• সংসদে সংরক্ষিত আসন ৫০টি
• এবার আওয়ামী লীগ পাবে ৪৩টি
• জাতীয় পার্টি ৪টি, ঐক্যফ্রন্ট ১টি
• অন্যরা সবাই মিলে ২টি পাবে
• প্রথম দিন আ.লীগের ৬০৭ ফরম বিক্রি
• পুরোনো বেশির ভাগই বাদ পড়ছেন
• বাছাইয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে ছয়টি বিষয়
মন্ত্রিসভার মতো একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন আসছে। গত সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করা বেশির ভাগ নারী সাংসদই বাদ পড়ছেন। অতীতে সাংসদ হননি এমন মুখকেই এবার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বয়সে তরুণ যেমন থাকছেন, প্রবীণেরাও থাকছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রগুলো বলছে, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত নারী সাংসদদের প্রাথমিক একটা তালিকা ইতিমধ্যে করেছেন। এতে পুরোনোদের মধ্য থেকে চার-পাঁচজনের বেশি স্থান হবে না। নতুনদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে মোটা দাগে ছয়টি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর বা তাঁর আস্থাভাজন ছিলেন এমন নেতাদের স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্য; ২. ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁদের সার্বক্ষণিক পাশে পেয়েছেন, সেসব নেত্রী ও তাঁদের পরিবারের সদস্য; ৩. শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের সন্তান ও পরিবারের সদস্য; ৪. যেসব নেতা বা সাবেক সাংসদকে দল ও জোটের সমঝোতার কারণে এবার মনোনয়ন দেওয়া যায়নি, তাঁদের স্ত্রী-সন্তান; ৫. দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেসব বর্তমান ও সাবেক নেত্রী বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে-সংগঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন; ৬. পেশাজীবী, চলচ্চিত্র তারকা।
সংসদে সংরক্ষিত আসন ৫০টি। ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে দল বা জোটের পাওয়া আসনের সংখ্যানুপাতে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন হয়। এবার আওয়ামী লীগ পাবে ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, ঐক্যফ্রন্ট ১টি ও অন্যরা সবাই মিলে ২টি।
মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু
সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন দেওয়ার লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার ফরম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা। প্রথম দিনই ৬০৭টি ফরম বিক্রি হয়েছে। ফরম বিক্রির শেষ তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
গতকাল সকাল ১০টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কার্যালয়ের দুই ভবনে চারটি করে মোট আটটি বিভাগের ফরম বিক্রি হচ্ছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম কেনেন।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ফরম কেনার পর বলেন, ‘নারীরা সচেতন হচ্ছে। তৃণমূলে নারীদের রাজনীতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাই প্রতিযোগিতা বেশি। এখান থেকেই নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে।’
দলের সঙ্গে ৪৫ বছর ধরে যুক্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হোসনে আরা। তিনি ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ছিলেন। তিনি বলেন, দিন দিন রাজনীতিতে নারীরা আগ্রহী হচ্ছেন। তাই এবার আগের চেয়ে প্রার্থী অনেক বেশি।
মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভানেত্রী বনশ্রী বিশ্বাস ১৯৯৬ সাল থেকে সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। এবার তিনি আশাবাদী মনোনয়ন পাবেন।
তারকাদের মধ্যে চিত্রনায়িকা সারাহ্ বেগম কবরীও ফরম নিতে যান। ফরম কিনেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল আলম শাকিলের স্ত্রী নিলুফার আনজুম। সংরক্ষিত আসনে সাংসদ হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিজয়ের পর ধর্ষণের শিকার পূর্ণিমা রানী শীলও।
তফসিল ১৭ ফেব্রুয়ারি
আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। প্রতিটি দল বা জোটের ভাগে পাওয়া আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করার বিধান আছে। তবে সাধারণত, নারী আসনে সব দল একক প্রার্থীই দিয়ে থাকে। ফলে নির্বাচনের দরকার পড়ে না। এবার আওয়ামী লীগও একক প্রার্থীই দেবে।
নেতাদের বাসা–অফিসে তদবির
গত কয়েক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, আগ্রহীরা নারীনেত্রীরা আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের বাসায়-অফিসে গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দল টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। সাংসদ হওয়া সব সময়ই আকর্ষণীয় বিষয়। নেতা, কর্মী, ব্যবসায়ী ও তারকারা যেভাবে ফরম কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন, নেতাদের বাসায়-অফিসে তদবির শুরু করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে সংরক্ষিত নারী সাংসদের পদও বেশ লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আগ্রহী নারীনেত্রীদের তদবির না করার বিষয়ে দলীয় প্রধান পরামর্শ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সংসদীয় বোর্ড ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা একক প্রার্থী ঠিক করবেন। তবে সংরক্ষিত আসনে নতুনদের স্থান দেওয়ার চেষ্টা থাকে। এবারও সে রকমই হতে পারে। ফলে বড় পরিবর্তন হতেই পারে।