৫ মাস আগে অ্যান্টিগা ও গায়ানাতে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ হেরেছিল সাকিব আল হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস সহায়ক উইকেটে গতি দানবদের সামনে ভেঙে পড়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। এমন পরাজয়ের লজ্জায় প্রশ্ন উঠেছিল টাইগারদের টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়েও! কিন্তু সাকিব মনে মনে জ্বেলে রেখেছিলেন প্রতিশোধের আগুন। দেখিয়ে দেয়ার দাবি ছিল দলের কাছে। সেই দাবি মিটিয়েছে টাইগাররা। ক্যারিবীয়দের নিজেদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে ফিরিয়ে দিয়েছে হারের যন্ত্রণা। তাতে মিলেছে অধিনায়কের দারুণ প্রশান্তি। গতকাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব আল হাসান উৎফুল্ল চিত্তে তুলে ধরেন লড়াইয়ের অন্তরালের কথা।সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কি জবাব দেয়া হলো?
সাকিব: জবাব দেয়া না, তবে এখন হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ের একটা অ্যাডভান্টেজ থাকে। ওরা ওদের হোমের অ্যাডভান্টেজ নিয়েছে আমরা আমাদের হোমের অ্যাডভান্টেজটা নিতে পেরেছি। ওভাবে হারার পর আমাদের অবশ্যই অনেক কিছু প্রমাণ করার ছিল। অন্তত দেশের মাটিতে, সেটা আমরা করতে পেরেছি। আমি প্রতিটি টিমমেটকেই ধন্যবাদ জানাই, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই যে এই জিনিসটায় বিশ্বাস করেছে, সিরিজ শুরুর আগে। সত্যি কথা বলতে, আমি অনেক ডিমান্ডিং ছিলাম এই সিরিজটাতে। সবার কাছেই খুব বেশ করে চাচ্ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ সবাই যার যার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। কেউ হয়তো সফল হবে কেউ হবে না। সবার মনের ভেতর ওই বিশ্বাসটা ছিল, সবাই দলের জয়ের জন্য কন্ট্রিবিউশন রাখতে চায়।
প্রশ্ন: এতদিন ফলোঅনে পড়ে হারতেন এবার তা ফিরিয়ে দিয়ে কেমন লাগছে?
সাকিব: আমরা একশ’র উপরে টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। এই প্রথম এমন কিছু করলাম। অবশ্যই স্পেশাল কিছু। ১৮ বছরের মতো টেস্ট খেলেছি, এই ফার্স্ট টাইম এরকম কিছু হলো। এর ভেতরে আমরা কিন্তু ছোট টিমের সঙ্গেও খেলেছি। তারপরও আমরা এমন কিছু করতে পারিনি। সো এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন আমি মনে করি। এর আগে আমাদের উপরের কোনো টিমকে হোম কন্ডিশনে হোয়াইটওয়াশ করিনি। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের জন্য সিরিজটি অনেক বড় পাওয়ার সিরিজ ছিল।
প্রশ্ন: ৫ মাস আগে উইন্ডিজের বিপক্ষে হার মনে কতটা গেথে রেখেছিলেন?
সাকিব: হ্যাঁ, কারণ আমি মনে করি যে আমরা যারা প্রতিটা প্লেয়ার ছিলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে, আমরা কেউই এধরনের পারফরমেন্স এক্সপেক্ট করি নাই। আমরা এমন হারের পর মিটিং করেছি, তারপর শক্তভাবে কামব্যাক করেছি ওয়ানডে-টি-টুয়েন্টিতে। যেহেতু আমরা টেস্ট ফরমেটে ভালো করিনি, আমাদের হোমে একটা সুযোগ ছিল প্রমাণ করার। ওই কারণেই আমরা চেয়েছিলাম কিছু একটা করি।
প্রশ্ন: মিরাজের বোলিংয়ে কতটা সন্তুষ্ট?
