পাটকল শ্রমিক নিরপরাধ জাহালমের কারাভোগের ঘটনায় দায় নিতে চায় না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংকের নথির ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে জাহালমকে মামলার আসামি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দেয়া তথ্য আমলে না নিয়ে উপায় ছিল না। ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে জাহালমকে আসামি করায় এখন পাঁচটি ব্যাংকে হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় পক্ষভুক্ত করতে চাইছে দুদক।
আজ বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের নথির ভিত্তিতেই দুদক অভিযোগপত্র দিয়েছে। ব্যাংকের দেয়া নথির ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে এটি করা হয়েছে। জাহালমকে শনাক্ত করার দায়িত্ব ব্যাংকেরই। এ কারণে পাঁচটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে দুদক প্রথম অভিযোগপত্র দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যখন কোনো তথ্য-উপাত্ত পাঠায়, সেটা অবশ্যই আমলে নিতে হবে।এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আইনগত এখতিয়ার দুদকের নেই।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাকে (জাহালম) চিহ্নিত করেছেন। আমরা সে কথাগুলো হলফনামায় বলেছি। ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করতে যে আবেদন করা হয়েছে, আমরা তার শুনানি আগে চাচ্ছি। কারণ এখানে ব্যাংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, ব্যাংকগুলা এসে তাদের কথা বলুক।
গত ৩রা ফেব্রুয়ারি জাহালমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে নিরপরাধ জাহালমের মামলার বিশদ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। দুদকের আইনজীবী ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য চার সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দুদক হলফনামায় ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করার আবেদন করলো। পাঁচটি ব্যাংক হলো-বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।
দুদক দায় নিয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক না। তবু প্রশ্নের জবাবে বলছি, এই ঘটনায় দুদকের দায় কতটুকু কিংবা দায় আদৌ আছে কিনা-সেটা আদালত নির্ধারণ করবেন। কারণ আমি পাবলিক ডকুমেন্টের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে কাজ করেছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩১ ধারায় বলা রয়েছে, ‘আমি যদি সরল বিশ্বাসে কাজ করে থাকি তাহলে দায়মুক্তি পাবো।’ তাই আদালতকে আমরা বলেছি, এই ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করে আদালত যেন সবার কথা একই সঙ্গে শোনেন।
জাহালমের ঘটনায় দুদক দায়মুক্তির পথ খুঁজছে কিনা-জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই না। আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, সেটা আমরা পালন করছি।
খুরশীদ আলম খান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকও বলেছে এই কথা। ব্যাংকের ১৮টি শাখা এখানে জড়িত।
গত ৩০ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোয় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের নজরে আনা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত এটি নজরে আনেন। ওইদিনই আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ‘জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে নিরপরাধ জাহালমের গ্রেপ্তারের ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধি ও মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তাকে ৩ ফেব্রুয়ারি হাজির হতে বলেন।