ক্যাসিনো কিং খালেদ হোসেন ভূঁইয়া তার সাম্রাজ্য ধরে রাখা ও বিস্তারের জন্য বিপুল পরিমাণের অস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছিলেন। সেই অস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক ৪টি একে-২২ রাইফেল, ১ টি একে-৪৭ ও প্রায় ৫০ টি ছোট বড় রিভলবার আছে বলে তিনি র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। এসব অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে খালেদ টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করতেন। বাইরে গেলে কোমরে তিনি সর্বক্ষণ একটি রিভলবার বহন করতেন। আর কারও কাছে চাঁদা দাবি বা বড় মাদকের চালান পাঠানোর সময় একে-২২ রাইফেল নিয়ে যেতেন। যাতে ভুক্তভোগী দ্রুত ভয় পেয়ে তাকে চাঁদা দিয়ে দেন। যশোরের বেনাপোল ও অস্ত্রের নতুন হাট সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে অস্ত্র চোরাকারবারীদের কাছ থেকে এগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন। খালেদের অস্ত্রগুলো তার সহযোগী ও ঢাকার মাফিয়া নিয়ন্ত্রণকারী একাধিক ব্যক্তির কাছে রয়েছে। তারা এখন পলাতক। ওই অস্ত্রের ভান্ডারের খোঁজে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে র্যাবের গোয়েন্দারা। দ্রুত ওইসব অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা না গেলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছে চলে যেতে পারে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারনা। র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম গতকাল
জানান, ‘ক্যাসিনো ডন খালেদের কাছে অস্ত্র থাকতে পারে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে। আমরা তদন্ত করছি। অস্ত্রের ব্যাপারে খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার তথ্যের প্রেক্ষিতে র্যাবের ফোর্স মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।’
জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানিয়েছে, ২০১০ সালে ২টি একে-২২ রাইফেল যশোরের বেনাপোল সীমান্তে এক চোরাকারবারীর কাছ থেকে ক্রয় করেন। ওই চোরাকারবারীরা রাজধানীর উঠতি সস্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি প্রেক্ষিতে ওই রুট দিয়ে অস্ত্র আমদানী হওয়া সীমিত রয়েছে বলেও তিনি র্যাবকে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত মাসে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা শহীদসহ তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। তারা অস্ত্র চোরাচালানের নতুন রুট সিলেটের কানাইঘাট এলাকা দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র আমদানী করতো। গ্রেপ্তার হওয়া সেই শহীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে খালেদের। শহীদ তাকে সীমান্তের ওপার থেকে আনা স্নাইপার যুক্ত একটি একে-৪৭ দিয়েছে। সেটি সর্বাধুনিক অস্ত্রের মধ্যে অন্যতম। খালেদ ছাড়াও তার দুই ভাই মাকসুদ ও হাসান বিপুল পরিমাণের অস্ত্রভান্ডার নিয়ন্ত্রণ করতো।
র্যাবের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, খালেদ বড় ধরনের অপারেশনের জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক নাইন এমএম ক্যালিবারের রিভলবার সংগ্রহ করেছে। এসব রিভলবারের একাধিক হাত বদল হয়ে তার কাছে আবার ঘুরে আসে। কখনও তিনি তার সহযোগীদের ওইসব রিভলবার ভাড়া দিতেন।
সূত্র জানায়, খালেদ ওইসব অস্ত্র মাঝে মধ্যে গণপূর্ত ভবন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসাসহ বিভিন্নস্থানে যেখানে টেন্ডার হতো সেখানে বহন করে নিয়ে যেতেন। অস্ত্র দেখিয়ে তিনি প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখাতেন।
সূত্র জানায়, খালেদের যেসব ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র বহন করতো তারা হলো, রামপুরার আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামী রইছ, খিলগাঁওয়ের শাহাদত হোসেন সাধু ওরফে ফোরটুয়েন্টি, ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা কবির ওরফে গলাকাটা কবীর, শাজাহানপুরের পোল্টি রিপন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা কানা সেলিম, ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের শীর্ষ নেতা রিডি সামাদ, শাজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের নেতা রাজু ওরফে ছোট মাস্তান, পল্টন থানা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মাহবুবল হক হীরক ও মতিঝিল এজিবি কলোনীর আমিনুল ওরফে মাস্তান আমিনুল। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ আরও জানিয়েছে, তার ভাান্ডারে আনুমানিক প্রায় ৫ হাজার রাউন্ড গুলি রয়েছে। এসব অস্ত্র ও গুলি নির্দেশনা অনুযায়ী তার নির্দিষ্ট ক্যাডারের কাছে চলে যায়। ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ওইসব অস্ত্র জমি দখল, প্রতিপক্ষের কাছে পাওনা টাকা আদায়ে সেগুলো ব্যবহার করা হতো।