‘ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁইয়ো না’, ‘আমার বলার কিছু ছিল না’, ‘ঠিকানা না রেখেই ভালো করেছ বন্ধু’, ‘সেই চিঠি খুঁজে পেলাম’ ও ‘আমি সুখী হলে’সহ এমন অনেক কালজয়ী গানের শিল্পী ওপার বাংলার হৈমন্তী শুক্লা। সত্তর বছর বয়সী এই শিল্পী এখনো নিয়মিত গান করছেন। গেল ১লা মার্চ বাংলাদেশে প্রকাশ হয় তার এবং ড. অরূপরতন চৌধুরীর গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের দ্বৈত অ্যালবাম ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার’। অ্যালবামটি প্রকাশ করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক। বাংলাদেশ সফরকালে মানবজমিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ওঠে আসে তার ক্যারিয়ারের নানা বিষয়। ১৯৭২ সালে ‘এতো কান্না নয় আমার’ শিরোনামের গানের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন বলে জানান হৈমন্তী শুক্লা। তারপর থেকে এখনো সমানতালে গান করছেন তিনি। অথচ এই সময়ের অনেক শিল্পী ক্যারিয়ারের কয়েক বছর পরেই হারিয়ে যাচ্ছেন।দীর্ঘ সময় গানের ভুবনে বিচরণের রহস্য কি? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা হারিয়ে গেছেন তারা অনেকে অন্য কিছুর সঙ্গে গানকে বেছে নিয়েছেন। যার ফলে গান তাদের হয়তো ছেড়ে দিয়েছে। আমি অনেক কিছুর সঙ্গে গানকে নিইনি। গানের জন্য আমি সংসারী হইনি। গানেই আমার জীবনটাকে উৎসর্গ করেছি। ঈশ্বর হয়তো আমাকে সেই কারণে আজও গান করার শক্তি দিচ্ছেন। যারা সংসার বা অন্য কিছু করছেন, করুক। আমি সেটি করতে না করছি না। কিন্তু গানকে সব কিছুর আগে প্রাধান্য দিতে হবে। আপনার এখন সত্তর বছর চলছে। এই বয়সে এসে নিজের সম্পর্কে কি বলতে চান? এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো
অনেকে সরাসরি আমার গান শুনে বলেন তারা যেন রেকর্ড শুনেছেন। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। বয়স হয়েছে সত্যি, কিন্তু কণ্ঠ আমার এখনো আগের মতোই আছে। এছাড়া আমার কিছুর অভাব নেই। অনেক ভালোবাসা পেয়েছি এই গানের কারণে। দেশে বিদেশে নানা পুরস্কার পেয়েছি গানের কল্যাণে। শেষ সময়টুকুও গান নিয়ে থাকতে চাই। নতুন প্রজন্মের অনেক শিল্পী পুরনো গানকে ফিউশন করছে। এটিকে হৈমন্তী কিভাবে দেখছেন? তার ভাষ্য, ফিউশনের নামে নতুনরা যা-তা করছে। এটি আমার ভালো লাগে না। যারা শোনে তাদের কেমন লাগে সেটি আমি জানিনা। আমি মনে করি, যদি নতুনদের কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছে থাকে তাহলে তারা তাদের নিজের গানকে যা খুশি তাই করুক। পুরোনো গান নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার নামে তো যা খুশি তা করার অধিকার তাদের নেই। আমি তো দেখি এখনো নতুনেরা মান্নাদের ‘জীবনে কি পাবো না’ গানটি নিয়ে নাচানাচি করে। নতুনরা কি পারে না এমন একটা গান তৈরি করতে? এই কিংবদন্তি দু’বাংলা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি মাঝে মাঝে ভাবি বাংলাদেশে যেভাবে ওপার বাংলার শিল্পীদের মূল্যায়ন হয় সেভাবে এখানকার শিল্পীদের মূল্যায়ন আমার দেশে হয় না। যদিও এটা ক্রমান্বয়ে দূর হচ্ছে।