সাকিব: আমার কাছে মনে হয় আজ সারাদিনে ও অনেক ভালো বোলিং করেছে। ইনফ্যাক্ট কালকে থেকেই ও ভালো বোলিং করেছে। ও যদি ওর মাথাটা সিমপল করে রাখে, প্ল্যানিংটা সিম্পল রাখে তাহলে ও আরো ভালো বোলিং করতে পারবে। ও অসাধারণ বোলিং করেছে অবশ্যই। ফার্স্ট ইনিংসের বোলিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা যেহেতু পাঁচশ রান করেছিলাম, একটা বড় অ্যাডভান্টেজ ছিল। আমরা কখনই চিন্তা করিনি এত কম রানে ওদেরকে অলআউট করতে পারবো। ওই বিশ্বাসটা ওর বোলিংয়ের কারণেই এসেছে।
প্রশ্ন: সিরিজ শুরুর আগে আপনার শঙ্কা?
সাকিব: সত্যি কথা বলতে, প্রথম টেস্টটা আমি খেলতে চাইনি। একমাত্র কোচের কারণেই খেলাটা হয়েছে। আমি কখনই খেলতাম না। আমাকে যতবার বলেছে, আমি বলেছি আমি পারবো না। কারণ আমার ঐ বিশ্বাসই ছিল না। আপনারা যদি আমার বোলিং দেখেন, আমি তিন-চার ওভারের স্পেল করেছি। কারণ আমার শরীরের অবস্থাই ওই রকম ছিল না। কিন্তু ও যেটা বলেছে যে, তুমি ম্যাচ খেলেই ফিট হতে পারবা। আমার মনে হয় আমি একমাত্র প্লেয়ার ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে যে ম্যাচ খেলে ফিট হই। তবে একটা জিনিস ভালো যে আমি যে ছোট ছোট কন্ট্রিবিউশন করতে পেরেছি, স্পেশালি নতুন বলে ব্রেক থ্রু গুলো আমার কাছে মনে হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রশ্ন: চার স্পিনার ফর্মুলা কি চলতেই থাকবে?
সাকিব: ওদের উইকনেস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ও আমাদের স্ট্রেন্থের কথা চিন্তা করেই, আমাদের জন্য এমন টিম কম্বিনেশন তৈরি করা আইডিয়াল ছিল। সেটাই আমরা করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরা কতটা স্বস্তির?
সাকিব: ভালো উইকেট পেলে কিন্তু ব্যাটসম্যানরা রান করেছে। এমন না যে করি নাই। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চিটাগাংয়ে কিন্তু দুই টিমই অনেক রান করেছে। তারপর আমরা যেই ধরনের উইকেটে খেলেছি, হোমে কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজে সব কিছু টাফ উইকেট ছিল। কেউই ৫০০ রান করতে পারে নাই। শুধু বাংলাদেশ না, প্রতিপক্ষও করতে পারেনি। ব্যাটসম্যানদের ওপর সব সময় দোষ চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। এখন দলের জেতার জন্য যেটা করা দরকার সেটাই করেছি। আগে ফ্ল্যাট উইকেট বানিয়ে ৫০০ রান করে ড্র করার চেষ্টা করা হতো। এখন সেটা আমরা করি না। আমরা এখন প্রতি ম্যাচ জেতার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: কোন ফরমেট উপভোগ করেন?
সাকিব: টেস্টটা শুরু হওয়ার আগে সবচেয়ে কষ্ট লাগে। টেস্ট জিতে গেলে সবচেয়ে আরাম লাগে। কালকেই ড্রেসিং রুমে বলছিলাম, টেস্ট জেতার যে মজা, যে সন্তুষ্টি সেটা অন্য কোনো ফরমেটে নেই। বড় বড় ম্যাচ তো জিতেছি কিন্তু ওই মজাটা তো টেস্টের মতো লাগে না। কিন্তু শুরুর আগে অনেক কষ্ট লাগে, টেনশন হয়। পাঁচদিন খেলা, বয়স হয়ে যাচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে খেলার আগে কষ্ট লাগে। যখন খেলার ভেতরে ঢুকে পড়ি, ব্যাটিংয়ে রান করি, বোলিংয়ে উইকেট পাই তখন অনেক বেশি মজা লাগে।