ইসরাইলে আগাম নির্বাচন: হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটিতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের জোট শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্যের জেরে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। রোববার সরাসরি সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, এখন আগাম নির্বাচন আয়োজন করা হবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক। কারণ, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো নয়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে গাজার সশস্ত্র হামাস গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরাইলের অস্ত্রবিরতির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেন নেতানিয়াহুর জোটসঙ্গী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এরপরই সমস্যা শুরু হয়। বর্তমানে নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এই পদে বসেছেন। কিন্তু অন্য জোট শরিকরা বিষয়টি মানছে না।

এই প্রেক্ষিতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এমন এক সময়ে সরকার উৎখাত করা বা আগাম নির্বাচনে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এখনও পুরো এক বছর বাকি। এখন আমরা যুদ্ধের চূড়ায়।এই লড়াইয়ের মাঝে পালিয়ে যাওয়া যায় না। এই লড়াইয়ের মাঝে আপনি রাজনীতি খেলতে পারেন না। ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা যেকোনো রাজনীতির উর্ধ্বে। এই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা যেকোনো ব্যক্তিগত বিবেচনার উর্ধ্বে।’
গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান ও তার দল ইসরাইল বেইতেইনু দল শাসক জোট থেকে সরে যায়। ফলে বর্তমানে পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাত্র ১ ভোটের।

শুক্রবার এ নিয়ে আলোচনা হয় নেতানিয়াহু ও জোটের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী নাফতালি বেনেটের মধ্যে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় আলোচনা। তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ দেওয়া না হলে জোট থেকে নিজের দল হাবায়িত হায়েহুদিকে প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছেন বেনেট। বেনেটের দল জোটের তৃতীয় বৃহত্তম দল। এটি চলে গেলে নেতানিয়াহুর সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে।
এছাড়াও অর্থমন্ত্রী মোশে কাহলুনের দল কুলানু সরকারী জোটের অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাহলুন বলেছেন, তার মনে হচ্ছে না যে জোট আর চলবে।

সঙ্কটের শুরু হয় গত রোববার থেকে। সেদিন ছদ্মবেশী একটি ইসরাইলি সেনা কমান্ডো ইউনিট গাজায় প্রবেশ করে, যেটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস।

এ সময় ইসরাইলি ট্যাঙ্ক ও বিমান থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয় গাজায়। পাশাপাশি ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ে ওই কমান্ডো ইউনিট। তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ৭ হামাস সদস্য ও ওই কমান্ডো দলের অধিনায়ক নিহত হন। এর পরপরই ৪৮ ঘণ্টায় ইসরাইলের দিকে প্রায় ৪৬০টি রকেট ও মর্টাল ছুড়ে হামাস।

২০১৪ সালের যুদ্ধের পর দু’ পক্ষের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। এরপর ইসরাইল হামাস সদস্যদের লক্ষ্য করে ১৬০টি বিমান হামলা চালায়। এতে গাজায় আরও ৭ জন ও ইসরাইলে ১ জন নিহত হয়। পরে মঙ্গলবার মিশরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরাইল অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়।

কিন্তু নেতানিয়াহু সরকার কেন অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হলো তা মানতে পারেন নি লিবারম্যান ও বেনেট। তারা বিষয়টিকে হামাসের সামনে ইসরাইলের আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখছেন। এরই প্রেক্ষিতে লিবারম্যান পদত্যাগ করেন। আর বেনেট প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *