সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ভিডিও চিত্র ও ছবি নিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সময়ের কন্ঠস্বরের বগুড়া করেসপন্ডেন্ট এম নজরুল ইসলাম সহ কয়েকজন সাংবাদিক। এসময় হিরো আলমের দুটি মোবাইল ফোন ও নববার্তার বগুড়া প্রতিনিধির ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে।
বগুড়া-৪ আসনের নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা ভোটকেন্দ্রে এঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছে এবং ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রোববার (৩০ ডিসেম্বর) ভোট গ্রহনের দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চাকলমা ভোট কেন্দ্রে যান ‘সিংহ’ প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল হোসেন হিরো আলম। সঙ্গে ছিলেন কয়েকটি গনমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
হিরো আলম অভিযোগ করেন, কেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোট কক্ষে দেখতে পান ব্যালট পেপার নেই। হিরো আলমের এজেন্টও নেই। পাশের একটি কক্ষে ব্যালট নিয়ে দরজা বন্ধ করে আছেন কয়েকজন। ভোট কক্ষের সামনে অবস্থান করছিল স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী। হিরো আলম তাদেরকে ভোট কেন্দ্রের বাইরে যেতে বলেন এবং ভোটারদের তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নৌকা প্রতীকের লোকজন। সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে ওই কক্ষের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন হিরো আলম। এসময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কৃষকলীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি শাহজাহান আলী, নন্দীগ্রাম শহর কৃষকলীগের লাল চাঁন, চাকলমা গ্রামের কৃষকলীগের কর্মী মানিক সহ নৌকার লোকজন হিরো আলমের ওপর চড়াও হয়। ওরা হিরো আলমকে বলছিল, তুই কে ! ভাগ এখান থেকে। নানা অশ্লিল ভাষায় গালাগালি করে হিরো আলমকে ধাক্কা দিয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করছিল। হিরো আলমের সমর্থকরা এগিয়ে এলে নৌকার সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে মারধর শুরু করে। মারপিটে হিরো আলমের কর্মী সেলিম, মালেক, রবি সহ অন্তত ৫জন আহত হয়। মারপিটের ভিডিও চিত্র ও ছবি নিতে গেলে সাংবাদিকদেরও ধাক্কা দেয়া সহ মারধর করে নৌকার সমর্থকরা।
ওরা বলছিল, তোরা বালের সাংবাদিক। তোদেরকে এখানে কে আসতে বলেছে। ভাগ সালারা, তোদের ক্যামেরা . . . ঢুকিয়ে দেব। ক্যামেরা দে, বলেই ধরধর করে ছুটে এসে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। সময়ের কন্ঠস্বরের বগুড়া করেসপন্ডেন্ট নজরুল ইসলামের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নববার্তার বগুড়া প্রতিনিধি রাসেল এর কাছ থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। এরপর হিরো আলম সহ সাংবাদিকদের জোরপূর্বক কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুরু হলে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কে ছোটাছুটি করে। অবাক দৃষ্টিতে দেখছিলেন ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত জনতাও। ঘটনাস্থলে একজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তিনি নিবর ভুমিকা পালন করেছেন।
এঘটনার পরপরই বগুড়ার একটি হোটেলে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে ভোট বর্জন করেন এই সময়ে ব্যাপক আলোচিত প্রার্থী হিরো আলম। পরে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের সাথে সরাসরি দেখা করে লিখিতভাবে ভোট বর্জন করেন তিনি।
অভিযোগে বলা হয়, নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিল না। সিংহ প্রতীকের কোনো এজেন্টদের কেন্দ্রে আসতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্রগুলো দখলে নিয়েছিল নৌকার সমর্থকরা। যেগুলোতে এজেন্ট গিয়েছিল, সেখান থেকে তাদের বের করে দিয়েছে। হিরো আলম নিজেও ভোট কেন্দ্রে গেলেও তাকে ভোটকক্ষে ঢুকতে দেয়নি। মারধর করা হয়েছে। একাধিক ভোট কেন্দ্রে হামলা ও ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেন হিরো আলম।
সোমবার দুপুরে হিরো আলম মুঠোফোনে জানান, হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে দিয়েছি। নন্দীগ্রাম থানা পুলিশকেও বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। আমার দুটি মোবাইল ফোন ও সাংবাদিকের ক্যামেরা উদ্ধারের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি। সেইসাথে হামলার ভিডিও চিত্র দেখে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন হিরো আলম।