২০০৯-এ টেস্ট অভিষেক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সে বছর মাত্র দুটি টেস্টই খেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে পরের বছরের শুরু থেকেই কাটছিল দারুণ সময়। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় জানুয়ারিতে খেললেন অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস। পরের মাসেই নিউজিল্যান্ডে পেয়ে গেলেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু কে জানতো সেই বছর থেকেই টেস্টে ব্যাটিং তার সঙ্গে নিবেন আড়ি। একে একে ৮ বছর কেটে গেছে এর মধ্যে ১৫টি ফিফটি এলো কিন্তু সেঞ্চুরি যেন সোনার হরিণ। এ সময়ে তাকে কতবার যে শুনতে হয়েছে ‘টেস্টে চলে না’ মাহমুদুল্লাহ! কিন্তু হাল ছাড়েননি, ভেঙে পড়েননি সুদিনের অপেক্ষায়।তবে ২০১৮তে যেন সেই সুদিনের সন্ধান পেলেন। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার যখন প্রশ্নের মুখে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পেলেন লড়াকু এক সেঞ্চুরি। এক মাস না কাটতেই গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুধু সেঞ্চুরিই পাননি, খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬ রানের ইনিংস। বলতে গেলে তার ব্যাটে ভর করেই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস খুঁজে পেয়েছে নবমবার ৫০০ রানের সংগ্রহ। এমন ব্যাটিংয়ে টেস্টে মাহমুদুল্লাহর পুনর্জনম হয়েছে বললেও ভুল হবে না। নিজেকে ফিরে পাওয়ার রহস্যও জানিয়েছেন দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে। জানিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে তার জন্ম নেয়া নতুন মানসিকতার কথা। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার মাসিকতায় পরিবর্তন এনেছি।’ হয়তো বা সে কারণেই নিজের এই সেঞ্চুরিটা উৎস্বর্গ করেছেন ‘মা’ কে।
ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন টসে জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু দলের স্কোর বোর্ডে ১৯০ রান উঠতেই হারিয়ে ফেলে পাঁচ উইকেট। তখন ক্রিজে লড়াই করে যাচ্ছিলেন দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সঙ্গ দিতে এসে বুঝলেন দলকে সিরিজ জয়ের লড়াইয়ে রাখতে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের বিকল্প নেই। প্রথম দিন থেকে দ্বিতীয় দিন চা বিরতি পর্যন্ত সেই দায়িত্বই যেন পালন করলেন রিয়াদ। আগের দিন সাকিবের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি বেঁধে যে আশার পথ দেখিয়ে ছিলেন। পরদিন অধিনায়ক ফিরে গেলেন ৮০ রানে। তার আগে জুটি বেঁধেছেন ১১১ রানের। এবার সহ- অধিনায়কের দায়িত্বটা আরো বেড়ে যায়। কারণ সাকিব যখন আউট হন তখন দলের স্কোর ৩০৯। মিরপুর শেরেবাংলার উইকেটের রহস্যময় আচরণের কারণে যা নিরাপদ নয় বলেই মনে হচ্ছিল। কারণ ক্যারিবীয় বোলাররা সুবিধা করতে পারছিল না। ধারণা করা হচ্ছিল উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য নিরাপদ। সে কারণেই লিটনকে নিয়ে চললো মাহমুদুল্লাহর লড়াই। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই তার ব্যাট ৮৮ বলে ফিফটি ছুঁয়েছে। এবার সেঞ্চুরির অপেক্ষা। কিন্তু তাকে দারুণ সঙ্গ দিতে থাকা লিটনও ফিরে গেলেন। ক্রিজে এসেছিলেন এ বছর তার টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে মিরাজও হাল ছাড়লেন। কিন্তু তাইজুল যেন বুঝেছিলেন মাহমুদুল্লাহর ব্যাটের আকুতি। সঙ্গ দিলেন তাকে টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি পর্যন্ত।
পরের ৫০ রান করতে রান তোলা অবশ্য সহজ হয়নি। দুইবার জীবন তার মধ্যে খেলেছেন ১১৫ বল। অবশেষে এসেছে তার পুনর্জন্মের নিদর্শন সেঞ্চুরি ২০৩ বলে। তবে এর মধ্যে তিনি দলকে দিয়েছেন নির্ভরতা। স্কোর বোর্ডে জমা পড়েছে সিরিজ জয়ের জন্য ৫০৮ রানের স্বস্তি। আউট হয়েছেন ২৪২ বল খেলে। সাকিবের সঙ্গে শতরানের আর লিটনকে নিয়ে গড়েন ৯২ রানের জুটি। মিরাজের সঙ্গে ২৩, তাইজুলের সঙ্গে ৫৬ ও সব শেষ নাঈমের সঙ্গে বাঁধেন ৩৬ রানের জুটি। গোটা ইনিংসে ছিল তার ১০টি চারের মার।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরিটি দলকে জয়ের পথ শক্ত করেছিল। গতকাল আরেকটি সেঞ্চুরি করলেন সহ-অধিনায়ক হিসেবে। এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংস দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১০ ইনিংসে একটিও ফিফটির দেখা মেলেনি। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো তাকে টেস্টে অচলই বলে দিয়েছিলেন। তবে সেই মাহমুদুল্লাহও টেস্টে ফিরে পেলেন নিজেকে ৩২ এ এসে।