বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। গতকাল সকাল সাতটা থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় বিক্ষোভ করেন তারা। এতে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে চারদিক থেকেই লাল সিগন্যাল। একদিকে বৃহস্পতিবার এবং অন্যদিকে দুই ঘণ্টা ধরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এর রেশ পড়ে গোটা রাজধানীতে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) কাজী রোমানা নাসরিন জানান, শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করলে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পৌনে ১০টার দিকে তাদের সরিয়ে দেয়া হলে যান চলাচল শুরু হয়। কিন্তু এর রেশ রাজধানীর অন্য সড়কগুলোতে পড়ায় অচল হয়ে পড়ে গোটা ঢাকা। দিনের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন অফিস ও স্কুল-কলেজগামী যাত্রীরা।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আব্দুর রশীদ বলেন, সকালে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টের কর্মীরা সাতরাস্তা মোড়ে অবরোধ শুরু করেন।ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে কর্মস্থলে ফেরত পাঠায়।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, তাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া। জানুয়ারি মাসের বেতন দেয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু সকালে কারখানায় গিয়ে তারা গেটে তালা ঝোলানো দেখেন।
আগে থেকে তাদের কোনো নোটিস না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক। একই সঙ্গে কারখানার জিএম, ম্যানেজারসহ কর্মকর্তারা গত রাতেই সরে গেছেন। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পান শ্রমিকরা। আরিফা জাহান নামের কর্মী বলেন, জানুয়ারি থেকে নাকি বেতন বাড়ানো হয়ছে। কারো ২০০ টাকা, ১০০ টাকা বা ৫০০ টাকা করে বাড়াইছে। কিন্তু আমরা কেউ বাড়তি বেতন পাইনি। বিক্ষোভে অংশ নেয়া শ্রমিক সালাউদ্দিন বলেন, বকেয়া বেতন-ভাতাসহ তাদের সকল পাওনা আইন অনুসারে পরিশোধ করার জন্য বিজিএমইএ’র কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
শ্রমিকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বেতন দেয়া হয় না বলে কর্মীরা গত কয়েক মাস ধরেই চাকরি ছেড়ে যাচ্ছিলেন। তবে এখনও সাড়ে চারশোর মতো কর্মী রয়েছেন ওই কারখানায়। এদিকে তেজগাঁওয়ে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে যানজটে পড়ে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ফারুক হোসেন নামের এক শিক্ষক জানান, মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে এসে এখনো মগবাজার যেতে পারিনি। এখন স্কুলে আর যাবো না। কিন্তু বাসায় যে যাবো সেটাও হচ্ছে না। কোনো দিকেই গাড়ি চলছে না। বলাকা বাসের চালক ফরিদ বলেন, সকাল থেকেই তিব্বতের মোড়ে এসে বসে আছি। যাত্রী যা ছিল সব নাইমা গেছে। আমার আজকের কামাই শেষ। কলেজগামী শিক্ষার্থী অদিতি বলেন, সকালে বেরিয়েছি কলেজে যাবো বলে। একটা বাসও চলছে না। একটা জরুরি ক্লাস ছিল। খুব বিপদে পড়ে গেলাম। শাওন নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, সবসময়ই এসব আন্দোলনের কারণে ভোগান্তির মাঝে পড়তে হয়। আজ ভার্সিটিতে একটা জরুরি পরীক্ষা ছিল। মিস করতে হলো। টিচাররা না নিলে বিপদে পড়তে হবে।