কানে ভোঁ ভোঁ ঝিঁ ঝিঁ শোঁ শোঁ শব্দ করলে কী করবেন?

প্রতি পাঁচজনের একজন টিনেটাসে ভুগে থাকেন। বয়সজনিত কারণে কানের সমস্যা, ইনজুরি অথবা সারকুলেটুরি সিস্টেম ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ রূপেও কানে টিনেটাস হতে পারে । যদি কোনও ব্যক্তি কানে ভোঁ ভোঁ, বাতাসের শব্দ শোঁ শোঁ , ঘণ্টার ধ্বনি অনবরত শুনতে থাকে তখন এ ধরণের কন্ডিশনকে বলা হয় টিনেটাস। যুক্তরাজ্যে প্রায় ছয় মিলিয়ন মানুষ টিনেটাসে ভুগে থাকেন। এ সমস্যায় নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হন।
কারণ
টিনেটাস রোগের সমস্যা কানের মধ্যে হলেও এর উৎপত্তিস্থল মস্তিষ্ক। আমাদের মস্তিষ্ক অনেক নার্ভ দিয়ে গঠিত। একেক নার্ভের কাজ একেক রকম। মস্তিষ্কের যে অংশ দিয়ে শব্দ প্রক্রিয়াজাত করা হয় সেই অংশের নাম হল অডুটরি করটেক্স। আর এই অংশের মধ্যে থাকে অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভ ভেসটিবুলোকোকলিয়ার।এই নার্ভের সমস্যা হলে টিনেটাস হয়ে থাকে।
এছাড়াও অন্তঃকর্ণের কোষের সমস্যার কারণে টিনেটাস হতে পারে। আমাদের কানের ভেতর ক্ষুদ্র লোম আছে যেগুলো শব্দ তরঙ্গের সাথে নড়াচড়া করে। এই কোষগুলো এক ধরণের ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক এই সিগন্যালের প্রতিক্রিয়া রূপে সিগন্যাল পাঠায়। এজন্য আমরা শব্দ শুনতে পাই।
যদি এই লোমগুলো ছিঁড়ে যায় বা সঠিকভাবে কাজ না করে তখন মস্তিষ্কে অনিয়মিত এবং ভুল ইলেকট্রিকাল ইমপালস পৌঁছায় যার ফলে টিনেটাস আক্রান্ত ব্যক্তি কানে অ্যাবনরমাল শব্দ যেমন- ভোঁ ভোঁ ঝিঁ ঝিঁ শোঁ শোঁ ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পায়। এছাড়াও উচ্চ শব্দ স্বর, কানে ময়লা জমা হলে এবং কানের মধ্যে এবনরমাল বোন বেড়ে গেলেও টিনেটাস হতে পারে।
রিক্স ফ্যাক্টর
বয়স, উচ্চ শব্দ স্বর, লিঙ্গ, ধূমপান, কার্ডিও ভাসকুলার সমস্যা ইত্যাদি।
জটিলতা
ক্লান্তি, মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগে অসুবিধা, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং বিরক্তি।
চিকিৎসা
এই রোগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত ফলদায়ক। ফিজিওথেরাপি কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন যুগান্তকারী আধুনিক চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে টিনেটাস থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায়। ফিজিওথেরাপিউটিক এক্সারসাইজ মধ্যে রয়েছে- দুই হাত দিয়ে কানের পেছন থেকে সামনের অংশে ৭০-৭৫ বার ঘষতে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুলসোজা রেখে কানের ভেতরে ও বাইরে নিন। ৭০-৭৫ বার এই এক্সারসাইজটি করুন।
দুহাত মাথার পিছনে নিয়ে ঘাড়ের উপরের অংশে যে গর্ত আছে ঠিক তার উপরে যে উঁচু জায়গা আছে সেখানে ইনডেক্স ফিংগার দিয়ে ৭০-৭৫ বার মাথায় চাপ দিন। এরপর কপালের দুপাশে ঘষতে হবে (৫-১০) বার। মাথার পেছনে, কানের উপরে ও পাশে কিছু ট্রিগার পয়েন্ট আছে যেগুলোতে ডিপফ্রিকশন করলে অল্প দিনের মধ্যে টিনেটাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আমরা অনেকেই উচ্চস্বরে হেডফোনে গান শুনি, বাদ্যযন্ত্র বাজাই, পিস্তল এবং মেশিনগান চালাই এতে টিনেটাস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই অবশ্যই এসব কাজ করার আগে কানের প্রোটেকশন ব্যবহার করতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে প্রচুর পানি পান করুন, ধূমপান বর্জন করুন। প্রতিদিন এক্সারসাইজ করুন। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন এবং সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *