এক গাড়িতেই ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গিয়েছিলেন স্বামী-স্ত্রী। বন্দুক হামলার সময় অলৌকিকভাবে রক্ষা পান স্বামী মাসুদ মিয়া। আর ঘাতকের বুলেটে এফোঁড়- ওফোঁড় হন সাজেদা আক্তার লিপি (২৫)। আহতদের মধ্যে সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থা বাংলাদেশি এই তরুণীর।
দু’দিন ধরে ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। সেন্ট্রাল ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে বসবাস করেন বাংলাদেশি এই দম্পতি। মাসুদ মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের দক্ষিণ অষ্টঘড়িয়া গ্রামের হাজী জালাল উদ্দিনের ছেলে। হাজী জালাল উদ্দিনের তিন ছেলেই নিউজিল্যান্ড প্রবাসী।
৮/৯ বছর আগে বড়
ছেলে নজরুল ইসলাম প্রথমে নিউজিল্যান্ড যান। পরবর্তীতে বছর পাঁচেক আগে ছোট দুই ভাই মাসুদ মিয়া ও খোকন মিয়াকে তিনি নিউজিল্যান্ডে নিয়ে যান। ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে নিউজিল্যান্ডে যাওয়া মাসুদ মিয়া কাজ করেন একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে। বছর দু’য়েক আগে স্ত্রী সাজেদা আক্তার লিপিকে তিনি নিউজিল্যান্ডে নিয়ে যান। সাজেদা আক্তার লিপি পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের গোলাপ মিয়ার মেয়ে।
নিউজিল্যান্ডে থাকা মাসুদ মিয়ার ছোট ভাই খোকন মিয়া জানান, শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে স্বামী মাসুদ মিয়ার সঙ্গে গাড়িতে করে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূরে গিয়েছিলেন সাজেদা আক্তার লিপি। মসজিদের সামনে লিপিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গাড়িটি ঠিকভাবে পার্ক করতে যান মাসুদ। ঠিক এই সময়টিতেই ঘটে বন্দুক হামলার ঘটনা। ভাগ্যক্রমে মাসুদ মিয়া নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে পারলেও কোনো সুযোগ পাননি লিপি। দৌড়ে আত্মরক্ষা করতে গিয়েও পারেন নি। পিঠে লাগা ঘাতকের বুলেটে এফোঁড়- ওফোঁড় লিপি লুটিয়ে পড়েন মসজিদের ফ্লোরে। গুলিবৃষ্টির তাণ্ডব শেষে মাসুদ মিয়া মসজিদে গিয়ে হন্যে হয়ে খুঁজেও পাননি লিপিকে। পরে তারা হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, লিপিকে ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সেখানে শুক্রবারই দু’দফা অস্ত্রোপচার করা হয় সাজেদা আক্তার লিপির শরীরে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরদার্নও হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন লিপি’র। কথা বলেছেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। কিন্তু কোনো কিছুতেই সাড়া দিচ্ছেন না লিপি। ক্রমেই তার অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।
একই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চ হামলায় বেঁচে যাওয়া কটিয়াদীর যুবক ওমর জাহিদ সুমন। তিনি জানান, বন্দুকধারীর গুলি লিপির পিঠে লেগে বুক দিয়ে বের হয়। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।
এদিকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা লিপি’র সুস্থতার জন্য ফরিয়াদ করছেন দেশে থাকা তার স্বজনেরা। প্রাণোচ্ছ্বল এই তরুণী সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন- এমন আশায় বুক বাঁধছেন তারা।