ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে একচোখা হলে চলবে না। সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হবে বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। গতকাল দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে টিআইবি’র চলমান কার্যক্রমের মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিরূপণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডিএফআইডি, সুইডিশ ও ড্যানিশ দূতাবাসের সহায়তায় জেনেভাভিত্তিক নীতি ও কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের কার্যক্রম নিয়ে টিআইবির সমালোচনাকে দুদক সবসময় সাধুবাদ জানায়, তবে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থার সমালোচনা করতে হলে তাদের দেশের সমসাময়িক বাস্তবতা, পরিস্থিতি এবং সংস্কৃতিকে অনুধাবন করতে হবে। সমালোচনার সঙ্গে পরিত্রাণের উপায়ও বলতে হবে। সরকার বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল কোনো ভালো কাজ করলে তার প্রশংসাও করা উচিত। তাদের একচোখা হলে চলবে না, দুচোখা হতে হবে।
তিনি বলেন সরকারি-বেসরকারি এমনকি বৈদেশিক অর্থে পরিচালিত প্রতিটি সংস্থারই অর্থের মালিক জনগণ। তাই টিআইবিসহ প্রতিটি সংস্থার বাজেট, আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ থাকা উচিত।তাদের আয়-ব্যয়, কর্মপরিকল্পনা, অডিট কার্যক্রম শুধু ওয়েবসাইটে না রেখে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমেও মানুষকে অবহিত করা উচিত।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে টিআইবি’র আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় প্রকার সম্পর্ক রয়েছে। তবে অনানুষ্ঠিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে চাই না, কারণ এটা বেশ ফলপ্রসূ। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে কমিশনের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং উত্তম চর্চার বিকাশে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের আলোকেই টিআইবি’র সঙ্গে যৌথভাবে গণশুনানিসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, টিআইবি যাদের অর্থায়নে পরিচালিত হয় তাদের অবশ্যই প্রত্যাশা থাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সুশাসনের উন্নয়নে টিআইবি ভূমিকা রাখবে। টিআইবি সরকার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহকে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিতে পারে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ম্যাথিয়াস বস টিআইবি সম্পর্কে দুদক চেয়াম্যানের সুচিন্তিত মতামত, সমালোচনা এবং পরামর্শ জানতে চান। জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, জনগণের মাঝে টিআইবির ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। তবে এর কিছু সমালোচনাও শোনা যায়। টিআইবি দেশের শাসন প্রক্রিয়া তথা সরকার বা সরকারি সংস্থার যেকোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতিতেই উচ্চকণ্ঠ থাকে। তিনি বলেন, শুধু সমস্যা বা ত্রুটি তুলে ধরা টিআইবির কাজ হতে পারে না বরং এসব সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেয়ার সুযোগ তাদের রয়েছে। সমস্যা শনাক্তকরণের পাশাপাশি এর কারণ এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, টিআইবি’র একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি থাকা উচিত। সব বিষয়ে টিআইবি’র কথা বলা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকা উচিত। তারা দুর্নীতি, মেগাপ্রজেক্ট এবং সরকার নিয়ে যতটা উচ্চকিত। আবার মানসম্মত শিক্ষা, জনপ্রশাসনের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিসহ সুশানের অন্য যেসকল সূচক রয়েছে এগুলোর ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রমকে অনেকেই ততটা জোরালো বলে মনে করেন না। অর্থাৎ তাদের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
টিআইবির গবেষণা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, টিআইবির গবেষণার মেথডোলোজি স্বচ্ছ হতে হবে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাধ্যমিক ডাটা ব্যবহার করে অথবা ফোকাস গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ করে। তাদের উচিত প্রাথমিক ডাটা ব্যবহার করা। তাহলে তাদের গবেষণার ফলাফল ও বিশ্লেষণে ত্রুটি কম থাকবে এবং তাদের প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পরামর্শক মাহিন সুলতান এবং টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাফর সাদিক।