বাংলাদেশ এখন উত্তর কোরিয়ার মতো হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৩তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা আলমগীর বলেন, বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন একদলীয় শাসনের উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই। এখানে মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই। তিনি বলেন, এই চক্র আমাদের ভাঙতে হবে। এই অন্ধকার থেকে আমাদের আলোর দিকে আসতে হবে। আসুন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
তিনি বলেন, আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে। তারেক রহমান নির্বাসিত।এটার কারণ হচ্ছে এই রাজনীতিকে যারা ধারণ করেন তাদের নিঃশেষ করে দেয়া। আজকে আমাদের এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই, যাকে জেলে যেতে হয়নি। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। এটার উদ্দেশ্য একটাই, রাজনীতি থেকে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। কিন্তু যতই নির্যাতন, নিপীড়ন আসুক জাতীয়তাবাদী চেতনার পতাকা তুলে ধরে এগিয়ে যাবো। শুধু দল নয়, জাতির প্রয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। অতীতেও বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপির শক্তি কোথায়? বিএনপির শক্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। আমরা বার বার লক্ষ্য করেছি, বিএনপিকে যতো ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা করা হয়, বিএনপি আবার সেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে। কারণ এই রাজনীতি মানুষের অন্তরে গেঁথে আছে।
তিনি বলেন, আমি জেলখানার কোর্টে গিয়েছিলাম দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি সেই দৃশ্য বলে বুঝাতে পারবো না। এই প্রথম বলেছেন তিনি অসুস্থ। অসুখে তিনি অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী আমাদের বলেছেন- তোমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে সংকট তা অত্যন্ত গভীর। এই সংকট শুধুমাত্র একটি নির্বাচনে নয়, একটি দলের নয়, এটা সমগ্র জাতির সংকট। ’৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ ও ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সারা দেশে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত হয়ে আছে।
মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করছি একটি আদর্শকে ধ্বংস করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই আলোকে তারেক জিয়াকে নির্বাসিত করা হয়েছে। অথচ তারেক রহমান সম্পর্কে অযথা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আজ পর্যন্ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। যে বিচারক তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। এখন আমাদেরকে জাতির প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে। তাহলে বিএনপি আবার জেগে উঠবে! অতীতে এই দলকে ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ইনশাআল্লাহ এবারও হবে না। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে।
তিনি বলেন, আমরা তারেক জিয়ার এ দিবসকে কারামুক্তি দিবস বলছি কেন? তারেক জিয়া কি মুক্ত হয়েছে? নাহ। তারেক জিয়া মুক্ত হয়নি। তিনি বলেন, দেশে আবার বাকশাল কায়েমের জন্য সকল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। সারা দেশে বিএনপির ২৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়ি যেতে পারে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার তাদের দুর্নীতিকে ঢেকে রাখার জন্য সবরকম আর্থিক ব্যয় জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এই গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তাহলে জনগণ মেনে নেবে না। অবশ্যই জনগণ প্রতিহত করবে। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল অংশ নিয়েছে, খুশি হয়েছি। জয় পরাজয় বড় কথা নয়। আমরা এই অংশগ্রহণকে ইতিবাচকভাবে দেখছি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, তারেক জিয়া এখনো মুক্ত নয়। সেদিনই মুক্ত হবে যে দিন তারেক জিয়া দেশে ফিরে আসবেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়া জেলখানায়। অথচ আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। এই রাষ্ট্রও সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রীর জন্য কিছু করছে না। অথচ ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার পর তার জন্য ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে ডাক্তার নিয়ে আসা হলো। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলো। বুলু বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
আন্দোলন না করলে বিএনপির বিনষ্ট কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, খালেদা জিয়া মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামতে হবে আমাদের। সাংবাদিক নেতা ও কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, শেখ হাসিনার শাসনে মানুষ অতিষ্ঠ। বাংলাদেশে এখন প্রয়োজন তারেক জিয়ার শাসন। বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম বলেন, আন্দোলন ও সংগ্রাম ব্যতীত খালেদা জিয়া মুক্ত হবে না। এজন্য বিএনপি মহাসচিবকে অনুরোধ করবো দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আন্দোলনের ডাক দিন। বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা রাজপথে না নামলে জনগণ নামবে না। নেতারা আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকলেই জনগণ নামবে। তবে অবশ্যই জনগণের দাবি নিয়েই আমাদের আন্দোলন করতে হবে। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বিএনপির নেতাকর্মী নেই। এসব নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত রাখতে আন্দোলন প্রয়োজন।
সংগঠনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কবি আব্দুল হাই শিকদার, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব, এজমল হোসেন পাইলট, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আরোজ আলী শান্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।