বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে রশিদ ছিনতাই ও হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্বাধীনতা পরিষদ। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে স্বাধীনতা পরিষদের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম। ‘হামলার’ সময় মনোনয়নপত্র জমার প্রমাণপত্রও ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং এতে বিজিএমইএ সদস্য ও সদস্যদের ৪ জন প্রতিনিধিসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। আক্রান্তরা হলেন- এম এইচ মোশতাক চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, শাহজাহান শেখ, আতিনুর রহমান ও আকরাম আলি।
তবে এই ধরনের হামলার কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই সমিতির নির্বাচনী পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। মানববন্ধনে পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম
বলেন, বিজিএমইএর নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন গতকাল। স্বাধীনতা পরিষদের পক্ষ থেকে বিজিএমইতে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য গিয়েছিলাম। আমরা সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন কমিশনারের কাছে মনোনয়ন দাখিল করি এবং নির্বাচন কমিশনার সেই মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন।
এরপর নির্বাচন কমিশন রশিদ দেয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ফেরার পথে তাদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী রশিদ কেড়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এরপর আমরা নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়টি জানাই। নির্বাচন কমিশন আমাদের মনোনয়ন গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে।
হামলাকারী হিসেবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কোনো কারখানার মালিক না হলেও গত ৩-৪ বছর ধরে বিজিএমইএতে ঘোরাফেরা করছে। এই হামলার পেছনে বিজিএমইএ’র কারও ইন্ধন রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, এরা কার অনুসারী, পোশাক মালিকরা তা ভালো করেই জানেন। আমি এই মুহূর্তে কারও নাম বলতে চাই না। হামলার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের একজন সদস্যকে জানানো হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর।
নির্বাচনী বোর্ডের সচিব মেজর রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছিল। স্বাধীনতা পরিষদের নেতারাও আসেন। কিন্তু কারও ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাইনি। কিংবা এ ধরনের কোনো খবর শুনিনি।
?দুই বছর মেয়াদি বিজিএমএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে প্রায় ৫ বছর পর আগামী ৬ই এপ্রিল নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৬ই মার্চ। এর আগে ২০১৫ সালে বিজিএমইএ’র নেতৃত্ব নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্যানেল সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুরকে সভাপতি করে একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছিল। এরপর পর্ষদের মেয়াদ কয়েক ধাপে বাড়িয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বিজিএমইতে ৩৫টি পরিচালক পদ আছে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ২৬টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৯টি। ২০১৩ সালের পর থেকে বিজিএমইএতে সরাসরি সদস্যদের ভোটে নির্বাচন হয়নি। সাবেক সভাপতি সংগঠন একবার ‘ফোরাম’ ও একবার ‘সম্মিলিত পরিষদ’ থেকে সভাপতি মনোনয়ন দিয়ে আসছে।
সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের আধিপত্য ভাঙতে আলাদাভাবে প্যানেল দিতে যাচ্ছে স্বাধীনতা পরিষদ।
জানা গেছে, তিন দফায় বিজিএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল প্রায় দেড় বছর। ফের সমঝোতার মাধ্যমেই কমিটি গঠন করতে চাচ্ছে ফোরাম ও পরিষদ। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে স্বাধীনতা পরিষদকে নিয়ে। সমঝোতা নয় নির্বাচন চায় স্বাধীনতা পরিষদ।
স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটের প্রক্রিয়া না থাকলে ভোটারদের কদর থাকে না। ভোটারদের অধিকার আদায়ও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই যাইহোক নির্বাচন হওয়াটা জরুরি। তাহলে ভোটারদের অধিকারের বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হবেন নেতারা। কিন্তু এরই মধ্যে বিজিএমইএ’র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য স্বাধীনতা পরিষদের সদস্যদের ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়া একজন সদস্যের প্রতি এ ধরনের আচরণ সত্যি দুঃখজনক।
নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক স্বাধীনতা পরিষদের নেতারা বলছেন, সাধারণ সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারো নেতৃত্ব চাপিয়ে দিতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতিদের ফোরাম কাজ করছে। আবার সমঝোতার নির্বাচন করার দিকেই এগোচ্ছে তারা। যদিও সাধারণ সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান।