৬ উইকেট হারিয়ে ৭১৫ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করলো নিউজিল্যান্ড দল। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের করা ২৩৪ এর সুবাদে ইনিংস হার এড়াতে প্রয়োজন ৪৮১ রান। জবাব দিতে নেমে আবারো পথ দেখালেন ওপেনার তামিম ইকবাল। প্রথম ইনিংসের মতো সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার ব্যাট ৭৪ রানে থামতেই টাইগারদের সামনে তৃতীয় দিন শেষে উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে ইনিংস হারের শঙ্কা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৪ রানে হারায় ৪ উইকেট। কিউইদের প্রথম ইনিংস টপকাতে প্রয়োজন ৩০৭ রান। হাতে অবশিষ্ট ৬ উইকেট। আজ চতুর্থ দিনে হ্যামিল্টন টেস্টের লজ্জা এড়াতে মাঠে নামবেন ৩৯ রানে অপরাজিত থাকা সৌম্য সরকার। সৌম্য সঙ্গ দিবেন ১৫ রান করা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে। এখন দেখার বিষয় বাজে ব্যাটিংয়ের মহড়াতে কতটা পথ পাড়ি দিতে পারে সফরকারীরা! কিন্তু আগের ইনিংসে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছিল মাত্র ২৭ রানেই। যে কারণে নিউজিল্যান্ডের পেস বোলারদের সামনে হার এড়ানো অনেকটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে।
গতকাল ৪৮১ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ শুরু করেছিল দ্বিতীয় ইনিংস। দেশের বাইরে টেস্টের রেকর্ড রানের পাহাড়ে চাপাই পড়েছিল দল। কিন্তু ওপেনার তামিমের ব্যাটে শুরু থেকে সেই চাপের লেশও ছিল না। সঙ্গে তরুণ ওপেনার সাদমান ইসলামকেও দেখাচ্ছিল আত্মবিশ্বাসী। তাদের জুটিতে আসে ৮৮ রান। ঠিক তখনই আউট হলেন সাদমান। ৭১ বলে ৩৭ রান করেন তিনি। এবার তামিমকে সঙ্গ দিতে এসে আরো একবার ব্যর্থ মুমিনুল হক সৌরভ। দলকে আশার পথ না দেখিয়ে বোল্টের বলে বাজে এক শটে ৮ রানেই ফিরে জান সাজঘরে। দলের স্কোর তখন মাত্র ১০০ রান ছুঁয়েছে। হাল ধরতে এসেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু ওয়ানডের ইনজুরির ধকলে যেন নিজেকে হারিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। দলের স্কোর বোর্ডে কোনো অবদান না রেখেই আউট হন তিনি। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তামিম। সঙ্গ দিতে এসে সৌম্য সরকার তার সঙ্গে গড়েন ১৬ রানের জুটি। ঠিক সেই সময় যেন খেপাটে হয়ে উঠলেন দেশসেরা এই ওপেনার। প্রথম ইনিংসে ১২৬ রানের পর গতকাল তামিম করেছেন ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৮৬ বলে ৭৪। তখনই টিম সাউদির বলে কিপারের প্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন সাজঘরে। দারুণ ইনিংসের পথে সাউদির বাউন্সারে ‘ডাক’ করতে গেলে তামিমের ব্যাটের উল্টো দিকে লেগে ক্যাচ যায় কিউই উইকেটরক্ষকের গ্লাভর্সে। তার বিদায়ের পরই বাজতে শুরু করে ইনিংস হারের সুর। যদিও শেষ বিকালে টাইগারদের আশার আলো দেখিয়েছে সৌম্য ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ৪৮ রানের জুটি। কিন্তু সেই জুটি টাইগারদের ভাগ্য বদলাতে পারবে কিনা তা জানা যাবে আজ চতুর্থ দিনেই।
এর আগে কেন উইলিয়ামসনের ডাবল সেঞ্চুরি, নিল ওয়েগনার ও কলিন ডি গ্রান্ডহোমের ব্যাটিং ঝড়ে অসহায় হয়ে পড়ে বাংলাদেশের বোলাররা। ব্ল্যাক ক্যাপসরা গড়ে তুলেছিল দলীয় রানের রেকর্ড। হ্যামিল্টন টেস্টের তৃতীয় দিনে ৬ উইকেটে ৭১৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথমবার ৭শ’ রানের দেখা পেয়েছে দলটি। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৯০ ছিল আগের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। ৭০০ করেছে আগে শ্রীলঙ্কা দুইবার, ২০১৪ সালে ৬ উইকেটে ৭৩০, গত বছর ৯ উইকেটে ৭১৩। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে উইলিয়ামসন পূর্ণ করেছেন ২০ সেঞ্চুরি। নিজের ইনিংসটিকে নিয়ে গেছেন দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে। ইনিংসও ঘোষণা করে দেন তখনই। তিনে নামা উইলিয়ামসনের আগে দ্বিতীয় দিনে সেঞ্চুরি করেছিলেন দুই ওপেনার জিত রাভাল ও টম ল্যাথাম।
এমন ব্যাটিংয়ের বাংলাদেশের বোলারদের পড়তে হয় বিব্রতকর রেকর্ডে। দলের তরুণ অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ২৪৬ রান দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। যদিও উইকেট পেয়েছেন ২টি। শুধু মিরাজই নয়, রান খরচের সেঞ্চুরিতে নাম লেখিয়েছেন দলের স্পেশালিস্ট তিন পেসারও। আবু জায়েদ ১০৩, খালেদ আহমেদ ১৪৯ খরচ করেছেন। অভিষিক্ত ইবাদত হোসেন ১০৭ দিলেও নিয়েছেন ১ উইকেট। তবে দলের পার্ট টাইম পেস বোলার সৌম্য সরকার প্রথম ইনিংসে ব্যাটে ব্যর্থ হলেও করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। ২১ ওভারে ৬৮ রান খরচ করে নিয়েছেন ২ উইকেট।