এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ছেড়ে দিয়ে অনুবাদ করার কাজে মনোনিবেশ করেন। তখনকার সময়ে তিনি ১০টি ভাষার পান্ডিত্ব অর্জন করেন।“ উইলিয়াম কালেনের” মেডিসিন বিষয়ক একটি বই অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি দেখলেন , “সিঙ্কোনা গাছের ছাল কম্প জ্বর ভালো করতে পারে। তখন তার মনে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলো যেটা কম্প জ্বর ভালো করতে পারে সেটা কম্প জ্বর তৈরিও করতে পারে।এই কথার সূত্র ধরে তিনি তার শরীরে নির্দিষ্ট মাত্রায় সিঙ্কোনার রস সেবন করার পর তার শরীরে কম্প জ্বর দেখা দিলো। তখন তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন, যেটা রোগ ভালো করতে পারে সেটা রোগ তৈরিও করতে পারে। এই সূত্র ধরে তিনি হোমিওপ্যাথির সূত্রপাত করেন।
এভাবে প্রতিটা ঔষধ মানবদেহে পরীক্ষিত হয়ে তাদের শরীরে ও মনে কি কি প্রতিক্রিয়া/ উপসর্গ/ লক্ষন দেখা দিয়েছিলো তা লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। এখন কোন রোগী ঐসব উপসর্গ নিয়ে আসলে তখন পরীক্ষিত ঔষধ গুলোর মধ্যে যেটা তার সাথে পুরোপুরি মিলে সেই ঔষধটি দিলে রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। এটাই হোমিওপ্যাথির মূল কথা। ১৭৯০ সালে তার জন্ম,তার মানে হোমিওপ্যাথির বয়স ২২৮ বছর! সবচেয়ে লেটেস্ট চিকিৎসা পদ্ধতি। এই প্যাথির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর সঠিক চিকিৎসায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, সহজে সেবন করা যায়, সাশ্রয়ী মূল্য। আরো বড় সুবিধা হচ্ছে এই ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immunity) বৃদ্ধি পায়,এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে একই সাথে অনেক রোগের উপকার পায়। আর এভাবেই দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হোমিওপ্যাথি।
বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য সেবা সবার দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার জন্যে চিকিৎসা পদ্ধতি সমন্বিত করে জনগণের সেবা দেয়ার চেস্টা করেছেন। পাকিস্থান আমলে ১৯৬৫ সালে সরকারি ভাবে হোমিওপ্যাথি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে একটি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসেন। ১৯৮০ এর দশকের শেষে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনে ৫ বছরের গ্রাজুয়েশন কোর্স প্রবর্তন করা হয়। সরকারী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় “সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল” যা মিরপুরে অবস্থিত। বর্তমানে বাংলাদেশে বহু ডিপ্লোমা হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ থাকলেও গ্র্যাজুয়েট কলেজ আছে দুটি। একটি সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল আর একটি বেসরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যা জয়কালি মন্দির, গুলিস্তানে অবস্থিত। এই গ্রাজুয়েশন কোর্স পরিচালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসী ফ্যাকাল্টির অধীনে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই কোর্স ও এক বছর ইন্টার্নী যা এম. বি. বি. এস. এর সমমান। এম. বি. বি. এস. কোর্সে যে সব বই পড়ানো হয় তার সবই এখানে পড়ানো হয়, পার্থক্য শুধু মেডিসিনের বই।
আর, আমাদের সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজর যে সকল শিক্ষক আছেন তাদের অর্ধেকই বি. সি.এস. ক্যাডার এম. বি.বি.এস. ডাক্তার, যারা এলাইড (allied) বিষয়ে পড়াচ্ছেন। এখানে লেখাপড়ার পরিবেশ অনেক ভালো, খরচ ও অনেক কম, আছে হোস্টেলের সুবিধা।
৫ বছর শেষে ইন্টার্নী করা হয় কলেজ সংলগ্ন সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ইন্টার্নী শেষে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয় স্বাস্থ অধিদপ্তরের (DG Health) থেকে। বর্তিমানে HPSNP প্রজেক্টের আওতার ৯৮ জন ডাক্তার নিয়োগ পেয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ কম্পপ্লেক্সে কর্মরত অবস্থায় আছেন। আরো বহু পদ সৃষ্ট হয়ে আছে যা নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন। চাকরি না পেলেও প্রাক্টিস করে ভালো ভাবে থাকা যায়। এমন অনেক ভাল প্রাক্টিসনার আছেন যাদের চেম্বারে প্রচুর রোগী । এসব রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই এলোপ্যাথি চিকিৎসা ফেরত। তাই দক্ষ ডাক্তার হতে পারলে একসাথে উপার্জন ও যন্ত্রনা কাতর মানুষের সেবাও করা যায়।